ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) পরিবহন পুলের অধিকাংশ ভাড়া বাসের ফিটনেস ঠিক নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ফিটনেস বিহীন বাসে প্রতিদিন ক্যাম্পাস থেকে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ সড়কে চলাচল করছে হাজারো শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাস থেকে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহরের দূরত্ব যথাক্রমে ২৪ ও ২২ কিলোমিটার। যাতায়াতে সময় লাগে প্রায় এক ঘন্টা। ফলে শিক্ষার্থীদের অনেকটা সময় বাসে কাটাতে হয়। এতে যেকোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কিংবা দূর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে অভিযোগ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
পরিবহন অফিস সূত্রে জানা যায়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাস হতে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহে নিয়মিত যাতায়াত করে মোট ৫৩ টি বাস। এর মধ্যে ২৩টি বাস বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব এবং বাকি ৩০ টি বাস ভাড়া করা।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া করা বাসগুলোর অধিকাংশ বাসই ফিটনেস বিহীন। বাসগুলোর কিছুতে গ্লাস ভাঙা, বসার সিট ভাঙা, বিভিন্ন স্থানে ভাঙা সহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। এছাড়াও লুকিং গ্লাস বিহীন বাসও দেখা যায়। কিছু পুরনো জরাজীর্ণ বাস রঙ করিয়ে নতুন রুপে আনার চেষ্টা করলেও বাস্তবে বাসগুলোর অবস্থা শোচনীয়। অধিকাংশ বাসের সিটগুলো নড়বড়ে। এতে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় শিক্ষার্থীদের। এছাড়াও মাঝে মধ্যে শিক্ষার্থীদের বাস ঠেলে ইঞ্জিন সচল করতেও দেখা গেছে।
এদিকে, সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া থেকে যে ৩ টি বাস ক্যাম্পাসে আসে তা শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত নয়। অনেক শিক্ষার্থীকে দাঁড়িয়ে আসতে হয়। এছাড়াও ভাড়া বাসের হেল্পার কতৃক শিক্ষার্থীদের হেনস্তা, বাইরের লোকজন জন ভার্সিটি বাসে তুলে ভাড়া নেয়া সহ নানা অভিযোগ রয়েছে বাসের হেল্পার ও ড্রাইভারের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী ফিটনেসবিহীন ঝুঁকিপূর্ণ মোটরযান চালালে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া বাসগুলো ফিটনেস বিহীন হলেও এ বিষয়ে প্রশাসনকে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় নি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রায়হান আজাদ বলেন, কুষ্টিয়া থাকার কারণে প্রতিদিনই ক্যাম্পাসের বাসে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু বাসগুলোর অবস্থা শোচনীয়। এসব ফিটনেস বিহীন বাসে শিক্ষার্থীরা যেকোনো সময় দূর্ঘটনার শিকার হতে পারে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিমেল বলেন, ক্যাম্পাসের ভাল বাসগুলো শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় সবই ফিটনেস বিহীন ভাড়া বাস দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে, তাদেরসহ সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের জন্য ভাল বাস নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, ফিটনেসবিহীন বাস গুলোর আইনানুগ ব্যবস্থা শুধু বিআরটিএ নিতে পারবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি ব্যাপারে আমরা শুধু গাড়ি সরবরাহকারীকে বলতে পারি এইসব গাড়িগুলো না দেওয়ার জন্য। আমি ঢাকা থেকে ক্যাম্পাসে আসলে ফিটনেসহীন বাস গুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন বাস কেনা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসের বাসের জন্য পর্যাপ্ত জনবল নেই। এইজন্য ইউজিসিতে মিটিংয়ের জন্য আমরা পরিবহন ডিমান্ড নোট ইউজিসির রেজিস্ট্রার অফিসে পাঠিয়েছি। ইউজিসি যদি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে আমাদের ডিমান্ড গুলো একসেপ্ট করবে। এছাড়া নতুন যে তিনটি গাড়ি আনা হবে এর দুইটি কুষ্টিয়া রোডে আরেকটি ঝিনাইদহ রোডে দেওয়া হবে।বাসের ড্রাইভার-হেল্পার কর্তৃক শিক্ষার্থীদের হেনস্তা ও শিক্ষার্থীদের বাসে না তুলে বাইরের যাত্রী তুলে ভাড়া নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,ভাড়া বাস গুলো মনিটরিং করা হয় তবে ধান্দবাজরা ধান্দাবাজরা চেষ্টা করবেই। গতকাল মিটিংয়ে সকল অফিসার, সকল ভাড়া বাস ড্রাইভারদেকে বলেছি কোনো ভাবেই বাস রিস্কে চালানো যাবে না, শিক্ষার্থীদের সাথে বাজে আচরণ করা যাবে না, শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট স্থানে নামাতে হবে আর উঠাতে হবে, বাহিরের মানুষদের বাসে উঠানো যাবে নাহ, শিক্ষার্থীদের ভার্সিটির বাসেই উঠাতে হবে পরের বাস বলে নামানো যাবে নাহ কারণ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা থাকতে পারে। শিক্ষার্থীরা এই বিষয়ে যেকোনো ধরনের কম্প্লেইন করলে আমি ব্যবস্থা নিবো।