কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার সুলতানপুর মাহতাবিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেনীর কয়েকজন ছাত্রীর ধুমপানের ঘটনায় তাদের ভৎস্মর্না করেন দুই শিক্ষক।
লজ্জায় অপমান সইতে না পেরে জিনিয়া খাতুন নামের এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যার ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়ছে। লাশ দেখতে গিয়ে হামলার শিকার হন প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ। ‘ছাত্রীদের ভিডিও করে স্যোসাল মিডিয়ায় দেয়া হবে’ এমন হুমকির অসত্য তথ্য ছড়িয়ে উত্তেজনা সৃষ্টির অভিযোগ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। পুলিশ জানায় অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নিহত জিনিয়ার মামা সাবেক ইউপি সদস্য ও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদেও সাবেক সদস্য গাজিরুল ইসলামের অভিযোগ,‘সামান্য ধুমপানের অভিযোগে অভিযোগে ছোট্ট বাচ্চা মেয়েকে এভাবে নির্যাতন করা শিক্ষকের বিচার চাই। জিনিয়াকে কক্ষে ডেকে আটকে রেখে স্কুল ব্যাগ রেখে দিয়েছে শিক্ষক লাল্টু, অপর শিক্ষক ওলিউর ওই ছাত্রীদের ভিডিও ধারণ করে রাখে এবং নেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে। এতে জিনিয়া লজ্জায় অপমানে বাড়িতে এসে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমি এটাকে কোন ভাবেই আত্মহত্যা বলতে রাজি নই। এটাকে হত্যাকান্ড বলবো এবং এর জন্য দায়ী শিক্ষকদের দৃষ্টান্তমূল শাস্তি চাই’।
নিহত জিনিয়ার সহপাঠী সিনথিয়া বলেন, ‘আমরা চারতলার সিড়িঘওে ছিলাম, ওখান থেকে স্যার আমাদের ডেকে নিয়ে এসে স্যারদের রুমে জিজ্ঞাসা করে যে আমরা সিগারেট খেয়েছি কিনা। একজন মহিলা ম্যাডাম আমার মুখ শুকে গন্ধ পেয়েছিলো। তখন স্যার আমাদের বকাবকি করে এবং আয়া খালাকে দিয়ে ক্লাশরুম থেকে আগেই আমাদের বইখাতার ব্যাগ নিয়ে এসে রাখে। পরে লাল্টু স্যার বলেন,এর বিচার আগামীকাল হেড স্যার করবেন। এই বলে আমাদের বাড়িতে চলে যেতে বলেন’।
অপর শিক্ষার্থী আখি খাতুন জানায়, ‘স্যাররা আমাদের বকাবকি করেছে ঠিকই তবে কোন মারধর করেনি। তাছাড়া স্যারেরা আমাদের ভিডিও করেছে বলে যেসব কথা শুনছি তা সম্পূর্নরূপে মিথ্যা কথা’। স্যারেরা আমাদের কোন ভিডিও করেনি বা নেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকিও দেয়নি’।
অভিযুক্ত শিক্ষক মশিউর রহমান লাল্টু দাবি করেন, ‘সোমবার দুপুর ২টার দিকে ৭ম শ্রেনীর কয়েজজন মেয়ে শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের সিড়িঘরে গিয়ে ধুমপান করেছে এই অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। এসময় ওই ছাত্রীদের বলেছি তোমাদের বিচার আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) হেড স্যার নিজে অভিভাবকদের ডেকে নিয়ে করবেন’। তাদের বলেছি তোমাদের পিতা-মাতাকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে এসে স্কুল ব্যাগ নিয়ে যেতে হবে’।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘৭ম শ্রেনীর এক ছাত্রীর লাশ দেখতে গেলে সেখানে একদল উছৃঙ্খল লোক আমার উপর অতর্কিত হামলা করে এভাবে রক্তাক্ত জখম করেছে। গতকাল সোমবার দুপুরে স্কুল মাঠে ছাত্রদের ফুটবল খেলা চলছিলো। এসময় সবাই খেলা দেখছিলো, কিন্তু ওই মেয়েরা ৪র্থ তলার সিড়িঘরে গিয়ে ধুমপান করছে এমন কথা আমার শিক্ষকরা মোবাইল করে জানায়। এসময় আমি জেলা শিক্ষা অফিসে দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত ছিলাম। তারপর বিকেলে ফিরেই সাড়ে ৫টার দিকে স্কুলে ফিরে শুনতে পাই, জিনিয়া নামে ৭ম শ্রেনীর একটি মেয়ে আত্মহত্যা করেছে’। সেখানে আমার স্কুলের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে তা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে ৫সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে অবশ্যই কারো বিরুদ্ধে দোষ পাওয়া গেলে তার ব্যবস্থা নেয়া হবে’।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম স্বপন বলেন,‘স্থানীয় একটি মহল নিজেদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পানি ঘোলা করার চেষ্টা করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে পরবর্তীতে যারা একালায় বিশৃংখলা সৃষ্টি করেছে এবং প্রধান শিক্ষকের উপর হামলা চালিয়ে গুরুতর রক্ষাক্ত জখম করেছে তাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের দাবি করছি’। যতদুর জানতে পেরেছি এসব অসত্য ভুয়া তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার সাথে নিহত ওই ছাত্রীর নিকটাত্মীয় গাজিরুল নিজেই জড়িত যা বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রচার হয়েছে।
উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে জানিয়ে কুমারখালী থানার ওসি আকিবুল ইসলাম বলেন, জিনিয়া আত্মহত্যার ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। এছাড়া পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোন অভিযোগ পায়নি। এছাড়া লাশ দেখতে এসে হামলার শিকার হয়ে রক্তাক্ত জখম হয়েছে সেবিষয়েও কোন অভিযোগ এখনও পায়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানায় পুলিশ।