“তথ্য প্রযুক্তির যুগে জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত হোক” প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে এবং “তথ্য আমার অধিকার — জানা আছে কি সবার?” শ্লোগানে ডিপিএফ কুষ্টিয়ার উদ্যোগে আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস-২০২২ পালিত হয়েছে। গতকাল দুপুর আড়াইটায় কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে ডিপিএফ কুষ্টিয়ার সভাপতি মাহবুবা বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। এসময় বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো: আরিফ-উজ-জামান, কুষ্টিয়ার সিনিয়র তথ্য অফিসার শিল্পি মন্ডল, ডিপিএফ কুষ্টিয়ার ফ্যাসিলিটেটর রেজবিউল কবির, জোনাল কো-অর্ডিনেটর মোস্তাক হোসেন। প্রধান অতিথির উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে শুরু হওয়া আলোচনা সভাটি সভাপতির শুভেচ্ছা বক্তব্য ও ডিপিএফ কুষ্টিয়ার সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামানের স ালনায় আলোচনা সভায় মূল প্রতিপাদ্যে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ডিপিএফ কুষ্টিয়ার সহ সভাপতি গণমাধ্যমকর্মী হাসান আলী।
তথ্য অধিকার দিবস-২০২২র ধারণা পত্রে উঠে আসা বিষয় ভিত্তিক আলোচনায় বক্তারা বলেন, ‘বাংলাদেশে আইন প্রণয়নের ইতিহাসে তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন একটি অনন্য ঘটনা। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে ২৯ মার্চ ২০০৯ তারিখে তথ্য অধিকার আইন পাশ হয়। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ৫ এপ্রিল এটিতে স্বাক্ষর করেন এবং ৬ এপ্রিল ২০০৯ আইনটির গেজেট প্রকাশিত হয়। ১ জুলাই ২০০৯ থেকে আইনটি সারা দেশে পুরোপুরি ভাবে কার্যকর হয়। ‘‘তথ্য অধিকার আইন হলো এমন একটি আইন যেটি জনগণ কর্তৃপক্ষের উপর প্রয়োগ করে”। তথ্য অধিকার আইন প্রণয়নের মাধ্যমে জনগণের বাক স্বাধীনতার অধিকার প্রতিষ্ঠা; জনগণের ক্ষমতায়ন, স্ব”ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা, দূর্নীতি হ্রাস; সর্বোপরি সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন অভিযাত্রায় জনগনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহনের পথকে সুগম করার জন্য তথ্য অধিকার আইন প্রণীত হয়েছে। এক্ষেত্রে কুষ্টিয়া জেলায় তথ্য অধিকার আইবাস্তবায়নের পর্যবেক্ষণে যেসব বিষয় উঠে এসেছে সেগুলি হলো- তথ্য অধিকার আইন সর্ম্পকে সাধারণ জনগণের ধারণা অত্যন্ত কম ও তথ্য প্রাপ্তি আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন নয়। তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কিত ওয়েবসাইট (িি.িরহভড়পড়স.মড়া.নফ) সম্পর্কে জনগণের ধারণা কম এবং এ বিষয়ে জানার উৎসাহও কম। তথ্য না পেলে জনগণ অভিযোগ করতে জানে না এবং ওয়েবসাইটে প্রদানকৃত ফরম পূরণ করতেও চায় না। জেলা পর্যায়ে ৮০টি অফিসের মধ্যে ৩০টি অফিসে তথ্য অধিকার নিশ্চিত করে অবাধ তথ্য প্রবাহকে সমুন্নত রাখতে তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা রয়েছে। (তথ্য সূত্র: জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, কুষ্টিয়া) কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ২টি ইউনিয়নে এবং মিরপুর উপজেলায় ১টি ইউনিয়নে ৮ কলামের সেবা প্রদান প্রতিশ্রুতি আছে। কুষ্টিয়া জেলার তথ্য অধিকার আইনের পর্যবেক্ষণ হলো- তবে ধীর গতিতে হলেও তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে মানুষ ক্রমশ: সচেতন হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকার ও স্থানীয় সরকার (পৌরসভা/ইউপি) প্রতিষ্ঠান গুলোতে ওয়েবসাইট খোলা হয়েছে। জন্মনিবন্ধন, নাগরিক সনদ, জমির পর্চা ইত্যাদি এখন অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। গণশুনাণী অনুষ্টিত হচ্ছে। (জেলা পর্যায়ে) তথ্যের অবাধ প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১ সাল থেকে ২০২২ আগস্ট পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেলার সরকারি দপ্তরসমূহে তথ্য প্রাপ্তির আবেদন হয়েছে ১০ টি, মীমাংসা ৬টি এবং প্রক্রিয়াধীন ৪টি। (তথ্য সূত্র: জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, কুষ্টিয়া) কুষ্টিয়া জেলায় তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নে বিগত দিনে মাঠ পর্যায়ের কর্ম অভিজ্ঞতা থেকে উঠে আসা সুপারিশ গুলি হলো- সাধারণ জনগণকে তথ্য অধিকার আইন সর্ম্পকে জানানো যেমন- ওয়েবসাইট, ফেসবুক, পোষ্টার, লিফলেট, গণমাধ্যম, কমিউনিটি রেডিও ইত্যাদির মাধ্যমে। প্রতিটি সরকারি, আধা-সরকারি ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানে সিটিজেন চার্টার বা সেবা প্রদান প্রতিশ্রুতি সরকারি নির্দেশনা অনুসারে নিশ্চিত করতে হবে। সাধারণ জনগণকে তথ্য অধিকার আইনের ওয়েবসাইট সর্ম্পকে জানানো; তথ্য পাওয়ার পদ্ধতি সর্ম্পকে জানানো; সাধারণ জনগণকে তথ্য অধিকার আইনে অভিযোগ কিভাবে করতে হয় সে সর্ম্পকে জানানো- সকল দপ্তরে ৮ কলামের সেবা প্রদান প্রতিশ্রুতি ¯’াপন করা; সকল দপ্তরে তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তার নাম লিখে রাখা; সকল দপ্তরে অভিযোগ নিষ্পত্তি কর্মকর্তা নিয়োগ করা; সকল দপ্তরে অনলাইনে অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তি করা; সকল দপ্তরে উন্মুক্ত ¯’ানে অভিযোগ বাক্স ¯’াপন; জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি অন্যন্য সরকারি দপ্তরগুলিতে গণশুনানি নিশ্চিত করা জাতীয় পর্যায়ে শিক্ষা কারিকুলামে তথ্য অধিকার আইন ও এর বিভিন্ন দিক বিষয়ে সংযুক্ত করলে সচেতনতা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। ফলে জনগণের সেবাপ্রাপ্তি আরও সহজ হবে।