ওয়েষ্ট জোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) বা পশ্চিমা ল বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কোম্পানী লি: এর গ্রাহকের ঘরে স্থাপিত প্রি-পেইড মিটার এখন কুষ্টিয়ার হাজার হাজার গ্রাহকের গলায় ফাঁস হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রয়োজনীয় ব্যালা রিচার্জ এবং লোড ক্যাপাসিটি বৃদ্ধির কর সংযোজন সংক্রান্ত জটিলতায় গত সপ্তাহধিক কাল ধরে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ অফিসে ধর্না দিতে হচ্ছে এসব প্রি-পেইড মিটারধারী হাজারো গ্রাহকের। তবে অভিযোগ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ওজোপাডিকো লি: ডিভিশন-১ কুষ্টিয়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী দপ্তরের দাবি বিদ্যুৎ সেবাদানের বিনিময়ে উল্লেখিত সেবা কর আগে থেকেই ধার্য ছিলো। এতোদিন এই বিধি পালনে কর্তৃপক্ষ নজর না দিলেও এখন এই বিদ্যুৎ বিধি পালনে কড়াকড়ি আরোপের ফলে বিষয়টি গ্রাহকদের কাছে নতুন মনে হচ্ছে। মিটারের লোড বাড়াতে ব্যস্ত সময় পার করছে ওপাজোডিকো কুষ্টিয়া অফিস।
কুষ্টিয়া শহরের কোটপাড়া এলাকার আবাসিক গ্রাহক নাজমুল হক বলেন,‘গত ১৩ নভেম্বর আমার প্রি-পেইড মিটার রিচার্জ করতে গেলে একাউন্টে টাকা ঢোকানো যাচ্ছিল না। এই সমস্যার সমাধানে আমি ছুটে যাই বিদ্যুৎ অফিসে, সেখানে বিদ্যুৎ কর্মীরা আমার সমস্যার কথা শুনে নতুন করে আরও ২০ ডিজিট মিটারে প্রবেশ করিয়ে আমাকে মিটারে টাকা রিচার্জ করতে বলেন। ওদের কথা মতো নতুন করে ইস্যুকৃত ওই ২০ডিজিটের নম্বর ঢোকানোর পর থেকেই হঠাৎ হঠাৎ করে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পরে আবারও যখন বিদ্যুৎ অফিসকে সমস্যার কথা জানাই তখন তারা বলছে, আপনি লোড ক্যাপাসিটির চেয়ে অধিক বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন বলেই এই সমস্যা হচ্ছে; এর সমাধান করতে চাইলে আরও ৪শত ৩ টাকা জমা দিয়ে ব্যবহার সক্ষমতা বা লোড ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে। এই ব্যবহার বৃদ্ধির শর্ত হলো প্রতি কিলো ওয়াট বিদ্যুতের জন্য প্রতি মাসে বাড়তি আরও ৩৫ টাকা হিসেবে সেবা কর দিতে হবে’। আমি এখন ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না যে আমার কি করা উচিৎ ? বিদ্যুৎ বিভাগ দেখছি দিনকে দিন নানা খাত দেখিয়ে প্রি-পেইড গ্রাহকের পকেট থেকে টাকা খসিয়ে নিচ্ছে।
শহরের মজমপুর এলাকার গ্রাহক কলেজ শিক্ষক রায়হান উদ্দিন বলেন, ‘প্রি-পেইড মিটার গ্রাহকদের স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির গ্যাড়াকলে ফেলে বিদ্যুৎ বিভাগ ঠিকই ডিমান্ড চার্জ আদায় করছে; অথচ আমার নিকট প্রতিবেশীর বাড়িতে এখনও এনালগ মিটার চালু আছে। তাদের ক্ষেত্রে এমন বাধ্যবাদকতা নেই ডিমান্ড চার্জ আদায়ের বিষয়ে। এটা বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক সৃষ্ট গ্রাহকদের প্রতি একটা চরম বৈষম্যমূলক আচরন। এক দেশে এমন বৈষম্যমূলক দ্বৈত নিয়ম আমি কেন মানবো ?, আমার বাড়িতে দুই কিলো ওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহারের অনুমোদন নেয়া আছে এবং প্রতি মাসে আমি এই সেবা কর পরিশোধ করছি, অথচ বিদ্যুৎ বিভাগের প্রি-পেইড মিটারের প্রযুক্তি কারসাজিতে আমার বাসার পানির মটর ছাড়লেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে’।
পশ্চিমা ল বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ওজোপাডিকো লি: কুষ্টিয়া সূত্রে জানা যায় যে, কুষ্টিয়াতে ওজোপাডিকো’র মোট গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৬৯ হাজার। এসব গ্রাহকদের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে প্রায় ২৫ হাজার আবাসিক ও বানিজ্যিক গ্রাহকের ঘরে প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। স্বয়ংক্রিয় এসব প্রি-পেইড মিটারে সংযোজিত সবগুলি এ্যাপস সক্রিয় না থাকায় ওই সময় গ্রাহকদের ডিমান্ড চার্জের বিষয়টি উঠেনি। সম্প্রতি এসব প্রি-পেইড মিটারের সবগুলি এ্যাপস কেন্দ্রিয় ভাবে আপগ্রেডেশন করার ফলে এ্যাপসগুলি সক্রিয় হয়েছে এবং এর ব্যবহার বিধিগুলি গ্রাহক পর্যায়ে উঠে এসেছে।
ওজোপাডিকো কুষ্টিয়া ডিভিশন-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলে রাব্বী বলেন, ‘ওজোপাডিকো লি: গ্রাহকের নিরবচ্ছিন্ন মানসম্মত বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিত করতে সব রকম পরিকল্পনার বাস্তবায়নে কাজ করছে। গ্রাহকের ভোগান্তি নয় বরং গ্রাহক বান্ধব বিদ্যুৎ সেবায় সদা তৎপর। এই সেবাকে আরও গতিশীল করতেই সম্প্রতি বিদ্যুৎ ব্যবহার বিধি প্রতি পালনে প্রতিষ্ঠান ও গ্রাহকদের দায়িত্বশীল হওয়ার আহবান করেছে। আরও সহজ করে বল্লে দাঁড়ায় এতোদিন গ্রাহক তার নিজের ইচ্ছে মতো বিদ্যুৎ ব্যবহারে কোন বিধি নিষেধ না মানলেও এই প্রি-পেইড মিটারে বিদ্যুৎ ব্যবহারে গ্রাহককে অবশ্যই পরিমিতি নিয়মের মধ্যে আসতে হবে। তবে সম্প্রতি প্রি-পেইড মিটার গ্রাহকরা কিছু সমস্যা নিয়ে আসছে। সেগুলি সমাধানে আমরা কাজ করছি।