আদালত অবমাননা মামলায় হাজিরা দিলেন কুষ্টিয়ার ডিসি-এসপিসহ ৪ জন
ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি না দিয়ে সবাইকে সোমবার কোর্টে হাজির থাকার নির্দেশ
আদালত অবমাননার মামলায় হাইকোর্টের তলব আদেশে হাজিরা দিয়েছেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি ও নিলামকৃত সম্পত্তি গ্রহণকারী ব্যবসায়ী।
রবিবার (২১ আগস্ট) বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চে তারা হাজিরা দেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আগামীকাল সোমবার আদেশের জন্য দিন ধার্য রেখেছেন আদালত।
পরে কুষ্টিয়ার ডিসি ও এসপিকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আবেদন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। আদালত ওই আবেদন না মঞ্জুর করে তাদেরকে আদেশের সময় আদালতে হাজির থাকতে নির্দেশ দেন। একইভাবে ব্র্যাক ব্যাংকের এমডিকে হাজিরা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন তার আইনজীবী। আদালত সেই আবেদন নাকচ করে দিয়ে যথাসময়ে আদালতে হাজির থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
আদালত বলেন, ‘এটা আদালত অবমাননার মামলা। আদেশের সময় তাদেরকে আদালতে হাজির থাকতে হবে। এদিকে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় কুষ্টিয়ার সদর থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন খান আদালতে হাজির হননি। তার আইনজীবী কোভিড সংক্রান্ত রিপোর্ট ও চিকিৎসকের সনদ আদালতে দাখিল করেন।’
এর আগে শুনানিতে আদালতের জিজ্ঞাসার জবাবে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইদুল ইসলাম জানান, এই সম্পত্তি সম্পর্কে আমার কোন ধারণা নাই। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।
পুলিশ সুপার (এসপি) মো. খায়রুল আলম বলেন, ‘আদালতের আদেশের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানার ওসি আমাকে অবহিত করেননি। যার কারণে বিষয়টি আমার জানা নাই। এ পর্যায়ে এসপির উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, আপনি জেলার পুলিশ সুপার হিসাবে একজন ক্ষমতাবান কর্মকর্তা। এই ক্ষমতা আপনাকে দু’ভাবে ভোগ করার সুযোগ রয়েছে। এক. জনগণের সেবা করে। দুই. স্বেচ্ছাচারীভাবে। এখন বলুন, আপনি এই ক্ষমতা কিভাবে ভোগ করেন? জবাবে এসপি বলেন, জনগণের সেবার মাধ্যমে এই ক্ষমতা ভোগ করে থাকি।’
এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেনকে হাইকোর্ট বলেন, ‘ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলামকে আপনারা একটি চিঠি দিলেন। সেখানে নিলাম হওয়া হওয়া সম্পত্তি সাতদিনের মধ্যে বুঝিয়ে দিতে বললেন। যদি সম্পত্তি বুঝিয়ে না দেয় তাহলে প্রশাসনের সাহায্য নেওয়ার কথা বলেছেন। যদি ওই সময়ের মধ্যে বুঝিয়ে না দেয় তাহলে আইনানুযায়ী প্রশাসনের সাহায্য নিতে আপনি কি কোন চিঠি দিয়েছিলেন।’ জবাবে এমডি বলেন, ‘আমি কোন চিঠি দেইনি। এ পর্যায়ে আদালত বলেন, নিলাম কার্যক্রমের উপর আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে সেটা জানার পর সেটা কি নিলাম ক্রয়কারী ব্যক্তিকে অবহিত করেছিলেন? এমডি বলেন, জানা নাই।’
এরপর ডাকা হয় নিলামকৃত সম্পত্তি ক্রয়কারী ব্যক্তি রশিদ অ্যগ্রো ফুড লিমিটেডের সত্ত্বাবধিকারী ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদকে। আদালত তার কাছে জানতে চান, নিলাম সম্পত্তি ক্রয়ের পর ব্র্যাক ব্যাংক কি আপনাকে তার দখল বুঝিয়ে দিয়েছে? জবাবে তিনি বলেন, জ্বি, ব্যাংক বুঝিয়ে দিয়েছে। আদালত বলেন, সেটা কিভাবে? দখল বুঝিয়ে দেওয়ার কোন কাগজ কি আপনার কাছে আছে? তখন ওই ব্যবসায়ী বলেন, এ সংক্রান্ত কোন কাগজ আমার কাছে নাই। এ পর্যায়ে আদালত বলেন, তাহলে কিভাবে আপনি ওই সম্পত্তির দখল নিলেন? নিজেই কি ওই সম্পত্তির দখল নিয়েছেন?
ব্যবসায়ী বলেন, ব্যাংক আমাকে নোটিশ দিয়েছে। কিন্তু দখল বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয়ে কোন কাগজ দেয়নি। শুনানি শেষে হাইকোর্ট সোমবার আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এএম আমিন উদ্দিন, ডিসি ও এসপির পক্ষে আইনজীবী মুন্সী মনিরুজ্জামান ও ইউসুফ খান, এমডির পক্ষে সৈয়দ মিনহাজুল হক ও ব্যবসায়ী শফিকুলের পক্ষে রাগীব রউফ চৌধুরী শুনানি করেন।
প্রসঙ্গ সম্পত্তি নিলাম কার্যক্রমের উপর উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকার পরেও তা না মানার অভিযোগে করা আদালত অবমাননার মামলায় কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি, কুষ্টিয়া সদর থানার ওসি ও নিলামে সম্পত্তি নেওয়া ব্যবসায়ী আব্দুল রশিদকে গত ১১ আগস্ট তলব করে হাইকোর্ট। সেই তলব আদেশ অনুযায়ী তারা আদালতে হাজিরা দেন।
রাগীব রউফ চৌধুরী জানান, ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলামের মালিকানাধীন বিশ্বাস ট্রেডার্স, ভিআইপি রাইস মিল ও ভিআইপি ফ্লাওয়ার মিলসহ বসতভিটা আট একর জমির ওপর অবস্থিত। ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ৪২ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তিনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। পরে ৯০ কোটি টাকা পরিশোধ করেন। ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে তার সম্পত্তির ওপর নিলাম ডাকা হয়।
আইনজীবী জানান, শফিকুলের সম্পত্তির মোট মূল্য ১৩৩ কোটি টাকা। যা নিলামে ১৫ কোটি টাকায় বিক্রয় করে দেয়া হয়।
তিনি বলেন, নিলামের প্রেক্ষিতে ৪ আগস্টের মধ্যে আমাদেরকে সম্পত্তি বুঝিয়ে দিতে বলা হয়। পরে ওই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হয়। গত ২ আগস্ট হাইকোর্ট নিলাম পরবর্তী সকল কার্যক্রম স্থগিত করে। একইসঙ্গে এক মাসের মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংককে ২০ কোটি এবং বছরে ৬ কোটি টাকা করে পরিশোধ করতে শফিকুলকে নির্দেশ দেয়।
সেই মোতাবেক হাইকোর্টের আদেশের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিবাদীদেরকে ল’ ইয়ার্স সার্টিফিকেট দিয়ে অবগত করা হয়। কিন্তু সেই আদেশ না মেনেই নিলামকৃত সম্পত্তি দখলে নেওয়ার অভিযোগে আদালত অবমাননার মামলা করা হয়।
প্রতিবেদনক:জা উ