কখনও হামিদুর রহমান, কখনও এম এ চঞ্চল বা আশিকুর রহমান অথবা মো: চঞ্চল আলী এমন বহুনামী চঞ্চলের প্রতারণা ও মামলার খপ্পরে সীমাহিন ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হয়েছে বলে একাধিক ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ। তবে অভিযোগ বিষয়ে ফোনে যোগাযোগ করা হলে চ ল অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং প্রতিবেদকের নামে চাঁদা দাবির মামলা করার হুমকি দেন।
চঞ্চলের বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বহলবাড়ীয়া গ্রামে। বাবার নাম রফিকুল ইসলাম আলম।
এই বহুরুপি চঞ্চলের প্রতারণার মাধ্যমে বিয়ে করেছিলেন দৌলতপুর উপজেলার গোপিনাথপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক ওরফে পচার মেয়ে কলেজছাত্রী সাথী আক্তার মলিকে। একটি সন্তান হওয়ার পর সাথী ও তার সন্তানকে চঞ্চলের অত্যাচার ও নির্যাতন করে কেবল বাড়ি ছাড়তেই বাধ্য করেননি তাকে শায়েস্তা করতে বাবা আব্দুর রাজ্জাক পচার নামে চঞ্চল একাধিক মিথ্যা মামলাও করেছেন আদালতে। মলি ও তার পরিবার এখন বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের প্রান্তিক চাষী আব্দুর রাজ্জাকের কন্যা সাথী আক্তার মলির অভিযোগ, চঞ্চলের সাথে তার পরিচয় হয় ২০১৭ সালে। সেসময় মলির মা অসুস্থ হয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। মলি মাকে দেখতে হাসপাতালে আসলে সেখানে চঞ্চলের সাথে তার পরিচয় হয়। প্রথম পরিচয়ে সুদর্শন চঞ্চলের সুচতুর ব্যবহারে মুগ্ধ হন মলি। শহরের হরিশংকরপুর গ্রামের আবেদ আলীর ছেলে তাজমুল আলম তাজুর বাড়িতে একটি ভুয়া কাজী ডেকে ভুৃয়া কাবিননামায় ৫ লক্ষ ২০হাজার টাকা দেনমোহরে কাবিন করে তাকে কৌশলে বিয়ে করেন চঞল। বিয়ের ২/৩ মাস পরই আমার উপর যৌতুক দাবির চাপ সৃষ্টি করে। প্রথমদিকে আমার বাবা নগদ টাকাসহ কয়েক লক্ষ টাকার ফ্রিজ, টিভি ফার্নিচার আসবাবপত্রসহ সাংসারিক জিনিষপত্র দিয়ে চঞ্চলের গ্রামের বাড়িতে তুলে দেয়। সেখানে গিয়েই চ লের পূর্বের সব প্রতারণার ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারি। জীবন ও অন্তরা নামে চ লের দুইটি বাচ্চা রয়েছে। বাচ্চা দুটিকে রেখে প্রথম স্ত্রী সদর উপজেলার বারখাদা গ্রামের রোজি খাতুনকে তাড়িয়ে দিয়েছে চ ল। একই ভাবে আমাকে নির্মম নির্যাতন করে করে, আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টাও করে চ ল। এভাবে একে একে কুষ্টিয়ার পূর্ব মজমপুরের লিমা আক্তার, সিরাজগঞ্জ জেলার ছালমা খাতুন এবং সর্বশেষ ভেড়ামারা উপজেলার শ্যামলী খাতুনকে বিয়ে করেন। চঞ্চলের বৈবাহিক পরিচয়ের ৫ জন নারী থাকলেও এর বাইরে প্রতারণার শিকার হয়েছে আরও কয়েক ডজন নারী ও তাদের পরিবার। চঞ্চলের অভিনব কায়দায় ভুয়া কাবিন নামায় বিয়ের কিছুদিন পরই এসব স্ত্রীদের কাছে মোটা অংকের যৌতুক দাবি করে, না পেলে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়া এবং পরবর্তীতে তাদের পরিবারের পিতা/মাতার বিরুদ্ধে আদালতে চুরি ছিনতাই বা মারধরের অভিযোগ এনে মামলা করে হয়রানি করতে থাকে। এই হয়রানি থেকে বাঁচতে ওইসব পরিবার বাধ্য হয়ে চ লের দাবিকৃত মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আপোষ মিমাংশা করে থাকে। যা আমার ও আমার বাবার বিরুদ্ধেও সেই একই কায়দায় একাধিক অসত্য মনগড়া মিথ্যা মামলা করে আমার জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। এসব মামলায় বাদি চ লের নাম একেক জায়গায় একেক রকম। আমি প্রতারক চঞ্চলের বিচার চাই। আমি বাঁচতে চাই।
দৌলতপুর ইউনিয়নের ১নং গোপীনাথপুর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন বলেন, ‘আব্দুর রাজ্জাক পচা নিরেট একজন নিরীহ চাষী, কখনও গ্রামে কাঠের ব্যবসাও করে, এখন শুনছি ওর মেয়ের স্বামী নাকি চুরি ছিনতাই মারধরের অভিযোগে মামলা করেছে’। এটা আদৌতে একটা ভুয়া মামলা। সঠিক তদন্ত করে এসব ভুয়া মামলাবাজদের বিচার হওয়া উচিত’।
কুষ্টিয়া আইনজীবী সমিতির সদস্য এ্যাড. আব্দুর রউফ বলেন, ‘একই ব্যক্তি একাধিক নাম ব্যবহার করে একই আদালতে পৃথক ভাবে মামলা করার আইনগত কোন সুযোগ নেই। এমনটি কেউ করে থাকলে এবং বিষয়টি আদালতের দৃষ্টিগোচর হলে আদালত তার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন মামলার আদেশ দিতে পারেন’।
এবিষয়ে চঞ্চল আলী মুঠোফোনে আলাপকালে সব অভিযোগকে অস্বীকার করেন। এসময় বহুবিবাহ এবং মোট স্ত্রীদের সংখ্যা জানতে চাইলে তিনি রেগে গিয়ে প্রতিবেদকের বিরুদ্ধেও মামলা করার হুমকি প্রদান করেন’।
খালিদ সাইফুল, পরিবর্তনের অঙ্গীকার