কুষ্টিয়ার হাউজিং এলাকার ভাগার থেকে কলেজ ছাত্রীর কম্বলে মোড়ানো মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বিয়ের ১৯ দিন পর উত্ত্যোক্তকারীরা কলেজ ছাত্রী রেখা(১৮)কে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পরিবারের।
বুধবার (৬ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৭টার দিকে সংবাদ পেয়ে রেখার মরদেহ উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপতালের মর্গে প্রেরন করেছে মডেল থানা পুািলশ। পুলিশের ধারণা পরিকল্পিত ভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যা শেষে লাশ ফেলে গেছে খুনিরা।
নিহত রেখা কুমারখালী উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের বাখই গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রহিম ব্যাপারীর কণ্যা ও কুমারখালী মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেনীর ছাত্রী। পারিবারিক সিদ্ধান্তেই গত ১৮ নভেম্বর পূর্বপরিচিত হাফিজুর রহমানের সাথে বিয়ে হয়। হাফিজুর রহামন একটি ঔষুধ কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে চাকরী করেন গোপালগঞ্জ জেলায়।
নিহতের পিতা দিনমজুর ও ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী আব্দুর রহিম ব্যাপারী বলেন, ‘রেখা বুধবার সকাল ৯টায় কলেজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। পরে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বাড়ি ফিরে না যাওয়ায় পরিবারে লোকজন খোঁজাখুজি শুরু করে। সম্ভাব্য সকল আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে খোঁজ করেও পাওয়া যায়নি। সন্ধার পর সংবাদ পায় যে কুষ্টিয়া হাউজিং ই-বøকের ভাগারে কম্বল মোড়ানো অবস্থায় রেখার লাশ পাওয়া গেছে। গত ২০দিন পূর্বে রেখার পূর্বপরিচিত ও পছন্দের হাফিজুর রহমানের সাথে বিয়ে হয়। কিন্তু এবিয়েতে কোনমতেই আমার বড় জামায় রূপালী ব্যাংকের গাড়ি চালক কুমারখালী উপজেলার চড়াইকোল গ্রামের বাসিন্দা আওলাদ হোসেন চরম আপত্তি ও বিরোধিতা সত্তে¡ও পারিবারিক সিদ্ধান্তেই এই বিয়ে দেয়া হয়’। এঘটনায় আওয়ালাদ খুব রেগে যায়’। এমনকি রেখাকে বকাঝকাও করে’। এখন কিশের থেকে কি হয়েছে তা আল্লাহ জানে। আমি এই হত্যার বিচার চাই’।
নিহতের স্বামী সাতক্ষীরা কালিগঞ্জের বাসিন্দা মৃত: আব্দুল বারীর ছেলে হাফিজুর রহমানের বলেন, ‘প্রায় এক বছর পূর্বে ফোন কলের মাধ্যমে রেখার সাথ আমার পরিচয়। রেখার সাথে ইমু ফোন কলের মাধ্যমেই যোগাযোগ হতো। চাকরী সূত্রে দুরে থাকায় সরাসরি দেখা সাক্ষাতের কোন সুযোগ ছিলোনা। বেশ কয়েক মাস পূর্বে রেখা জানায় তাকে বড় দুলা ভাই আওলাদ হোসেন কর্তৃক উত্ত্যোক্তের বিষয়ে। রেখার বয়স ১৮ বছর পূর্ন না হওয়ায় আমি অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রেখা উত্ত্যোক্তে হাত থেকে বাঁচতে আমাকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। রেখার কথা মতো জন্ম নিবন্ধন সূত্রে প্রায় আড়াই মাস বয়স কমতি থাকলেও কুষ্টিয়াতে নোটারী পাবলিক থেকে পরিবারিক হলফনামা করে আমাদের বিয়ে সম্পন্ন। কিন্তু বিয়ের ১০দিন পর রেখার বড় দুলাভাই আওলাদ হোসেন আমাদের বিয়ের ঘটনা জেনে যাওয়ার পর থেকেই চরম ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। তিনি রেখাকে নানা ভাবে হুমকি ধামকি দিতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি রেখা তার বাবা মাকে এবং আমাকে জানায় যে আমার যখন বিয়ে হয়েই গেছে তখন আমি আমার স্বামীর কাছে চলে গেলে তো আর কোন সমস্যা থাকবে না’। কথামতো আগামী সপ্তাহেই রেখাকে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পরিবারের পক্ষ থেকে। তার আগেই তো এই ঘটনা ঘটে গেলো’।
তবে অভিযুক্ত আওলাদ হোসেনের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘রেখা ফোনে মেহেদী ও হাফিজুরসহ বিভিন্ন ছেলেদের সাথে কথা বলতো বলে আমি রাগারাগী করতাম। এছাড়া ওর বিয়ের বিপক্ষে বা বিরোধিতা করেছি এমন অভিযোগ সঠিক নয় তবে ওদের বিয়ে কবে হয়েছে তা আমি জানিনা বা আমি সেখানে উপস্থিতও ছিলাম না’। রেখা যখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে কলেজে যায় বা বিকেলে বাড়ি ফিরেনি সেই বিষয় আমার জানা ছিলোনা। ওই সময় আমি প্রতিদিনের মতো অফিসে ডিউটিতে ছিলাম’।
বৃহষ্পতিবার বেলা ১১টায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপতালের মর্গে লাশের সুরতহাল প্রস্তুতকারী কুষ্টিয়া মডেল থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক আলমগীর হোসেন জানান, ‘প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা যাচ্ছে যে পরিকল্পিত ভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। তবে মৃত্যুর সঠিক কারন নির্নয়ে ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে’।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) সোহেল রানা বলেন, বুধবার রাতে হাউজিং এলাকায় কম্বল মোড়ানো এক নারীর মরদেহ পড়ে আছে এমন সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এটি একটি হত্যাকান্ড। এঘটনায় এখনও কেউ অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেনি। তবে যারাই এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাক তাদের গ্রেফতার করা হবে।