আপডেট কুষ্টিয়া’র আয়োজনে কুষ্টিয়ায় ঐতিহ্যবাহী তিন দিনের লাঠি খেলা উৎসবের গতকাল(বুধবার) ছিল দ্বিতীয় দিন। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নের কবুরহাট এলাকার ওস্তাদ জানার আলী ও ঢুলি রাজার পরিচালনায় (২৪ অক্টোবর) সকালে স্থানীয় বালিমাঠে আনুষ্ঠানিক লাঠি খেলার উদ্বোধন করা হয়।
ঢাক-ঢোল আর লাঠির তালে তালে নাচা নাচির মধ্যে খেলোয়াড়দের একে অপরকে আক্রমণ পাল্টা আক্রমণের মধ্যদিয়ে ২৫ অক্টোবর দ্বিতীয় দিনের মতো মিরপুর উপজেলার কলাবাড়ি গ্রাম থেকে শুরু হয় এই লাঠি খেলা উৎসব। এর পর কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কবুরহাট, মাদ্রাসা পাড়া, দোস্তপাড়া, খাজানগর এলাকায় রাত ১০টা পর্যন্ত চলে এই লাঠি খেলা উৎসব।
৫ম বারের মতো এই লাঠি খেলার আয়োজন করে আপডেট কুষ্টিয়া’র চিফ অব এ্যাডমিন সাংবাদিক অর্পন মাহামুদ। এবারের খেলায় মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ছিলো স্থানীয় দৈনিক খবরওয়ালা ও সাপ্তাহিক পথিকৃৎ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, বটতৈল ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিন্টু সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
অন্য দিকে আত্মরক্ষার কৌশল অবলম্বনের প্রচেষ্টা সম্বলিত টান টান উত্তেজনাপূর্ণ ও প্রতিপক্ষকে লাঠি দিয়ে ঘায়েল করার এ যেন এক মহাযুদ্ধ। এই কৌশলটিই লাঠি খেলায় দর্শকদের প্রাণে বিনোদনের সঞ্চার করে।
খেলা দেখতে আসা এক প্রবীণ দর্শক জানান, কবুররহাট কদমতলার লাঠিয়াল দল গ্রামীণ সংস্কৃতির একটি অংশ ঐতিহ্যবাহী এই খেলাটি এখনো ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আবহমানকাল ধরে কুষ্টিয়ারর বিভিন্ন এলাকায় এক সময় বিনোদনের খোরাক জুগিয়েছে এই লাঠি খেলা। কিন্তু কালের বির্বতণে মানুষ আজ ভুলতে বসেছে এই খেলাটি। তবুও বিনোদন প্রেমী মানুষের বিনোদনের খোরাক জোগাতেই এই লাঠি খেলার আয়োজন করার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন জানান।
আয়োজক অর্পণ মাহমুদ জানান, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এই লাঠিখেলা একটি সুস্থ ধারার বিনোদন। যা সমাজকে মাদক, জঙ্গিবাদ ও অপসংস্কৃতি থেকে রক্ষা করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি বৃদ্ধি ও দেশীয় সংস্কৃতি তুলে ধরতে এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় গ্রামীণ মানুষদের নিয়ে ৫ বছর ধরে লাঠি খেলার আয়োজন করে আসছি। প্রতি বছর তিন দিনের এই খেলা দেখতে বিভিন্ন থেকে শত শত নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-শিশু ভিড় জমান। খেলার মাঠ পরিণত হয় এলাকার মানুষের বৃহৎ মিলন মেলায়।
খেলায় অংশ নেওয়া প্রবীণ লাঠিয়ালরা জানান, তাঁরা প্রায় ২৩ বছর ধরে বিভিন্ন এলাকায় লাঠি খেলা করে থাকেন। তবে এই খেলার সঙ্গে জড়িতরা প্রায় সবাই গরীব। তারা দুঃখ-দৈন্যে জীবনযাপন করেন। তাদের জন্য সরকারিভাবে কোনো সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা নেই। তেমন কোনো ব্যবস্থা হলে নিয়মিত চর্চা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা এই খেলাকে আরও বড় পরিসরে মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারবেন বলে আশাবাদী।
এবারের লাঠিখেলায় কুষ্টিয়াসহ চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহের খেলোয়াড়রা অংশগ্রহণ করে তাঁদের লাঠির ক্রীড়াকৌশল প্রদর্শন করেন। এ খেলাটি চলবে আগামী বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত।