শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৩১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
সংবাদ শিরোনাম
কুষ্টিয়ার মিরপুরে ৪৪০ বস্তা অবৈধ সার জব্দ অবৈধ ফিটনেস বিহীন ট্রলির ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়ে অঙ্গহানীর শঙ্কায় -বাসার মিরপুরে স্কুলে অগ্নিসংযোগ ও প্রধান শিক্ষককে হত্যা চেষ্টা মামলায় ০৫ জন পলাতক আসামি গ্রেফতার। নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে ফায়দা হাসিলের অপতৎপরতা চালাচ্ছে: সাবেক এমপি শহীদুল ইসলাম আমি নেতৃত্ব দিয়েই কুষ্টিয়া থানা ভাঙছি’ এটা আমার আবেগী বক্তব্য -মাজেদ দৌলতপুরের ছাত্রদলের আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ক বহিষ্কার শিক্ষক লাঞ্ছিত হলে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ঘোষনা বৈষম্য বিরোধীদের চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ১০ আমার নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করলে পুলিশে ধরিয়ে দিন -মাজেদ কুমারখালি দুই গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ আহত ৫
ঘোষণা:
পরিবর্তনের অঙ্গীকারে আপনাকে স্বাগতম। সময়ের বহুল প্রচারিত বস্তুনিষ্ঠ ও নির্ভরযোগ্য  ভিন্নধারার নিউজ পোর্টাল "পরিবর্তনের অঙ্গীকার"। অতি অল্প দিনে পাঠক নন্দিত হয়ে উঠেছে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের লক্ষে কাজ করছে এক ঝাঁক তরুণ, মেধাবী ও অভিজ্ঞ সংবাদকর্মী। দেশ-বিদেশের সকল খবরাখবর কারেন্ট আপডেট জানাতে দেশের জেলা, উপজেলা এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সংবাদ প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে।  ছবিসহ জীবন বৃত্তান্ত (সি ভি)পাঠাতে হবে। ই-মেইল: khalidsyful@gmail.com , মোবাইল : ০১৮১৫৭১৭০৩৪

কুমারখালীতে শিপন হত্যায় দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

কুষ্টিয়া অফিস / ২৭৩ বার নিউজটি পড়া হয়েছে
আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৪ জুন, ২০২১, ৩:৫৯ অপরাহ্ন

অঙ্গীকার ডেস্কঃ কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে শিপন (৩৫)কে কুপিয়ে হত্যা ঘটনার ১২ দিন পার হল। কিন্তু জনমনে হত্যাকান্ডের ধোঁয়াসা এখনও কাটেনি। তবে হত্যাকান্ডে উভয়পক্ষ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলেছেন। মামলার বাদীপক্ষ বলছেন গোদের বাজার থেকে আসামীরা দেশীয় ও আগ্নোয়াস্ত্রের মুখে শিপনকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে আসামী কবিরের বাড়ির পিছনে রাস্তার উপর ফেলে কুপিয়ে হত্যা করেছে।

অপরদিকে আসামীপক্ষ বলছেন বাদীপক্ষ সেদিন রাতে অস্ত্রেসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাদের উপর হামলা করে। হামলায় শিপনের কোপ লাগে এবং সেখানেই শিপনের মৃত্যু হয়।

তবে শিপনকে কারা কখন কেন কিভাবে হত্যা করল, তার সঠিক কারন ও সময়ের ধোঁয়াসা না কাটলেও ঘটনায় বলিরপাঠা বানানো হয়েছে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সামিউর রহমান সুমনকে। ঘটনার দিন সুমন সন্ধা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পান্টি বাজারে অবস্থিত আওয়ামীলীগ অফিসে সিসি ক্যামেরায় আওতায় ছিলেন। শুধু আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হেয়প্রতিপণ্য ও আইনী জটিলতায় ফেলে অহেতুক হেনোস্তার করার লক্ষ্যে সুমনকে হত্যাকান্ডে জড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সমুনের সমর্থক ও স্বজনরা। শুধু সুমন নয়, এঘটনায় মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন ইউনিয়নের কয়েক ডজন নেতা ও কর্মীরাও বলে জানা যায়।

সরেজমিন এলাকা ঘুরেঘুরে একাধিক সুত্র জানায়, আধিপত্য বিস্তারে দীর্ঘদিন ধরে কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা জাহিদ হোসেন জাফর সমর্থিত মাসুদ হোসেন মোল্লা গ্রুপের সাথে পান্টি ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সামিউর রহমান সুমন গ্রুপের এলাকায় বিরোধ চলে আসছে। বিরোধের জেরেই শনিবার (২২ মে) রাতে কবিরের বাড়ির পিছনের রাস্তায় দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষ হয়।

সংঘর্ষে মাসুদ মোল্লা পক্ষের শিপনের বুকে গুরুতর ধারালো অস্ত্রের কোপ লেগে মাটিতে লুটিয়ে পরে এবং মোস্তফা (মোস্ত) নামের আরো একজনের মাথার ডানপাশে আঘাত লাগে। এছাড়াও সুমন গ্রুপের মিজান, আজিজ ও কবিরসহ আরো কয়েকজন গুরুতর আহত হয়। এসময় আহত শিপনকে তার চাচাতো ভাই এরশাদ, ছাদের ছেলে আলামীন, মোস্তসহ কয়েকজন ঘটনাস্থল থেকে তুলে নিয়ে দুইশ মিটার দুরের সাখাওয়াতের বাড়ির পিছনে নিয়ে যায় এবং রকির ছেলে উজ্জলের ভ্যানযোগে গোদের বাজারে নিয়ে যায়।

রাত একটার দিকে গোদের বাজারে পৌছালে বাজার পাহাড়াদারেরা শিপনের মাথায় পানি দেয় এবং স্বজনরা পল্লী চিকিৎসক রায়হানকে খবর দেয়। চিকিৎসক রায়হান এসে শিপনকে মৃত ঘোষণা করলে তার স্বজনরা বাড়ি নিয়ে যায়। এছাড়াও আহত মোস্তফার (মোস্ত) মাথার ডানে পাশে তিনটা সেলাই দেন চিকিৎসক রায়হান।

অপরদিকে আহত মিজান, আজিজ ও কবিরদের উদ্ধার করে স্বজনরা রাত তিনটার দিকে প্রথমে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়।

২৩ মে রোববার ভোর রাতে শিপনের স্ত্রী অরুনা খাতুন বলেন, সন্ধায় ওই পাড়ার কবির, মিজান বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। ডেকে নিয়ে কবির হত্যা করেছে। নিহতের চাচী রহিমা বলেন, ঠিক ৯ টার সময় তুলে নিয়ে গিয়ে মারেছে। এরপর খবর পেয়ে লাশ বাড়ি নিয়ে এসে বারান্দায় শুয়ে রাখি। লাশ শোয়ানোর সময় ঠিক রাত ১০ টা বাজে।

২৩ মে রোববার ভোরে পান্টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সহ সভাপতি ও নিহতের বাবা আলতাফ হোসেন বলেন, শিপন আমার মেঝো ছেলে।গোদের বাজারে ডেকোরেটরের ব্যবসা আছে ওর ওইদিন (শনিবার) রাজীবের সাথে আমার ভাতিজা এরশাদের দুইকথা হয়।এরপর রাজীব সুমনের অফিসে যায়। সুমন লোকজন নিয়ে ওইদিন বিকেলে গোদের বাজারে মিটিং করে। এরপর রাজীব পুলিশ ও কবির বাহিনীর নিয়ে এরশাদের খোঁজে। এরাশাদের না পেয়েই রাত ১১ টার দিকে দোকান বন্ধ করে আসার সময় পথিমধ্যে শিপনকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে।

ওইদিন ভোরে শিপনের বাবা আরো বলেন, পান্টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামিউর রহমান সুমনের নেতৃত্বে তার সমর্থক কবির, মিজান,বাবলু মাস্টাররা শিপনকে হত্যা করে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দাবিকারী ও সুমন গ্রুপের কবিরের স্ত্রী হালিমা খাতুন, সেদিন রাতে এরশাদ, আলামিন,শিপন, মোস্ত,শমসের সহ কয়েকজন প্রথমে বাড়ি পিছনে এসে জাকর (শোরগোল) দেয়। তখন আমার ভাতিজা আজিজ আর আমি বাইরে যায়। বাইরে গিয়ে দেখি বড়বড় লাইটের আলো। এরপর ওরা আজিজকে বাঁশের লাঠি দিয়ে মারতে থাকে। এক পর্যায়ে কবির ও মিজান আসে। তখন আলামিন বড় চাকু বা ডাঁসার মত কিছু একটা দিয়ে কোপাতে থাকে। এসময় আমার ভাতিজা আজিজকে মনে করে আলামিন শিপনের বুকে এক কোপ মারে। তখন শিপন মাটিতে পড়ে গেলে আমি চিৎকার করে বলতে থাকি আলামিন তুমি কার মারলে? কার মারলে? এতো তোমারে শিপন। তখন ওরা লাইট মারে দেখে শিপনের বুকে কোপ লাগেছে।

তিনি আরো বলেন, কোপ লাগার পর এরশাদ বুকে করে শিপনকে তুলে নিয়ে গদের বাজারের দিকে দৌড় মারে।

এবিষয়ে ভ্যান চালক উজ্জল বলেন, রাত ১২ টার দিকে চেঁচামেচি শুনে বাড়ির বাইরে সাখাওয়াতে ঘরের পিছনে রাস্তার উপর আসতেই এরশাদরা বলে তাড়াতাড়ি ভ্যান নিয়ে আই, হাসপাতালে যেতে হবে। এরপর ভ্যান নিয়ে আসলে ওরা শিপনকে ভ্যানযোগে গোদের বাজারে নিয়ে আসলে পাহাড়াদারেরা মাথায় পানি ঢালে।এরপর রায়হান ডাক্তারের খবর দেয়। ডাক্তার এসে শিপনকে মৃত ঘোষণা করেন।

গোদের বাজারের পল্লী চিকিৎসক রায়হান মুঠোফোনে বলেন, সেদিন রাতে আমাকে খবর দিলে গোদের বাজার যায়। গিয়ে হাত ধরে বুঝতে পারি শিপন মারা গেছে। তিনি আরো বলেন, ওই রাতেই মোস্তফার (মোস্ত) মাথার ডান পাশে তিনটা সেলাই করি। গোদের বাজারের নাইট গার্ড আইয়ুব বলেন, শিপনের বাজারের সেক্রেটারি (সাধারণ সম্পাদক) ছিলেন। শনিবার (২২মে) রাত ১০ টার দিকে টাকা কালেকশন করে শিপনের সাথে দেখা হয়। এরপর শিপন বাড়ি চলে যায় এবং আমিও বাড়ি চলে আসি। তিনি আরো বলেন, রাত ১১ টার দিকে বাজার পাহাড়া দিতে যায়। এরপর রাত ১ টার দিকে উজ্জলের ভ্যানে শিপনকে বাজারে নিয়ে আসে এরশাদসহ পাঁচজন। আমরা শিপনের মাথায় পানি ঢালি। পরে ডাক্তার এসে মৃত ঘোষণা করেন।

মামলার পর থেকেই গ্রেফতারের ভয়ে পলাতক পান্টি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সামিউর রহমান সুমন। এবিষয়ে সুমনের বড় ভাই মামুন বলেন, সেদিন সন্ধা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সুমন অফিসে ছিল। অফিসটি সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত। তিনি বলেন, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সুমনকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, লোকমুখে শুনেছি মামলার এজাহারের সাথে মূল ঘটনার কোন মিল নেই। আত্মঘাতি হামলায় শিপনের মৃত্যু হতে পারে।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এলাকায় দুপক্ষের বিরোধ চলে আসছিল। বিরোধের জেরে শনিবার (২২ মে) রাত ১২ টার দিকে দুপক্ষের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে শিপনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে। সেদিন উভয়পক্ষের মোস্ত, মিজান, আজিজ,কবির সহ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

তিনি আরো বলেন, শিপন হত্যা ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।

উল্লেখ্য যে,সেদিন রাতে খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে রোববার (২৩ মে) সকালে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠান এবং ওইদিন বিকেল ৩ টায় পিতম্বরবশী কবরস্থানে জানাযা শেষে লাশ দাফন করেন নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী।

এরপর সোমবার (২৪ মে) বিকেলে ওই আওয়ামী লীগ নেতা আলতাফ হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলা নং ৩৩।

মামলার এজাহারে পান্টি ইউনিয়ন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামিউর রহমান সুমনসহ ৩১ জনকে আসামী করা হয়। এছাড়াও অজ্ঞাতনামা আসামী রয়েছে আরো ১০ থেকে ১৫ জন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর