জামায়াতে ইসলামী মহিলা সংগঠনের সদস্যত্ব নিতে এবং স্কুলে মাহফিল করতে না দেয়ায় ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাতের অভিযোগ এনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কুষ্টিয়া জেলার সহসভাপতির করা মামলায় এজাহারভুক্ত স্কুল শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে পুুলিশ। বুধবার ভোর রাত সাড়ে ৪টায় স্কুল শিক্ষক আবু সালেহ আহমেদকে তার নিজ বাড়ি হতে গ্রেফতার করা হয় বলে নিশ্চিত করেন কুমারখালী থানা পুুলিশ।
গ্রেফতার আবু সালেহ কুমারখালী উপজেলার কয়া গ্রামের আব্দুল জব্বার শেখের ছেলে এবং কয়া চাইল্ড হ্যাভেন নিন্ম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
বাদির দেয়া এজাহারে তার দলীয় দুই নারী কর্মীর বরাতে করা অভিযোগ, ‘আসামী প্রতিদিন স্কুলে এ্যাসেম্বলিতে ছাত্রীদের বলে তোমরা বোরখা পড়বে না, চুল ছেড়েদিয়ে মাথায় ক্যাপ পড়ে, পায়ে জুতা পড়ে, সাইকেলে করে স্কুলে আসতে হবে বলে ছাত্রীদের উদ্ধুদ্ধ করে। এবিষয়টি নিয়ে গত ২০ ফেব্রæয়ারী সকাল ১০টায় শাহানাজ খাতুন স্বপ্না, কহিনুর বেগম ও আখি খাতুন নামে তিনজন অভিভাবক স্কুলে গিয়ে আমাদের মেয়েদের কেনো বোরখা পড়া নিষেধ, কেনো আল্লাহর বিধান ও বাসুলে সুন্নাহর বিরুদ্ধে ছাত্রীদেরকে কেনো বোরখা না পড়ায় উদ্ধুদ্ধ করেছেন ? জানতে চাইলে- আসামী বলেন, রাসুলের আদর্শ মানতে হলে তো ১২/১৪টা বিয়ে করতে হবে এবং ৬বছরের শিশুকে ধর্ষন করে নির্যাতন করতে হবে, এছাড়াও আরও বলেন, কোরআনের ৫শ আয়াত ভুল আছে যা সৌদি সরকার বিবৃতি প্রদান করেছে, আবারও বলেন,‘ আল্লাহ রাসুল বলিতে কেহ নাই, ‘যে আল্লাহ সেই তো রাসুল’ এসব নিয়ে আমাকে বোঝাতে আসবেন না। যা মুসলিম উম্মাহর জন্য আপত্তিকর, হযরহ মোহাম্মদ (সা:) ও কোরআন সম্পর্কে তার এই জঘন্য বক্তব্যে মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে রক্তক্ষরন হয়েছে। এমন অভিযোগের স্বপক্ষে এজাহারে দেয়া স্বাক্ষীগণের তালিকায় ৪জনের নাম রয়েছে যারা সবাই জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে সক্রিয়।
মামলার বাদি মো: এনামুল হক তার নিজ পরিচয় সম্পর্কে জানান তিনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কুষ্টিয়া জেলা শাখার সহসভাপতি। মামলার এজাহারে উল্লেখিত তিন নারী এবং স্বাক্ষী হিসেবে যে ৪জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা সবাই তার দলীয় কর্মী সমর্থক বলে নিশ্চিত করেন। এসময় উল্লোখিত তিন নারী গত ২০ ফেব্রæয়ারী সকাল ১০টায় ওই স্কুলে গিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সদস্য সংগ্রহকালে এবং ওই স্কুলে মহিলা মাহফিল করতে না পেরে ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে অভিযোগের কোন উত্তর দেননি মামলার বাদি।
স্পর্শকাতর এই মামলায় এক স্কুল শিক্ষককে কুমারখালী থানা পুলিশ গ্রেফতারের বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহে সরেজমিন অনুসন্ধান কালে উঠে আসা চিত্ররূপ হলো-
ওই স্কুলের ৮ম শ্রেনীর ছাত্রী তন্নি খাতুন ও ১০ম শ্রেনীর ছাত্রী আফরোজা খানমসহ কয়েজন শিক্ষার্থীর সাথে ঘটনার সত্যতা নিয়ে জানতে চাইলে তারা জানিয়েছেন, ‘বছররের শুরুতে এখনও আমাদের সকলের স্কুল ড্রেস ক¤িøট করতে পারেনি। সেবিষয়ে হেড স্যার আমাদের এ্যাসেম্বলির সময় বলেছেন, ‘তোমরা যারা স্কুল ড্রেস তৈরী করতে পারোনি তারা দ্রæত স্কুল ড্রেস করে নাও, যারা বোরখা পড়তে চাও তারা স্কুল ড্রেসের কালার ম্যাসিং বোরখা তৈরী করে নিবা, যাদের বাড়ি দুরে তারা এবং সরকারী সাইকেল যারা পেয়েছো তারা সবাই সাইকেল চড়ে স্কুলে আসবা’। স্যার কোনদিনই আমাদের বোরখা পড়তে নিষেধ করেনি’।
গ্রেফতার শিক্ষক আবু সালেহর স্ত্রী নিলুফার ইয়াসমিন লিলির অভিযোগ, ‘স্কুলটিতে জামায়াতের ঘাটি করতে দিইনি বলেই ওরা আমাকে শায়েস্তা করার জন্য এই মামলা দিয়েছে। ওরা এমনটি করবে তা আগে জানলে আমি এসব ঝামেলার মধ্যে যেতাম না; বরং ওদের দাবি মেনে নিতাম, তাহলে হয়ত এই হয়রানিতে পড়তাম না’। আমি আমার স্বামীর মুক্তি চাই’।
কয়া চাইল্ড হ্যাভেন নিন্ম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সদস্য আবুল কাশেম বলেন,‘দীর্ঘ প্রায় দুই দশক ধরে বিনে পয়সায় ব্যাগার খাটার পর গত জানুয়ারীতে সর্বশেষ এমপিও ভুক্তির চুড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর থেকেই এই স্কুলটিতে দখলবাজি করতে একটি চক্র নানা অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে আজগুবি একটা মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে মামলা করেছে’। আমার ব্শি^াস আদলত পর্যন্ত বিষয়টি যাওয়ার পর শিক্ষক আবু সালেহ ন্যায় বিচার পাবে’।
কুমারখারী উপজেলার ০১নং কয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কুষ্টিয়া জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল ইসলাম স্বপন বলেন, ‘গতকাল বিকেলেই আমি ঘটনাটি শুনেছি। আমি নিজে সেখানে খোঁজ নিয়ে, স্থানীয়দের সাথে কথা বলে যেটা জানতে পেরেছি তা হলো- গ্রেফতার ওই শিক্ষকের স্ত্রী স্থানীয় কিন্ডার গার্টেন স্কুলে প্রধান শিক্ষিকা নিলুফার ইয়াসমিন লিলিকে মহিলা জামায়াতের সদস্য করার জন্য কয়েকজন মহিলা সদস্য ফরম পুরন এবং ওই স্কুলে মহিলা জামায়াতের মাহফিল করতে চাপ দেয়। ওই স্কুলে মহিলা জামায়াতের মাহফিল করতে দিতে রাজি না হওয়ায় এই মামলা করে লিলির স্বামী শিক্ষক আবু সালেহকে মামলায় ফাঁসিয়ে শায়েস্তা করতে চেয়েছে”। আমি এঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং শিক্ষক আবু সালেহর মুক্তি দাবি করছি”।
এবিষয়ে মুঠোফোনে আলাপকালে কুমারখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মো: মোহসীন হোসাইন জানান, ‘স্কুলে শিক্ষার্থীদের বোরখা পড়তে নিষেধ করাসহ ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাতের অভিযোগে ৫৯৫ক/৫০৫ পেনাল কোড ১৮৬০র ধারায় করা মামলার এজাহার ভুক্ত আসামী স্কুল শিক্ষক আবু সালেহকে গ্রেফতার করে আদালতে সৌপর্দ করা হয়েছে’।
Post Views: 34