এক এনজিও কর্মীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে গাজীপুর সদর থানায় দায়ের করা মামলার অভিযুক্ত প্রধান আসামী জাতীয় দৈনিক একটি পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি আবুল কাসেমকে আটক করেছে বিজিবি। গত রবিবার (১৮ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় টেকনাফের হোয়াইক্যং তল্লাশী চৌকিতে দায়িত্বরত বিজিবি সদস্যরা তাকে আটক করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে রাত ১২ টায় টেকনাফ মডেল থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। ধৃত আসামী টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ঝিমংখালী গ্রামের আবু শামা ওরফে শামসুল আলমের ছেলে। তিনি বর্তমানে জাতীয় দৈনিক একটি পত্রিকার গাজীপুরস্থ নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত বলে জানা গেছে। গাজীপুর জেলা সদরের ভবানীপুর গ্রামে তার শ্বশুরবাড়ি।
বিজিবির একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, আবুল কাসেমকে একটি সাদা রঙ এর প্রাইভেট কারসহ আটক করা হয়। পরে তাকে টেকনাফ থানায় হস্তান্তর করা হয়। তার গাড়িতে একটি পত্রিকার লগো লাগানো আছে। যার গাড়ি নং ঢাকা- ৬৩৭/ও। মামলার পিসিপিআরে তিনি অবিবাহিত বলা হলেও পুলিশকে গাড়িটি তার স্ত্রীর নামে কেনা বলে জানিয়েছে আবুল কাসেম। গাজীপুর সদর থানায় দায়ের করা ধর্ষণ চেষ্টার মামলার বাদী ও ঘটনার শিকার নারীর ভাই অভিযোগ করেন, মামলার প্রধান অভিযুক্ত আবুল কাশেম পলাতক থেকে তাকে মুঠোফোনে মামলা প্রত্যাহারের হুমকি দিচ্ছেন।
মামলার বাদী আরো জানান, তার ছোট বোন হোতাপাড়া শ্রমিক কল্যাণ সমবায় সমিতি লিমিটেডের কোষাধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযুক্ত আবুল কাসেম অপর অভিযুক্ত ওমর ফারুককে দিয়ে গত ১২ জুন সমিতির অফিস থেকে তার বোনের (ভিকটিম) মোবাইল ফোন নিয়ে যান। পরদিন ১৩ জুন দুপুর পৌনে ১২টার দিকে মোবাইল ফোনটি আনার জন্য তার বোনকে অভিযুক্ত আবুল কাসেমের হোতাপাড়া অফিসে ডেকে নেন। সেখানে গেলে আবুল কাসেম তার বোনকে কুপ্রস্তাব দেন। রাজি না হওয়ায় কাসেম তার বোনকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এসময় তার বোনের ডাক-চিৎকারে পথচারীরা এগিয়ে আসে।
সাংবাদিক পরিচয়ধারী হওয়ায় অভিযুক্তের অফিস কক্ষে তাৎক্ষণিক এগিয়ে আসা লোকজন অভিযুক্তকে কিছু বলতে সাহস পায়নি। স্থানীয়দের সহায়তায় তার বোন ধর্ষনের হাত থেকে বেঁচে ফিরে। এ ঘটনায় ওই দিনই তার বোন থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। কিন্তু প্রধান অভিযুক্ত আবুল কাসেম সাংবাদিক পরিচয় বহন করায় পুলিশ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রথমে গড়িমসি করে। পরে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবীতে ভিকটিমের সহকর্মীরা হোতাপাড়া এলাকায় একাধিক মানববন্ধন করেন। ওইসব মানববন্ধনে স্থানীয় লোকজনও অংশগ্রহণ করেন।
গাজীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন আল রশীদ জানান, অভিযোগের পর ঘটনাটি প্রাথমিক তদন্ত করা হয়। এতে সত্যতা পাওয়ায় মামলা রুজু করে দ্বিতীয় অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। প্রধান অভিযুক্ত আবুল কাসেম পলাতক আছেন। তাকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। প্রধান অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। বাদীকে মামলা প্রত্যাহারের হুমকির বিষয়টিও আমাদের নজরে রয়েছে। তার বিরুদ্ধে কক্সবাজর সদর ও গাজীপুর সদর থানায় মাদক, নারী নির্যাতন, চাঁদাবাজি, বন আইনের অপরাধসহ বিভিন্ন অপরাধে বেশ কয়েকটি মামলা চলমান রয়েছে।
ওইসবের মধ্যে কক্সবাজার থানার এফআই আর নং ৪৯- তারিখ: ২৫/০১/২০১১, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন মামলা নং ৬৭-তারিখ ২৯/০৪/২০০৯, মাদক মামলা নং-২৬ তারিখ ২০/০৫/২০২১৫ এবং গাজীপুর সদর থানার চাঁদাবাজি মামলা উল্লেখযোগ্য। ওইসব মামলায় তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে স্বাক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন উল্লেখ রয়েছে। তিনি নিজেকে নিরাপদ রাখতে সাংবাদিকতার পরিচয় বহন করছেন।
গাজীপুরের পেশাদার সাংবাদিকেরা জানান, পেশার সম্মান নষ্ট করতে ও ব্যক্তিগত অপরাধ ধামাচাপা দিতে তিনি সাংবাদিকতা পেশাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান জানান, ধৃত আবুল কাসেমের পিসিপিআর যাচাই বাছাই করে দেখা যায়, জয়দেবপুর সহ বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। বিশেষ করে মারামারি ও ধর্ষণ এর মধ্যে অন্যতম। তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।