কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় জিকে প্রধান সেচখাল ও ডাকবাংলো সংলগ্ন সরকারী ভু-সম্পত্তি অবৈধভাবে জোরপূর্বক, সরকারী কর্মচারীকে মারধরসহ ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে দখল করে দোকান ঘর নির্মানের অভিযোগ উঠেছে এক সেনা/র্যাব সদস্যের বিরুদ্ধে।
বৃহষ্পতিবার সন্ধায় ঘটনার বিচার ও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ায় কর্মরত উপসহকারী প্রকৌশলী অসীম কুমার ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র ও থানাতে লিখিত দরখাস্ত করেছেন। একই ভাবে মারধরের শিকার পানি উন্নয়ন বোর্ড বাপাউবো কুষ্টিয়ার কার্যসহকারী ফয়সাল হোসেন এজাহার দিয়েছেন ভেড়ামারা থানায়। যদিও এজাহার থেকে সেনা/র্যাব সদস্যের নাম বাদ দিয়ে এজাহার দিতে বলেছেন পুলিশ এমন অভিযোগও রয়েছে মামলার বাদি ফয়সালের। ফয়সাল জানায়, ‘পুলিশ বলেছেন সেনা সদস্য এনামুলের নামে মামলা করতে হলে আদালতের পারমিশন লাগবে’।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ভেড়ামারা থানার অফিসার ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম জানান, ‘জোরপুর্বক অবৈধ ভাবে মারধর করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি দখল করে দোকান ঘর নির্মানের অভিযোগে সংশ্লিষ্ট বøকের কার্যসহকারী ফয়সাল হোসেন বাদি হয়ে দেয়া এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে।
এবিষয়ে অভিযুক্ত সেনা সদস্য বর্তমানে র্যাব-৮এ কর্মরত ভেড়ামারা উপজেলার ফারাকপুর জিকে কলোনী সড়কের বাসিন্দা মৃত বাল্লেক মিস্ত্রির ছেলে মো: এনামুল (৪০)র মোবাইল নং ০১৭৭৭৭১০৮৮৬ মোবাইল নং এ কল করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে এই সেনা সদস্য এনামুলের তথ্য জানতে র্যাব-১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার মোহাম্মদ ইলিয়াস খাঁনের সাথে মোবাইল কলে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ‘উল্লেখিত এনামূল হক র্যাব-৮ এ কর্মরত, বর্তমানে তিনি ৮দিনের ছুটিতে আছেন। তার বিরুদ্ধের অভিযোগ বিষয়ে এই র্যাব কর্মকর্তা জানান, ‘এনামুল যদি র্যাবের পরিচয় ব্যবহার করে ভয় ভীতি সৃষ্টি করে তাহলে কোন ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ থাকে আমার কাছে দিতে পারেন’। আমি সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় দপ্তরে সেটি প্রেরনের ব্যবস্থা করবো’।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার ২১ জুন বিকেলে কে বা কারা ভেড়ামারায় জিকে প্রধান সেচখাল ও ডাকবাংলো সংলগ্ন সরকারী ভু-সম্পত্তি অবৈধভাবে জোরপূর্বক দখল করে দোকান ঘর নির্মান করছে। এমন সংবাদ পাওয়া মাত্র বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার উপ সহকারী প্রকৌশলী অসীম কুমার ও কার্যসহকারী ফয়সাল হোসেন ঘটনাস্থলে হাজির হন এবং দোকান নির্মান কাজ বন্ধ রাখার অনুরোধ করেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মচারী কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে দেখতে পেয়ে আচমকা শহিদুল মিস্ত্রী ও এনামুলসহ আরও ২/৩জন অজ্ঞাত লোক এসে আমাদের উপর হামলা করেন এবং উপর্যুপরি মারধর করতে শুরু করে।
নির্যাতন আক্রান্ত ফয়সাল হোসেনের অভিযোগ, ‘এনামুল হক তার অপর ৪ সহযোগীসহ আমাকে মারধর করছিলো আর ভয় দেখাচ্ছিল এই বলে যে, ‘তুই আমাকে চিনিস ? তোকে ধরে নিয়ে গিয়ে ক্রস ফায়ার দিলে কিছুই হবে না’। এই বলে বেধড়ক মারধর করতে থাকে। সেখানে উপস্থিত উপসহকারী প্রকৌশলী অসীম কুমার কাজ বন্ধের অনুরোধ করলে তাকেও আটকে রাখে এনামুল’।
এবিষয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ভেড়ামারা অ লে বিস্তীর্ণ জায়গার জমি নানা ভাবে স্থানীয় প্রভাব শালীরা অবৈধভাবে দখল করে নানা অবকাঠামো গড়ে তুলছে। এসবের বিরুদ্ধে একাধিকবার উচ্ছেদ চালানো সত্তে¡ও কিছুদিনপর আবারও তারা আমাদের জায়গায় ঘর নির্মান করে। এসবে বাধা দিলেই তারা আমাদের কর্মকর্তা কর্মচারীদের উপর চড়াও হয়ে হামলা ও মারধর করে। গত বুধবারও সেই একই ঘটনা ঘটেছে। এষিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে এবং ভেড়ামারা থানায় মামলা দেয়া হয়েছে’।
অভিযোগের বিষয়ে ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকাশ কুমার কুন্ডু বলেন, ‘সরকারী জমিতে অবৈধ ভাবে ঘর নির্মানে বাধা দেয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মচারীকে মারধরের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেগ গ্রহনের জন্য আইন শৃংখলা বাহিনীকে অনুরোধ করেছি’।