আগামী ১০ জানুয়ারি নতুন করে দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ
আগামী ১০ জানুয়ারি নতুন করে দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হলে ওইদিনই সরকার গঠন করতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি। আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক সূত্রে এমন আভাস পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই ভোট গ্রহণ হতে পারে। আর নির্বাচনের পরপরই বাঙালির জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে এক অনন্য ঐতিহাসিক দিন ১০ জানুয়ারি। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন। সব ঠিকঠাক থাকলে দলের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসেই শপথ নিতে চান আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। এ ব্যাপারে এরই মধ্যে দলের হাইকমান্ডে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান দৈনিক কালবেলাকে বলেন, ‘১০ জানুয়ারি আমাদের জন্য, এ জাতির জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। এ দিনটির সঙ্গে দেশের জন্ম, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ইতিহাসের একটি বড় অধ্যায়ে জায়গা করে রেখেছে দিনটি। সেজন্য জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে যদি আমরা এ দিন সরকার গঠন করতে পারি, সেটি হবে আরও আনন্দের। তবে শেষ পর্যন্ত সেটি নির্ভর করবে নির্বাচন কমিশনের ভোটের তপশিলের ওপর।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অনড় থাকলেও সরকারবিরোধী বিএনপি জোট সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে। দাবি আদায়ে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিও পালন করছে তারা। অন্যদিকে ১ নভেম্বর থেকে জাতীয় নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়ে গেছে। একাদশ সংসদের সর্বশেষ অধিবেশনও সমাপ্ত হয়েছে বৃহস্পতিবার। সংবিধান অনুযায়ী, ২৯ জানুয়ারির মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট আয়োজনের লক্ষ্যে এরই মধ্যে সব প্রস্তুতিও সেরে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ মাসের মাঝামাঝি সময়ে তপশিল ঘোষণা করা হতে পারে। সে লক্ষ্যে আনুষঙ্গিক কাজকর্ম শেষ করছে কমিশন। ইসির নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আজ শনিবার তপশিল-পূর্ব মতবিনিময় সভায় বসতে যাচ্ছে ইসি। সেখানে দলগুলোর সামনে নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি তুলে ধরে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সবার সহায়তা চাইবে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারবিরোধীরা এখনো বর্তমান সরকারের মাধ্যমে নির্বাচনে বিরত থাকার সিদ্ধান্তে থাকলেও শেষ পর্যন্ত নিজেদের অস্তিত্বের কথা বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনে আসতে পারে বলে মনে করছে ক্ষমতাসীনরা। বিষয়টি মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। সম্প্রতি দলের সংসদীয় সভায় দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতা ও এমপিদের সতর্ক করে দিয়ে একাধিকবার বলেছেন, ‘এবারের নির্বাচন হবে কঠিন ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। বিএনপি নির্বাচনে আসবে সে বিষয়টি মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নিতে হবে। এবার আমি কাউকে জিতিয়ে আনার দায়িত্ব নিতে পারব না। দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। কেউ এবার দলের বিরোধিতা করে আর/পার পাবে না।’ যারা নৌকার বিরোধিতা করবে, তাদের রাজনীতি চিরতরে শেষ হয়ে যাবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
তবে নির্বাচন যত প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হোক না কেন, জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী আওয়ামী লীগ। দলের নীতিনির্ধারকদের বিশ্বাস—বিএনপি শেষ পর্যন্ত ভোটে আসুক আর না আসুক, উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে মানুষ আবারও আওয়ামী লীগকেই বেছে নেবে। আর নির্বাচনে বিজয়ী হলে দলের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ১০ জানুয়ারির এ দিনটিকেই শপথের দিন হিসেবে বেছে নেওয়া হবে। এ দিন শপথের মাধ্যমে দিবসটিকে আনন্দ ও উদযাপনে আরও স্মরণীয় করতে চান দলের নীতিনির্ধারকরা।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য আলাপকালে বলেন, জনগণের ভোটে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে এটা প্রায় নিশ্চিত। কারণ, বিএনপির জ্বালাও-পোড়াও আর মানুষ খুনের রাজনীতি মানুষ পছন্দ করে না। জনগণ দেশের উন্নয়ন চায়। আর নির্বাচনে বিজয়ের পর সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ১০ তারিখ ঐতিহাসিক দিনেই আমরা শপথ নিতে চাই।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ দৈনিক কালবেলাকে বলেন, ‘আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে, এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় অঙ্গীকার। নির্বাচনে সরকারের পক্ষ থেকে ইসিকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে সরকার। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ আবারও আওয়ামী লীগকে বেছে নেবে বলে আমাদের বিশ্বাস। তবে শপথের বিষয়টি নির্ভর করবে ইসির তপশিল ও ভোটের ওপর।’
দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, ‘আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। যারা জ্বালাও-পোড়াও সন্ত্রাস করে না, তারা নির্বাচনে আসবে। নির্বাচনের জন্য আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। নির্বাচন কমিশনের তপশিল ঘোষণার পরই আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হবে। আমাদের আত্মবিশ্বাস, সে নির্বাচনে আমরা আবারও জনগণের রায়ে নির্বাচিত হবো। তবে শপথের বিষয়টি নির্বাচনের তপশিল, ভোট ও জয়ের ওপরই নির্ভর করবে। সেক্ষেত্রে ভোটের পর বিশেষ কোনো দিন থাকলে হয়তো সেটি বেছে নেওয়া হতে পারে।’