কুষ্টিয়া: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার কুমারখালীর শিলাইদহের পদ্মাপাড়ে রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি, এর সামনে ফাঁকা মাঠে তৈরি করা হয়েছে মুক্তমঞ্চ। মঞ্চের পূর্ব-দক্ষিণ পাশে রয়েছে বড় বড় গাছ। সেখানে রং-তুলি ও কাগজ নিয়ে বসেছে অন্তত ৮৩ জন নানা বয়সী শিক্ষার্থী। আর তাদের ঘিরে চেয়ার-টেবিলে রং, তুলি আর কাগজ নিয়ে দাঁড়িয়ে-বসে আছেন রাজশাহী, কুষ্টিয়ার ইসলামী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও অন্তত ২৭ জন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। তারা জুলাই বিপ্লব, গ্রামীণ জীবনের চিত্র, রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি, নদীসহ নানান ছবি আঁকছেন। সঙ্গে রয়েছেন অভিভাবক ও উৎসুক জনতাও।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় সরেজমিনে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়।
শীতের সকালে রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি চত্বরে যেন বসেছে নবীন-প্রবীণ চিত্রশিল্পীদের মিলনমেলা। শিশু শিল্পীদের উৎসাহ প্রদানে এবং মেধা বিকাশের লক্ষ্যে রবীন্দ্র কুঠিবাড়িতে দুই দিনব্যাপী আর্ট ক্যাম্পের আয়োজন করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ড. নাসের ফাউন্ডেশন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ও আর্ট বাংলার সহযোগিতায় শুক্রবার সকাল ১০টায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আজাহারুল ইসলাম চঞ্চল। ড. নাসের ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও বেকার্সফিল্ড ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির যোগাযোগ বিভাগের চেয়ারপারসন ড. মো. আবু নাসেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চারুকলা অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক ও আর্ট বাংলা ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক হারুন অর রশিদ।
ছবি আঁকলে মন ভালো থাকে বলে জানায় কুমারখালী সরকারি পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী রিনি সাহা। সে বলে, ‘বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছবি আঁকতে পেরে আমার খুবই ভালো লাগছে।’
কুমারখালী রং-তুলি আর্ট স্কুলের শিক্ষার্থী তিশা পাল বলে, ‘ছবি এঁকে মনের ভাব প্রকাশ করি। কুঠিবাড়িতে আর্ট ক্যাম্পে এসে বড়দের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। ভবিষ্যতে ভালো চিত্রশিল্লী হতে চাই।’
সাংস্কৃতিক জনপদের ছবি আঁকতে আসতে পেরে আনন্দিত বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রিন্টমেকিং বিভাগের অধ্যাপক মো. আনিসুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘কুঠিবাড়িতে নবীন-প্রবীণ শিল্পীদের মিলনমেলা বসেছে। শিশুরা বড়দের আঁক দেখে শিখতে পারছে। চমৎকার এ আয়োজনের মধ্যদিয়ে শিশু শিল্পের বিপ্লব ঘটবে। নতুন প্রজন্মের জন্য সারা দেশে এমন আয়োজন দরকার।’
ড. নাসের ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ড. মো. আবু নাসের বলেন, ‘শিশু ও নতুন শিল্পীদের উৎসাহ প্রদান এবং মেধা বিকাশের জন্য দুই দিনব্যাপী আর্ট ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, রাজশাহী, ইসলামী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১১০ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন।’
ছবি আঁকা একধরনের সৃষ্টিশীল আন্দোলন বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আজাহারুল ইসলাম চঞ্চল। তিনি বলেন, ‘ছবি আঁকার মধ্য দিয়ে মনোগত বিকাশ ঘটে। শিল্প, সাহিত্যের বিপ্লবের পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন হয়। সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ুক এ আন্দোলন।’
শনিবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে কুঠিবাড়ি চত্বরে আর্ট ক্যাম্প শেষ হবে এবং বেলা ৩টা থেকে কুমারখালী পাবলিক লাইব্রেরিতে শুরু হবে সাত দিনব্যাপী চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠান। চলবে ১৮ জানুয়ারি রাত ৮টা পর্যন্ত।