যৌতুকের দাবিতে কুষ্টিয়ায় স্ত্রীকে মারপিট এবং হত্যার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে কারারক্ষী শেখ আল ইমরানের (২৬) বিরুদ্ধে। বিয়ের পর থেকে একাধিকবার হত্যার চেষ্টাও করা হয়েছে। এঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) দুপুরের দিকে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্ত্রী শিখা নাজমিন (২০)।
এরআগে গত মঙ্গলবার যৌতুকের টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে স্ত্রীর মাথার চুল ধরে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ঘুষি, চড়, থাপ্পড়, লাঠিসোটা দিয়ে চোখ অন্ধ করে দিতে আঘাত করে ইমরান। কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস রূপনগর আদর্শপাড়া এলাকায় এঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী শিখা নাজমিন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর গ্রামের আবুল খায়েরের মেয়ে। এবং অভিযুক্ত শেখ আল ইমরান একই উপজেলার ফিংড়ী গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে। ইমরান কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে কারারক্ষী হিসেবে চাকরি করেন। তারা কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস রূপনগর আদর্শপাড়া এলাকায় ফারুকের বাড়িতে ভাড়ায় থাকতো।
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দুই বছর আগে পারিবারিকভাবে শিখা নাজমিনের সাথে শেখ আল ইমরানের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় ইমরান কৌশলে আসবারপত্র ও স্বর্ণের গহনা কেনার জন্য নাজনীনের বাবার কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা আদায় করে। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের দাবিতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। চাকরির সময় ১১ লাখ টাকা লেগেছে এমন কথা বলে স্ত্রীর কাছে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে কারারক্ষী ইমরান। নাজমিনের বাবা তার মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে আরও দুই লাখ টাকা দেয়। এতোকিছুর পরেও স্বামীর নির্যাতন বন্ধ হয় না। গত মঙ্গলবার বিকালের দিকে যৌতুকের টাকা দিতে অস্বীকার করলে হত্যার উদ্দেশ্যে স্ত্রীকে মারপিট করে কারারক্ষী ইমরান।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিখা নাজমিন বলেন, বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের দাবিতে আমাকে নির্যাতন করে আসছে ইমরান। সর্বশেষ যৌতুক দিতে অস্বীকার করলেন ইমরান আমাকে মারপিট করে। এতে আমার চোখ ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম হয়েছে। সেদিন প্রাণ বাঁচাতে আমি প্রতিবেশী এক ভাবির বাসায় আশ্রয় নিই। পরে আমার পরিবারের লোকজন খবর পেয়ে আমাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সে আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। আমি থানায় অভিযোগ দিয়েছি। ইমরানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
তিনি আরও বলেন, নির্যাতনের সময় হাত-পা ধরে অনুনয়-বিনয় ও কান্নাকাটি করার পরও নির্যাতন থেকে রক্ষা পাননি আমি। নির্যাতনের অতিষ্ঠ হয়ে পাষণ্ড স্বামীর বিচার দাবি করে কুষ্টিয়া মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে কারারক্ষী শেখ আল ইমরানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে কল করার কারণ জানিয়ে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।
কুষ্টিয়া জেলা কারাগারের জেলার এনামুল কবির বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। এ বিষয়ে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সাথে কথা হয়েছে আমার। আইনের গতিতে আইন চলবে, আপরাধী হলে তাকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বিরুল আলম বলেন, এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।