কুষ্টিয়ায় ধর্ষণের শিকার সাত বছর বয়সী এক স্কুলছাত্রীকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠাতে ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার পথে গত সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ধর্ষণের শিকার হয় প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ওই শিশু। পরে মামলা করতে ওই দিনই সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে শিশুকে নিয়ে কুষ্টিয়া সদর থানায় হাজির হন তার বাবা।
কিন্তু পুলিশ তাৎক্ষণিক মামলা নথিভুক্ত করে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য শিশুটিকে হাসপাতালে না পাঠিয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত থানায় বসিয়ে রেখে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। পরদিন গতকাল মঙ্গলবার সকালে বাবাসহ শিশুকে থানায় এনে ফের বসিয়ে রাখা হয়। এরই মধ্যে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর পেয়ে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন। এমন পরিস্থিতিতে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য শিশুকে অবশেষে সিভিল সার্জন অফিসে পাঠানো হয়। ধর্ষণের শিকার শিশুর বাবা পেশায় নির্মাণশ্রমিক।
ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, তার মেয়ে সদর উপজেলার বাড়াদি গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শিশুটি প্রতিবেশী এক শিক্ষকের বাসায় প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফিরছিল। এ সময় একই গ্রামের বাসিন্দা হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আমিরুল ইসলামের ছেলে রংমিস্ত্রি আকাশ (২৭) তার পথ রোধ করে। আকাশ শিশুকে কোলে তুলে পাশের কলাবাগানে নিয়ে যায়। সেখানে ধর্ষণের সময় শিশুর চিৎকার ও কান্নার আওয়াজ শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে আকাশ পালিয়ে যায়।
শিশুর বাবার অভিযোগ, তিনি ওই দিনই সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঘটনাটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানিয়ে বিচার প্রার্থনা করেন। তারা তাকে থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যেই স্ত্রীসহ ধর্ষণের শিকার মেয়েকে নিয়ে কুষ্টিয়া সদর মডেল থানায় যান। কিন্তু থানাতে দীর্ঘ সময় বসিয়ে রেখে দুপুরের পর এসআই ইউনুস ঘটনার বিবরণ শুনে একটি এজাহার লিখে তাতে সই করিয়ে নেন। এরপর থানার একটি কক্ষে ওই দিন রাত ৯টা পর্যন্ত তাদের বসিয়ে রাখা হয়। এ দীর্ঘ সময়ে অনাহারে ও যন্ত্রণায় ধর্ষণের শিকার শিশুটি কাতরাতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে পরদিন সকালে আবার থানায় যেতে বলে। পরে গতকাল সকালে ভারী বৃষ্টির মধ্যে ভিজতে ভিজতে তারা আবার কুষ্টিয়া মডেল থানায় গেলে শিশুকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে না পাঠিয়ে ফের বসিয়ে রাখা হয়।
শিশুর বাবা বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইউনুসকে আমি বারবার অনুরোধ করি বাচ্চাটাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে। কিন্তু তিনি কোনো সাড়া দেননি। পরে সাংবাদিকরা পুলিশকে ফোন করার পর দুপুর সাড়ে ১২টার সময় সিভিল সার্জন অফিসে নিয়ে যান সাদা পোশাকের একজন মহিলা পুলিশ। ধর্ষণ মামলা রেকর্ড হওয়ার পরও পুলিশ আসামি ধরার উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো আমাদের ২৭ ঘণ্টা থানায় রেখে দিয়েছে। আমি আমার মেয়ে ধর্ষণে জড়িত আকাশকে গ্রেপ্তারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
‘ এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. এইচএম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, দুপুর সাড়ে ১২টার সময় কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ ধর্ষণের শিকার শিশুকে নিয়ে এলে ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্নের প্রয়োজনীয় দাপ্তরিক উদ্যোগ নিয়ে ২৫০ শয্যার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।”
সুত্রঃ দেশ রুপান্তর