কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার কামালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি শুভরাজ আলী ও প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদের বিরুদ্ধে গোপনে চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে লাখ-লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।
এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে কেউই জানেন না বলে অভিযোগ করেছেন ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, চাকরি প্রার্থী ও স্থানীয়রা। তথ্য গোপন না করে পূনরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে সরকারি বিধিনিয়ম অনুযায়ী বৈধভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দাবিও জানিয়েছেন তারা।
নিয়মানুযায়ী নিয়োগ দিতে হলে ম্যানেজিং কমিটির সভা ডাকতে হয়। এই সভায় কয়জন নিয়োগ হবে, তার সিদ্ধান্ত নিতে হয় এবং ওই দিনই পেপার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়। এ ছাড়া একটি বাছাই কমিটি করতে হয় এবং একটি নিয়োগ কমিটি গঠন করতে হয়। কিন্তু নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে গোপনে নিয়োগ বানিজ্য করছে বিদ্যালয়ের সভাপতি শুভরাজ আলী ও প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ। কয়েকজন প্রার্থীর কাছ থেকে তারা কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। মৌখিকভাবে নিয়োগ দিয়ে তাদের দিয়ে কাজও করানো হচ্ছে বিদ্যালয়ে। এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।
জানা গেছে, গোপনে অফিস সহায়ক ও পরিছন্নতাকর্মী পদে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। তবে এসব পত্রিকা ওই এলাকায় আসে না। এছাড়া বাছাই কমিটি করা হয়নি এবং নিয়মানুযায়ী নিয়োগ কমিটি গঠন করা হয়নি। ম্যানেজিং কমিটির সভাও হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তি নোটিশ বোর্ড টাঙানো হয়নি। অনেকেই আবেদন করতে পারেননি। সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক বাদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিষয়টি কেউই জানেন না। বিদ্যালয়ের সভাপতি শুভরাজ আলী ও প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ গোপনে লাখ লাখ টাকার নিয়োগ বানিজ্য করেছে। তারা একাধিক চাকরি প্রার্থীর কাছে থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়েছে। তাদের পছন্দ মতো প্রার্থীকে চাকরি দেয়ার পায়তারা করছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আমরা কামালপুর গ্রামের বাসিন্দা। আমাদের গ্রামের কামালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ব্যাপারে কেউ জানে না। আমরাও জানি না। সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক গোপনে নিয়োগ দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। গ্রামের অনেক যোগ্য প্রার্থীরা আবেদন করতে পারেননি। লাখ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করার জন্য গোপনে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি। তারা শুধু নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিদের আবেদন করিয়েছেন। প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি পছন্দের প্রার্থীদের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা নিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা নাজমুল হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন থেকে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি চালিয়ে আসছেন বিদ্যালয়ের সভাপতি শুভরাজ আলী ও প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ। তারা নিয়োগ বানিজ্য করার জন্য গোপনে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। কিন্তু স্থানীয়রা জেনে গেছেন যে, পছন্দের প্রার্থীদের নিকট থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। তাদের নিয়োগ দেয়ার জন্য এ গোপনীয়তা। বৈধভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
চাকরি প্রত্যাশী কয়েকজন বলেন, কামালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি শুভরাজ আলী ও প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ কয়েকজনের কাছে থেকে কয়েক লাখ করে টাকা নিয়েছে। টাকার বিনিময়ে নিয়োগ বানিজ্য করছে তারা। গোপনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার কারণে অনেক আগ্রহী প্রার্থী আবেদন করতে পারেন নি। এমনকি, পরবর্তিতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির প্রকাশিত পত্রিকার কপি প্রধান শিক্ষকের কাছে বেশ কয়েকজন আগ্রহী প্রার্থী চাইতে গেলেও খবরের কপি দেওয়া হয়নি। তারা পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও অফিস সহায়ক পদে চাকরি দেয়ার বিনিময়ে বিপুল অংকের টাকা নিয়েছে কয়েকজনের কাছে। তারা গোপনে নিয়োগ দেওয়ার চক্রান্ত করছে। ইতিমধ্যে এই অনিয়মের বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে এলাকায়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও এই সংক্রান্ত কোনো বিষয় কাউকে জানানো হয়নি। ম্যানেজিং কমিটির অনেক সদস্যদের না জানিয়ে গোপনে নিয়োগ বানিজ্য করার চেষ্টা করছে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য কামালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি শুভরাজ আলী ও প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদকে পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন,নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বা নিয়োগের ব্যাপারে আমি কিছুই জানতাম না। এখন শোনা যাচ্ছে গোপনে নিয়োগ বানিজ্য করার চেষ্টা করেছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি। তারা পরিছন্নতা কর্মী জাহাঙ্গীর হোসেনকে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে ৪-৫ মাস আগে কয়েক লাখ টাকা নিয়েছে। এছাড়া অফিস সহায়ক পদে মুকুল হোসেনকে চাকরি দেওয়ার নামে তার কাছ থেকেও কয়েক লাখ টাকা নিয়েছে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক। মুকুল ও জাহাঙ্গীরকে মৌখিকভাবে নিয়োগ দিয়ে বিদ্যালয়ে ওই পদে কাজ করানো হয়েছে। বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব না থাকা সত্ত্বেও একজন প্রার্থীকে ক্লাস করানোর অনুমতি প্রদান করেছে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি। বিষয়টি স্কুলের শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা জানেন। পূনরায় বৈধভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যোগ্যদের নিয়োগ দেয়া হোক। তা না হলে গ্রামবাসীদেরকে নিয়ে আমরা মানববন্ধন করব।
বিদ্যালয়ের সভাপতি শুভরাজ আলী কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার খলিসাকুন্ডি ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের মৃত করিম মন্ডলের ছেলে। সে খলিসাকুন্ডি ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য। নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে। এরআগে পর্নোগ্রাফি মামলায় কুষ্টিয়া আদালত ছয় মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেছিল। বর্তমানে কামালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তিনি। নিজ এলাকায় তিনি সুদখোর, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী ও লাঠিয়াল বাহিনীর প্রধান হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, হামলা, ভাঙচুরসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। চাঁদাবাজি, দখলবাজি ছাড়াও শুভরাজ মেম্বার চুরি, ডাকাতি, নির্যাতনসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। তার অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ। শুভরাজ মেম্বারের নির্যাতনের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায় না। এরআগে, যারা তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছে তাদেরই নির্যাতন করেছে এই মেম্বার।