প্রায় ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে কুষ্টিয়া বিচারিক হাকিম আদালতের নতুন ভবন। আট তলাবিশিষ্ট এই ভবনে নতুন সংযোজিত লিফট প্রায়ই অকেজো থাকায় বা চলন্ত অবস্থায় মাঝপথে আটকে যাওয়ায় চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা।
বুধবার আদালত চলাকালে একই ঘটনা ঘটে। প্রায় এক ঘণ্টা যাত্রীদের লিফটে আটকে থাকতে হয়। শেষ পর্যন্ত তাদের উদ্ধারে ডাকতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে।
কুষ্টিয়া ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ইনচার্জ আব্দুল আলীম জানান, যাত্রীদের উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
এর আগে সোমবার বেলা ১১টার দিকে আদালত ভবনের ১ নম্বর লিফট নীচ থেকে উপরে যাওয়ার সময় অকেজো হয়ে দুই ফ্লোরের মাঝখানে আটকে যায়। সেখানে আটকে থাকেন চার আইনজীবী, দুইজন পুলিশসহ আসামি ও বিচারপ্রার্থীরা।
লিফটে আটকেপড়া আইনজীবী আব্দুল হালিম দ্রুত এই ভোগান্তির অবসানের দাবি করে বলেন, “সত্যিই আমি ওইদিন খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম। আমার মতো এমন বয়স্ক মানুষের লিফটের মধ্যে আটকে থেকে আতঙ্কের সঙ্গে অক্সিজেন সংকট যুক্ত হলে যা হওয়ার কথা, আমারও তাই হয়েছিলো। ফায়ার সার্ভিস যদি আসতে আরও দেরি করতো তাহলে কী যে ঘটে যেত তা বলা মুশকিল।”
আদালত পুলিশের পরিদর্শক নজরুল ইসলাম বলেন, “প্রায়ই লিফট চলতে চলতে মাঝপথে অকেজো হয়ে আটকে যায়। তখন লোকজনের মধ্যে একটা আতঙ্কও ছড়িয়ে পড়ে। বিচারপ্রার্থীরাও ভয়ে ছুটাছুটি শুরু করে দেন। অবশ্যই এর একটা স্থায়ী সমাধানের দাবি করি।”
গণপূর্ত বিভাগের বাস্তবায়িত এই ভবন নির্মাণ প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, দুই পর্বে এই ভবনটির নির্মাণ সম্পন্ন হয়। প্রথম পর্বে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ভবনটির চতুর্থ তলা পর্যন্ত নির্মাণ সম্পন্ন করে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান জহুরুল লিমিটেড। ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ তা আদালত কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে গণপূর্ত বিভাগ।
এরপর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দ্বিতীয় পর্বে ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ভবনটির পঞ্চম থেকে অষ্টম তলা পর্যন্ত নির্মাণ শেষ হয়। পরে চলতি বছরের মাঝামাঝি তা হস্তান্তর করেছে গণপূর্ত বিভাগ।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিটিতে আট জন বহন ক্ষমতাসম্পন্ন দুইটি লিফট ভবনে স্থাপন করে গ্লোবাল লিফট কোম্পানি। সব মিলিয়ে কুষ্টিয়া বিচারিক হাকিম আদালতের এই নতুন ভবন নির্মাণে সরকারের ব্যয় প্রায় ৩৮ কোটি টাকা।
তবে লিফটসহ আটতলা বিশিষ্ট বহুতল এই ভবন নির্মাণের শুরু থেকেই নানা অনিয়ম অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠে। শতভাগ ব্যবহার সুবিধা পাওয়ার আগেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসবাবপত্র ও ওয়াশব্লক ফিটিংস ভেঙে নষ্ট ও অকেজো হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ আদালত সংশ্লিষ্টদের।
এ ছাড়া শুরু থেকেই এই ভবনে স্থাপিত কারিগরি ত্রুটিযুক্ত লিফট নিয়ে প্রশ্ন তুলে তার সমাধান দাবিতে একাধিকবার লিখিত দরখাস্ত দিয়েছেন ক্ষুব্ধ আইনজীবীরা।
কুষ্টিয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম দুলাল জানান, “লিফট সমস্যার সমাধান চেয়ে সমিতির পক্ষ থেকে একাধিকবার দরখাস্ত করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় কাজের কাজ কিছুই হয়নি। হয় তারা এর একটা স্থায়ী সমাধান করুক নচেৎ ওই কারিগরি ত্রুটিযুক্ত লিফট একেবারে বন্ধ করে দিক।
“সেই সঙ্গে চারতলার উপরে যে সকল এজলাস আছে সেগুলি নীচের ফ্লোরে নিয়ে আসুক, তাহলে আর আমাদের কোনো আইনজীবীকে লিফটের উপর নির্ভর করতে হবে না।”
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে আদালতের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা নুরুল আমীন জানান, সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ করে সংশ্লিষ্ট গণপূর্ত বিভাগকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
কুষ্টিয়া গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, “ইনস্টেলেশনের শুরুতে প্রোগ্রামিং ত্রুটির কারণে লিফট দুটি প্রায়ই অকেজো বা আটকে যাচ্ছে। সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে লিফট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মূল মালিকের মৃত্যুজনিত কারণে তাদের এই ব্যবসা এখন প্রায় বন্ধ।
“সে কারণে অন্য কোনো বিকল্প টেকনিশিয়ান চেয়ে ঢাকাতে চিঠি পাঠিয়েছি। টেকনিশিয়ান এসে ঠিক করে দিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।”
এ ছাড়া, অব্যবহৃত ওয়াশব্লকের নষ্ট হয়ে যাওয়া ফিটিংস ও সেগুলি যে সমস্যা আছে সেগুলিও দ্রুত ঠিক করা হবে বলে জানান এই প্রকৌশলী।