একুশে পদক প্রাপ্ত কবি গীতিকার আজিজুর রহমানের (১৮অক্টোবর,১৯১৪-১২ সেপ্টেম্বর,১৯৭৮) ৪৪তম প্রয়াণ দিবস স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টায় কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর বাজারস্থ কবি সমাধীস্থলে ‘মানবাধিকার নাট্যপরিষদের’ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় সভপতিত্ব করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য সেলিম উদ্দিন বিশ্বাস। এসময় কবি স্মৃতি স্মরণে বক্তব্য রাখেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আনছার আলী, ইউপি চেয়ারম্যান এম মুশতার হোসেন মাসুদ, সাংবাদিক হাসান আলী, এম এ কাইয়ুম, সুরসপ্তক একাডেমীর পরিচালক সালাহউদ্দিন কবি পরিবারের টিপু প্রমুখ। কবির সাহিত্য ও স্মৃতি স্মরণে আলোচনা শেষে কবির আত্মার মাগফিরাত কামনায় মাজার জিয়ারত ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় বক্তারা বলেন, কবি আজিজুর রহমান প্রায় ৩ হাজারের অধিক গান লিখেছেন। তার জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘ভবের নাট্যশালায় মানুষ চেনা দায় রে’, ‘কারো মনে তুমি দিও না আঘাত, সে আঘাত লাগে কাবার ঘরে’, ‘আকাশের ঐ মিটি মিটি তারার সাথে কইবো কথা, নাই বা তুমি এলে’, ‘পৃথিবীর এই পান্থশালায়, হায় পথ ভোলা কবি’, ‘আমি রূপনগরের রাজকন্যা রূপের জাদু এনেছি’, ‘বুঝি না মন যে দোলে বাঁশিরও সুরে’, ‘দেখ ভেবে তুই মন, আপন চেয়ে পর ভালো’, ‘পলাশ ঢাকা কোকিল ডাকা আমারই দেশ ভাই রে’ প্রভৃতি। এজাতীয় অসংখ্য আধুনিক ও দেশাত্মবোধক বাংলা গানের গীতিকারের যথার্থ মূল্যায়ন না থাকায় আজ চরমভাবে অবহেলিত।
তিনি প্রায় ৩০০-এর উপরে কবিতা রচনা করেছেন। তার মধ্যে নৈশনগরী, মহানগরী, সান্ধ্যশহর, ফেরিওয়ালা, ফুটপাত, তেরশপ াশ, সোয়ারীঘাটের সন্ধ্যা, বুড়িগঙ্গার তীরে, পহেলা আষাঢ়, ঢাকাই রজনী, মোয়াজ্জিন, পরানপিয়া, উল্লেখযোগ্য। এ কবিতাগুলো এক সময় নবযুগ, নবশক্তি, আনন্দবাজার পত্রিকা, শনিবারের চিঠি, সওগাত, মোহাম্মাদী, আজাদ, বুলবুল পত্রিকায় নিয়মিত ছাপা হতো। ‘আজাদীর বীর সেনানী : কুমারখালীর কাজী মিয়াজান’, পাঁচমিশালী গানের সংকলন ‘উপলক্ষের গান’ দেশাত্মবোধক নিজস্ব গানের সংকলন ‘এই মাটি এই মন’, ‘ছুটির দিনে’। ১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকা বেতারে প্রথমে অনিয়মিত এবং পরে নিয়মিতভাবে যোগ দেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ বেতারে চাকরীতে বহাল ছিলেন।
১৯৭৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর কবি আজিজুর রহমান গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। সে সময় তাকে ভর্তি করা হয় তৎকালীন ঢাকার পিজি হাসপাতালে। এর ৩ দিন পর ১২ সেপ্টেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। পরে ১৯৭৯ সালে মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই- কবির মৃত্যুবার্ষিকীতেও কোথাও তেমন কোনো কর্মসূচি চোখে পড়ে না।