কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ভাড়া বাড়ি থেকে এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার সন্ধ্যার পর পৌর এলাকার সেরকান্দির বাড়ি থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ।
নিহত শিক্ষার্থী সাগর চন্দ্র বিশ্বাস (২২) কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইন্সস্টিটিউটর পুরকৌশল বিভাগের ৪র্থ সেমিষ্টারের শিক্ষার্থী ও উপজেলার সদকী ইউনিয়নের মালিয়াট গ্রামের বাসিন্দা মনোরঞ্জন বিশ্বাসের ছেলে।
সাগরের পরিবারের অভিযোগ, ‘পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের এক ম্যাডামের সঙ্গে সাগরের নিবির সখ্যতা ছিলো। হঠাৎ দু’জনের মধ্যে সস্পর্কের অবনতি ঘটে। বিষয়টি সাগর মেনে নিতে না পেরে মানসিক ভারসাম্য হারায়। সাগর একাধিকবার অনুরোধ করেও ম্যাডামের কাছ থেকে কোন সারা না পেয়ে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে’। বেশ কিছুদিন ধরে সাগর ঘুমের ওষুধ খেয়ে সারাদিন ধরে ঘুমাতো, বিকেলে ঘুম থেকে উঠতো। শুক্রবার বিকেল পেরিয়ে সন্ধা হয়ে গেলেও সাগর ঘুম থেকে উঠতে দেরি হওয়ায় ডাকাডাকি করে এবং সেল ফোনে কল দিয়েও কোন সারা না পেয়ে ঘরের দড়জা ভেঙ্গে দেখতে পায় সাগর ফ্যানের সাথে টাওয়েল পেচানো অবস্থায় ঝুলছে’।
তবে এবিষয়ে কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইন্সস্টিটিউটের ওই ম্যাডামের সাথে প্রতিবেদকের মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি তীব্র প্রতিবাদ করে জানান, ‘এভাবে বিভ্রান্তিকর, মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন তথ্যের সংবাদ ছড়িয়ে আপনারা রীতিমতো নিউজ সন্ত্রাস করলেন! একটা ঘটনার পিছনে কোন প্রকার প্রাসঙ্গিকতা বিচার না করেই আমাকে জড়িয়ে অসত্য তথ্য প্রকাশের নিন্দা জানায়’।
কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইন্সস্টিটিউটের যন্ত্র কৌশল বিভাগের প্রধান বিশ^জিৎ দেবনাথ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি, তবে আমার জানা মতে, তারা যেটা দাবি করেছে সেটা সঠিক নয়, তাদের মধ্যে বড় বোন ছোট ভাই সম্পর্ক ছিলো, মেয়েটি ভাই ফোটাও দিয়েছিলো ছেলেটিকে। হঠাৎ একদিন সাগর ম্যাডামকে অফার করে বসে। পরে ম্যাডাম বিষয়টি আমাদের মধ্যেও প্রকাশ করেন। আমরা জানার পর সাগরসহ সাগরের অভিভাবকদের ডেকে সব শিক্ষকরা মিলে কাউন্সেলিংও করি। কিন্তু সাগর সইতে না পেরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে পড়ালেখাতে অনিয়মিতও হয়ে যায়। ইতোমধ্যে সে থার্ড সেমিষ্টার পরীক্ষায় ফেল করে, গত বৃহষ্পতিবার সেই একই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে সাগর। কিন্তু পরীক্ষা একেবারেই ভালো হয়নি বলে পরীক্ষার হল থেকেও বেড়িয়ে গিয়ে গামছার এক মাথায় বই বেধে ঝুলিয়ে দিয়ে ফেসবুকের মাধ্যমে বন্ধুদের জানায়। তাছাড়া সাগর মানসিক বিকারগ্রস্ত হওয়ায় নিয়মিত চিকিৎসাধীন ছিলো বলে পরিবার আমাদের জানিয়েছেন’। একজন ছাত্র ঝড়ে যাওয়ার বিষয় শিক্ষক হিসেবে আমাদের কাছে বেদনাদায়ক’।
লাশ উদ্ধার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কুমারখালী থানার অফিসার ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মো. আকিবুল ইসলাম বলেন, ‘নিজ বাড়িতে ফ্যানের সাথে এক তরুনের ঝুলন্ত লাশের সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরন করেছে পুলিশ। এঘটনায় এখন কেউ কোন অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেনি, তবে একটি অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করেছে পুলিশ।