কুষ্টিয়ার কুমারখালী পৌরশহরে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় প্রভাবশালীদের চাপের মুখে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর মামলা না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। গত সোমবার দুপুরে শহরের বড় জামে মসজিদের কাছে কুমারখালী স্টিল ফার্নিচার ও সিমেন্ট নামে একটি দোকানের গুদামে ওই হামলার ঘটনা ঘটে। ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় ধারণ করা ওই হামলার দৃশ্যের ভিডিও ফুটেজ ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি নিয়ে জেলাজুড়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। হামলাকারীরা তাকে পেটানোর পাশাপাশি তার এক স্বজনকে কুপিয়ে জখম এবং দোকান ভাঙচুর ও টাকা লুট করে বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিক আরিফুল ইসলাম।
হামলার বর্ণনা দিয়ে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঘটনার দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সিমেন্ট কোম্পানিকে পাঠানোর জন্য ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা নিয়ে আমি দোকান থেকে বের হচ্ছিলাম। তখন হঠাৎ পাপ্পু, সৌরভ, আলামিন ও ইনসানসহ আরও ৪-৫ যুবক হকিস্টিক, বেকি (ধারালো অস্ত্র), হাঁসুয়া, রামদা ও লোহার রড উঁচিয়ে আমি কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার ওপর হামলা চালিয়ে বেধড়ক মারধর করে। এ সময় আমার সঙ্গে থাকা মামাতো ভাই আশিক ঠেকাতে গেলে ওরা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম ও আহত করে। হামলাকারীরা আমার কাছে থাকা এক লাখ পঁচানব্বই হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং আমার দোকান ভাংচুর ও তছনছ করে। ’
তিনি ও তার জখম হওয়া ভাইয়ের চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায় জানিয়ে ব্যবসায়ী আরিফুল বলেন, ‘এলাকাবাসী গুরুতর আহত ছোট ভাই আশিকসহ আমাকে উদ্ধার করে কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে চিকিৎসা দেয়। প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে চলা হামলায় যা কিছু ঘটেছে তার সবই সিসি ক্যামেরার ফুটেজে সংরক্ষিত আছে। ’
হামলার ঘটনায় চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৪-৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে কুমারখালী থানায় লিখিত এজাহার জমা দিলেও পুলিশ তা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করেনি বলে অভিযোগ দোকান মালিক আরিফুল ইসলামের। এ প্রসঙ্গে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি থানায় এজাহার জমা দিলে বিষয়টি জানতে পেরে কুমারখালী পৌর মেয়র সামছুজ্জামান অরুণ পুলিশকে মামলা নিতে নিষেধ করেন। সে কারণে পুলিশ আমার মামলাটি রেকর্ড করেনি।
এমনকি আমার ছিনতাই হওয়া ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা উদ্ধারেও পুলিশ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ’
হামলার শিকার ব্যবসায়ীর লিখিত অভিযোগ মামলা হিসেবে নথিভুক্ত না করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কুমারখালী থানার ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ‘গত সোমবার দুপুরে মসজিদ গলিতে হামলার ঘটনাটি ওদের নিজেদের মধ্যে সাাজানো ঘটনা। আবার পরে ওরা নিজেরাই সব ঠিক করে নিয়েছে। কোনো পক্ষই অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেনি। অভিযোগ পেলে ঘটনায় যারাই জড়িত থাক না কেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া হবে। ’
মামলা নিতে পুলিশকে নিষেধ করার অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে গতকাল শনিবার কুমারখালীর পৌর মেয়র সামছুজ্জামান অরুণের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে কল করার কারণ জানিয়ে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।