কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর বোয়ালদাহ গ্রামে বাড়ির সীমানা সংক্রান্ত দ্বন্দের জেরে সাফি আলী (২৫) নামে এক যুবককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে নিহতের চাচা ও চাচাতো ভাইদের বিরুদ্ধে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চারমাস পূর্বে পিটুনির ঘটনার গুরুতর আহত সহকারী নির্মাণ শ্রমিক সাফি হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বিনা চিকিৎসায় বাড়িতেই ভুগছিলো মস্তিষ্ক/স্পাইনে আঘাত জনিত ক্ষত নিয়ে।
সোমবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে সফির স্বাস্থ্যের গুরুতর অবনতি হওয়ায় পরিবারের স্বজনরা কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক সফিকে মৃত: ঘোষনা করেন।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. হোসেন ইমাম বলেন, ‘ সোমবার সকালে সাফি নামের এক যুবককে জরুরী বিভাগে নিয়ে আসলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেছেন। গত চারমাস পূর্বে এই রোগী এ্যাসল্ট হয়ে ভমিটিং লক্ষনসহ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলো’।
নিহত সাফি আলী(২৫) উপজেলার ১নং হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের বোয়ালদাহ নদীরকুল এলাকার বাসিন্দা মানসিক প্রতিবন্ধী মতিয়ার রহমানের একমাত্র কর্মক্ষম সহকারী নির্মান শ্রমিক।
নিহতের মা বেবি খাতুন (৪৫)র অভিযোগ, বাড়ির সীমানা সংক্রান্ত দ্বন্দের জেরে আমার ভাসুর কামাল হোসেন দীর্ঘদিন ধরে তার ছেলেদের হুকুম দিয়ে আমার পরিবারের লোকজনকে মারধর ও হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিলো। তারই জেরে গত বছরের ২০ নভেম্বর সকালে আমার ছেলে সাফিকে কামাল হোসেনের ৪ছেলে যথাক্রমে তোফাজ্জেল (৩৫), তুষার (৩০), সুজন (২৫), মোফাজ্জেল(২২)গণ বাড়ি থেকে তুলে থেকে তুলে নিয়ে বোয়ালদ্হা গ্রামের মেছুয়াপাড়াস্থ বাগান এলাকায় কামাল হোসেনের বাড়িতে হাত পা বেধে রড বাটাম লাঠিসোটাসহ দেশীয় অস্ত্রের আঘাতসহ মারধর করে। আমরা উপায়ান্ত না পেয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের সাহায্য চায়। পরে মডেল থানার দারোগা জিন্নাহ এসে গুরুতর আহত চেতনাশুন্য সাফিকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে দুইদিন চিকিৎসা শেষে বাড়িতে এসে সাফি এতোদিন ধরে নিস্তেজ অবস্থায় ভুগছিলো। অভাবের সংসারের ওর প্রয়োজনীয় ওষুধও খাওয়া পারিনি। সাফি ছিলো আমার পরিবারের উপার্জনক্ষম ছেলে। আমার পরিবারে দু’বেলা ঠিকমতো খাবারই জোটেনা, ওষুধ কিনবো কি করে ? চারমাস পূর্বে সাফিকে মারধরের কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি মামলাও করেছি। কিন্তু সেই মামলায় কোন আসামীকে পুলিশ ধরেনি।
তবে এঘটনায় হুকুমদাতা কামাল হোসেনের মুঠোফোনে ফোন দিয়ে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
কুষ্টিয়া মডেল থানার উপপুলিশ পরিদর্শক জিন্নাহ আহমেদ মুঠোফোনে জানান, ‘গত নভেম্বর মাসে বোয়ালদাহ মেছোপাড়া এলাকার কামাল হোসেনের বাড়ি থেকে সাফি নামে এক যুবককে হাত পা বেধে মারধর করছে এমন সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে জ্ঞানশুন্য ওই যুবককে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলাম। ওই ঘটনায় মারধরে অভিযোগে সাফির মা বেবি খাতুন বাদি হয়ে থানায় মামলা করেছিলো। মামলাটি এখন আদালতে বিচারাধীন আছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন খাঁন জানান, ‘সোমবার সকালে বোয়ালদাহ গ্রামে সাফি নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করেছে। ঘটনাটির তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। যারাই জড়িত থাক তাদের গ্রেফতার করবে পুলিশ।