কুষ্টিয়া করোনা হাসপাতালের পেয়িং ওয়ার্ডের সামনের বারান্দায় উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরছিলেন ষাটোর্ধ্ব আবদুল আলিম। চোখেমুখে তাঁর দুশ্চিন্তার ছাপ। কখনো একদৃষ্টিতে অচেনা কারও দিকে তাকিয়ে থাকছেন। হাতে কয়েকটি মেডিকেল রিপোর্ট।
কাছে যেতেই কেঁদে ফেললেন আবদুল আলিম। আজ সোমবার দুপুরে কথা হলো তাঁর সঙ্গে। চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘ছেলের ওষুধ ফুরিয়ে গেছে। কিন্তু কাছে কোনো টাকা নেই। কী করব বুঝতে পারছি না। কোনো ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন?’
আবদুল আলিমের ছেলে ইদ্রিস আলী (৩৫) করোনার উপসর্গ নিয়ে গত শনিবার হাসপাতালে ভর্তি হন। আবদুল আলিম জানান, ১০ থেকে ১২ দিন আগে তাঁর জ্বর ও ঠান্ডাজনিত রোগ হয়। কয়েক দিনের মধ্যে তা সেরেও যায়। কিন্তু শনিবার সকালে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে আসেন।
ইদ্রিস আলী পেশায় ভ্যানচালক। তিনি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ী ইউনিয়নের মাঝিলা গ্রামের বাসিন্দা। হাসপাতালের করোনা অবজারভেশন ওয়ার্ডে বর্তমানে ভর্তি তিনি। শরীরে সেন্ট্রাল অক্সিজেন চলছে। ছাত্রলীগের এক স্বেচ্ছাসেবক অক্সিমিটারে মেপে জানালেন, ইদ্রিসের অক্সিজেনের মাত্রা ৮০ শতাংশ।
আবদুল আলিম জানান, গ্রাম থেকে লোকজনের দেওয়া সাহায্যের ৩ হাজার টাকা ও নিজের কাছে জমানো ১০ হাজার টাকা নিয়ে হাসপাতালে আসেন। ভর্তির পর ওই দিন বিকেলে তিনি পাঁচ হাজার টাকার ওষুধ কেনেন। এরপর রোববার আরও সাড়ে চার হাজার টাকার ওষুধ কেনেন। এ ছাড়া যাতায়াত ও খাওয়াদাওয়ার পেছনে বাকি টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান তিনি। তাই এখন আর ওষুধ কেনার মতো কোনো টাকা নেই তাঁর কাছে।
আবদুল আলিম বলেন, ‘পয়সা নেই। বাড়িতেও কিছু বলতে পারছি না। ছেলেকে নিয়ে বাড়ি চলে যাওয়ার ব্যাপারে ডাক্তারকে বলেছি। কিন্তু ছেলের অবস্থাও তো ভালো না। ওষুধ কেনার টাকা কোথায় পাব, সেই চিন্তায় ছুটে বেড়াচ্ছি।’
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুর মোমেন বলেন, কিছু ওষুধ আছে সেগুলো খুবই দামি। সেগুলোর সরবরাহ কম। এ জন্য হয়তো ইদ্রিস আলীকে বাইরে থেকে সেই ওষুধগুলো কিনতে হচ্ছে।
এদিকে আবদুল আলিমের দুর্দশার কথা শোনার পর সেখানে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধ কিনে দেওয়ার আশ্বাস দেন।
প্রতিবেদন :প্রথম আলো -তৌহিদী হাসান