প্রথম আলোর কক্সবাজার অফিস প্রধান সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুল কুদ্দুস রানার বিরুদ্ধে কক্সবাজার-৩ (সদর, রামু ও ঈদগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবী জানিয়েছেন কক্সবাজার প্রেসক্লাব ও কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারা। একজন সিনিয়র সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এধরণের কুরুচিপুর্ণ বক্তব্য স্বাধীন সাংবাদিকতার উপর নগ্ন হস্তক্ষেপ উল্লেখ করে সাংবাদিক নেতারা এমপি কমলের ওই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
কক্সবাজারের সাংবাদিকদের ওই দুই সংগঠন থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,
গত ৮ ডিসেম্বর প্রথম আলোর অনলাইন এবং পরের দিন প্রিন্ট ভার্সনে “হলফনামা বিশ্লেষণ: সব ‘বিলিয়ে দেওয়া’ সাইমুমের আয়, নগদ টাকা সবই বেড়েছে” শিরোনামে কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের বিষয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া সাইমুম সরওয়ার কমলের হলফনামা বিশ্লেষণ করেই ওই সংবাদ তৈরি করেন সাংবাদিক রানা। হলফনামার বাইরে ওই সংবাদে তিনি অন্য কোনো তথ্য উপস্থাপন করেননি।
নির্বাচনে ঘোষিত তফসিল এবং নির্বাচন কমিশনের আইনে সংসদ সদস্য প্রার্থী ও তাঁর নির্ভরশীলদের (স্ত্রী- সন্তান) আয়, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব দেওয়া বাধ্যতামুলক করা হয়। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রার্থীদের হলফনামা যাছাই বাছাইয়ের জন্য গণমাধ্যমে প্রকাশের সুযোগ দিয়ে থাকেন। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটেও প্রার্থীদের দাখিল করা হলফনামা উন্মুক্ত রাখা হয়। যে কেউ এই হলফনামা দেখে প্রার্থীদের সম্পদের বিবরণ ও তথ্য যাছাই বাছাই করতে পারেন।
সাংবাদিকদের দায়িত্ব হচ্ছে হলফনামার তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ করে জনগণকে জানিয়ে দেওয়া। সম্পদের তথ্য গোপন করলে যেনো জনগণ প্রতিবাদ করতে পারেন। তফসিল ঘোষণার পর থেকে সারাদেশের অসংখ্য মন্ত্রী, এমপিসহ সংসদ সদস্য প্রার্থীদের হলফনামায় দাখিলকৃত সম্পদের তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে আসছে।
কক্সবাজারের অপর তিনটি আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থীদের ন্যায় কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের হলফনামাও বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল ক্ষিপ্ত হন প্রথম আলোর সাংবাদিক আব্দুল কুদ্দুস রানার উপর।
সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পর সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল নিজের ব্যক্তিগত ফেইসবুক পেইজের লাইভে এসে ওই সংবাদের প্রতিবাদ করতে গিয়ে সাংবাদিক আব্দুল কুদ্দুস রানার বিরুদ্ধে কুরুচিপুর্ণ, বিদ্বেষমূলক ও ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বক্তব্য দেন।
কমলের ওই বক্তব্য শুধু মানহানিকর নয়, স্বাধীন সাংবাদিকতার উপর হস্তক্ষেপেরও সামিল। একজন সংসদ সদস্যের কাছ থেকে এমন আচরণ সাংবাদিক সমাজ আশা করেনা। প্রেসক্লাব থেকে সাংবাদিক রানাকে বহিস্কার এবং সামাজিকভাবে বয়কটের দাবী সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল করতে পারেন না।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সাংবাদিক নেতারা বলেন,
আমরা দেখেছি, এর আগেও নিজের ফেসবুক লাইভে এসে সাইমুম সরওয়ার কমল জেলার সিনিয়র কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধেও একই ভাষায় কুরুচিপুর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। সাংবাদিকদের নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন। তখন সাংবাদিকদের প্রতিষ্টান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে এমপি কমলকে সতর্ক করা হলেও তিনি আমলে নেননি।
এতে সরকারের ভাবমূর্তি যেমন ক্ষুন্ন হচ্ছে, তেমনি আগামী ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সাংবিদকদের নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর চক্রান্ত চালানো হচ্ছে। যা মোটেও কাম্য নয়।
সাংবাদিক রানা যদি পরিবেশিত সংবাদে কোনো ভুল তথ্য উপস্থাপন করে থাকেন, সেক্ষেত্রে প্রতিকার পাওয়ার ব্যবস্থা আছে। সংবাদের প্রতিবাদ জানানোর অধিকার আছে। কিন্তু তা না করে সংসদ সদস্য কমল সিনিয়র একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে প্রকাশ্যে বিষোদগার ও উদ্যত্যমূলক আচরণ দেখান। এতে সাংবাদিক সমাজ হতাশ ও ক্ষুব্দ।
সাইমুম সরওয়ার কমলের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে সাংবাদিক নেতারা, সাংবাদিক রানাকে নিয়ে ফেসবুকে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে-তা প্রত্যাহার করতে বলেন। অন্যথায় সাংবাদিক সমাজ বসে থাকবে না বলেও উল্লেখ করা হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।