কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এলাকার নিজ বাসায় স্কুল শিক্ষিকা রোকশানা খানম হত্যায় জড়িত সন্দেহে নিহতের একমাত্র ভাইয়ের ছেলেকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এর আগে নিহতের স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান শিশির বাদি হয়ে নিহতের ভাইপো একমাত্র নওরোজ কবির ওরফে নিশাতের নামোল্লেখ করে স্ত্রী হত্যার অভিযোগে মামলা করেন কুষ্টিয়া মডেল থাানায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া মডেল থানার থানার অফিসার ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, ‘নি:সন্তান স্কুল শিক্ষিকা রোকশানা খানম স্বামীর অবর্তমানে একাকী নিজ শয়নকক্ষে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যাকান্ডের শিকার হন। এঘটনার প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া ধারণার ভিত্তিতে নিহতের একমাত্র ভাই(৯বছর পূর্বে মৃত:) নিপুর ছেলে নিশাতকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এই হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে’। নিশাত কে শিক্ষিকা হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কুষ্টিয়া অতিরিক্ত চীপ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে সৌপর্দ করা হয়েছে। সেই সাথে তদন্তের স্বার্থে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে’।
প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কুষ্টিয়া জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক এফতে খাইরুল ইসলাম বলেন,‘শেষ পর্যন্ত কর্ম পাগল রোকশানার তিল তিল করে সি ত আর্থিক স্বচ্ছলতাই হলো ওর জীবনের কাল। গতকালই আমাদের কাছে এরকমটিই মনে হচ্ছিল যে, এই নৃসংশ হত্যাকান্ড আসলে ঘরের মধ্য থেকেই ঘটেছে’।
কুষ্টিয়া গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ জানান, ‘সোমবার রাতেই হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে নিহতের বখাটে, মাদকাশক্ত ও অনলাইন জুয়ারী একাদশ শ্রেনীতে পড়–য়া নওরোজ কবির নিশাত(১৯) এর পিতা নিপু ৯বছর পূর্বে মৃত্যুর পর থেকেই ওদেরকে নিজ বাড়িতে রেখে লালন পালন করছিলেন রোকশানা খানম। নি:সন্তান হওয়ার কারণে নিশাতের সকল আবদারই পুরণ করতেন রোকশানা। কিছুদিন আগে আড়াই লক্ষ টাকার একটি মটর সাইকেল কিনে দেন রোকশানা। সেটিও নিশাত অনলাইন জুয়া খেলে হেরে গিয়ে বিক্রী করে দেয়। নিশাত তার ফুফু রোকশানার কাছে আবারও টাকার দাবি করায় ক্ষীপ্ত হয়ে ফুফু রোকশানা ভাইপো নিশাতকে বকাঝকা করেন এবং আর কোন টাকা পয়সা দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দেন এবং বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেতে বলেন। এতে ক্ষীপ্ত হয়ে নিশাত ফুফুর চোখকে ফাকি দিয়ে বাসার ভিতরে ঢুকে লুকিয়ে থাকে। গভীর রাতে রোকশানা খানম ঘুমিয়ে পড়লে সুযোগ বুঝে রান্না ঘর থেকে মসলা গুড়ায় ব্যবহৃত শীল দ্বারা ঘুমন্ত রোকসানার মাথায় সজোরে আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে নিশাতের দেখিয়ে দেয়া মতে অব্যহৃত লিফটের ঘর থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা শীলটিও উদ্ধার করেছে গোয়েন্দা(ডিবি) পুলিশ’।
উল্লেখ্য সোমবার বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং ডি ব্লকের ২৮৫নং ৬তলা ভবনের ২য় তলায় জেলা স্কুলের জ্যেষ্ঠ ইংরেজী শিক্ষক রোকশানা খানমের রক্তাক্ত মরদেহ তার নিজ শয়নকক্ষ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় দায়ের হত্যা মামলায় জড়িত সন্দেহে এজাহার নামীয় একমাত্র ব্যক্তি নিহতের মৃত ভায়ের ছেলে যাকে ছোট বেলা থেকে লালন পালন করছিলেন শিক্ষিকা রোকশানা খানম। নিহত ওই স্কুল শিক্ষিকা ভেড়ামারা উপজেলার মধ্যবাজার এলাকার বাসিন্দা মৃত: রওশন আলী মাস্টারের কণ্যা এবং একই উপজেলার সাতবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত: মানিক খুনকারের ছেলে যশোরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে কর্মরত মোস্তাফিজুর রহমান শিশিরের স্ত্রী। মোস্তাফিজুর-রোকশানা আড়াই দশকের বৈবাহিক দাম্পত্য জীবনে ছিলেন নি:সন্তান।
কেএসসি/এপিপি