শ্বশুর বাড়ি থেকে ফিরে নিজঘরে ফ্যানের সঙ্গে রশি পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস নিয়ে এক যুবকের আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে। তবে মৃত্যুর খবর দেওয়ার পরও ওই যুবককে শেষবারের মত দেখতে আসেননি তার স্ত্রী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন। কুষ্টিয়ার কুমারখালী পৌরসভার (সেরকান্দি) হলবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত যুবক জনি শাহ (২৭) ওই এলাকার মুন্নাফ শাহের ছেলে।
আজ শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে যুবকের মরদেহ হস্তান্তর করে পুলিশ। এর আগে খবর পেয়ে গত বৃহস্পতিবার রাত (২৬ জানুয়ারি) সাড়ে ৮টার ঝুলন্ত মরদহে উদ্ধার করে কুমারখালী থানা পুলিশ এবং মরদেহের সুরতহাল করে শুক্রবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ।
পুলিশ ও নিহত ব্যক্তির স্বজনরা জানায়, প্রায় দুই বছর আগে জনি শাহের সঙ্গে রাজবাড়ি জেলখানার পিছন এলাকার মোছা. জান্নাতুল নুপুরের (২৩) ফেসবুকে পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে তাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে। হঠাৎ একদিন জনি তার প্রেমিকা নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরে জনির পরিবার তাদের বিয়ে দেন। কিন্তু দুই পরিবারের অভিভাবকদের মাঝে কোনো আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিলো না। এমনকি জনির স্বজনরা জান্নাতুলের বাবা-মায়ের নাম পরিচয়ও জানেন না।
তারা আরো জানায়, পারিবারিক কলহের জেরে সপ্তাহখানেক আগে জান্নাতুল তার বাবার বাড়িতে চলে যান। বুধবার বিকালে জনি তার স্ত্রীকে আনতে শ্বশুর বাড়িতে গিয়েছিল। কিন্তু সেখানে শ্বশুর-বাড়ীর লোকদের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় সেদিন জনি রাজবাড়ি জেলার কালুখালী স্টেশনে রাতযাপন করেন এবং বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ি ফিরে আসেন। এরপর কাউকে কিছু না জানিয়ে তিনি সন্ধায় নিজঘরে ফ্যানের সঙ্গে রশি দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন।
খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৮ টার দিকে ঝুলন্ত মরদহে উদ্ধার করে কুমারখালী থানা পুলিশ এবং মরদেহের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার দুপুরে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে পুলিশ।
সরেজমিনে দেখা যায়, জনিকে শেষবারের মত একনজর দেখতে স্বজনরা ছুটে এসেছেন। বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। সে সময় জনির মরদেহের গোসলের কাজ চলছিল। তবে সেখানে তার স্ত্রী কিংবা শ্বশুর বাড়ির কোনো লোকজন পাওয়া যায়নি।
এসময় নিহতের বাবা মুন্নাফ শাহের সঙ্গে কথা হয় জানা যায়, তার ছেলে দুই আগে জান্নাতুলকে নিয়ে তার বাড়ি চলে এসেছিলেন। তাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পরে সামাজিকভাবে তাদের বিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বিয়ের দুই বছরের মধ্যেও দুই পরিবারের মাঝে কোনো যাওয়া আসা ছিলো না। ছিলো না কোনো আত্মীয়করন। এমনকি জান্নাতুলের বাবা-মায়ের নাম পরিচয়ও জানেন না বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, গত বুধবার তার ছেলে শ্বশুর বাড়িতে গিয়েছেলেন বউ আনতে। কিন্তু সেখানে ছেলে মান-অপমান করা হয়েছিল। সেই ক্ষোভে বৃহস্পতিবার সন্ধায় আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি করেন তিনি।
নিহত জনির মা রুনা খাতুন বলেন, ওরা (জান্নাতুলের পরিবার) খুব খারাপ কিছু করেছে তার ছেলের সঙ্গে। তার ছেলে অপমানের ব্যথা সইতে (সহ্য) না পেরে নিজের জান নিজেই শেষ করেছেন। থানায় মামলা করে ওদের বিচার করা হবে বলে জানান তিনি।
বন্ধু ইমরান হোসেন পলাশ বলেন, প্রথমে ফেসবুকে পরিচয় পরে বিয়ে করেছিল রিলেশন করে। তবুও ওর (জনি) পরিবার সব কিছু মেনে নিয়ে ছিল। কিন্তু হঠাৎ ওর বউয়ের সঙ্গে মনোমালিন্য চলছিল। বউ বাবার বাড়ি চলে গিয়েছিল। পরে বউকে আনতে গেলেও বউ আসেনি। সেই অভিমানেই হয়তো রাগে ক্ষোভে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ধারনা করছেন তিনি।
নিহত ব্যক্তির স্ত্রী ঠিকানা ও মৃত্যুর কারণ জানতে মুঠোফোনে (০১৩১৬-৪৮৬১৬৯) কল দেওয়া হয় জান্নাতুলের বড় বোনকে। তিনি ঠিকানা না দিয়ে মুঠোফোনে বলেন, মৃত্যুর খবর পেয়ে জান্নাতুল অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাই লাশ দেখতে কেউ যায়নি। একথা বলতে বলতেই তিনি কলটি কেটে দেন। পরে বারবার কল দিলেও তিনি কলটি গ্রহণ করেন নি।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোহসীন হোসাইন বলেন, খবর পেয়ে যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পারিবারিক কলহের জেরে তার স্ত্রী বাপের বাড়ি চলে গিয়েছিল। শ্বশুর বাড়ি থেকে ফিরে আত্মহত্যা করেছে বলে তার স্বজনরা দাবি করছেন। তবে ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে বিস্তারিত বলা যাবে বলে জানান তিনি