এবার কুষ্টিয়ায় গ্রামীণ মেলার আয়োজনে চলছে অশ্লীল নৃত্য। এর আগে জুয়া ও অবৈধ লটারি দিয়ে শুরু হয়েছিল মেলা। এতে একদিকে যেমন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা ও যুবসমাজ।
তবে গ্রামীণ ঐতিহ্য মেলার নামে এসব অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে প্রশাসনের নেই কোনো নজরদারি ও তৎপরতা। এতে ক্ষোভ ও তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী ও সুশীল সমাজ। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেক অভিভাবক।
সোমবার (১৬ মে) গভীর রাতে চাঁপাইগাছী মেলায় গিয়ে দেখা যায়, খোলা মাঠে বসেছে হরেক রকম দোকান। দোকানগুলোর পেছনে টিন দিয়ে ঘিরে কয়েকটা গোপন স্থান তৈরি করা হয়েছে। সেখানে কোথাও বসেছে জুয়ার আসর, কোথাও চলছে গানের তালেতালে অশ্লীল নৃত্য। আবার কোথাও চলছে র্যাফল ড্র। সেখানকার অধিকাংশ দর্শকই যুবক ও স্কুলশিক্ষার্থী।
এলাকাবাসী জানান, যুগ যুগ ধরে চাঁপাইগাছীতে চলে আসছে ঐতিহ্যবাহী গাজী কালু চম্পাবতীর মেলা। অতীতে এ মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিল তালের শাঁস। কিন্তু এ বছর ব্যতিক্রম। মেলার নাম করে এবার র্যাফল ড্র, অশ্লীল নৃত্য, জুয়াসহ নানা অসামাজিক কার্যকালাপ পরিচালিত হচ্ছে। এতে একদিকে মানুষ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে ধ্বংস হচ্ছে শিক্ষা ও সমাজ।
এলাকাবাসী আরও জানান, ১৬ মে থেকে মেলার অনুমতি পেয়েছে আয়োজক কমিটি। কিন্তু মেলা চলছে ১৪ মে থেকে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন অপকর্ম চলতে পারে না। সমাজ ও দেশের স্বার্থে এসব অসামাজিক কর্ম বন্ধ হওয়া দরকার। কিছু মানুষের স্বার্থে পুরো সমাজটা নষ্ট হতে পারে না।
এ বিষয়ে মেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান মিজান বলেন, অনুমতি নিয়েই মেলা চালানো হচ্ছে।
জগন্নাথপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আজম হান্নান বলেন, করোনাকাল কাটিয়ে মানুষ কেবল ঘুরে দাঁড়ানো শুরু করেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা শুরু হয়েছে। কিন্তু মেলার নাম করে চাঁপাইগাছীতে যা হচ্ছে, তা মেনে নেওয়ার মতো নয়। এতে মানুষ আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে যুবসমাজ। ধ্বংস হচ্ছে শিক্ষা ও শিক্ষার্থী। এতে এলাকায় বাড়বে অপরাধ।
তিনি আরও বলেন, কিছুসংখ্যক লোকের ব্যক্তিগত স্বার্থে এমন অবৈধ কার্যকালাপ চলতে পারে না। প্রশাসনকে গুরুত্বসহকারে এগুলো দেখা উচিত। অবৈধ এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জন্য তিনি অনুরোধ জানান।
কুমারখালী নাগরিক কমিটির সভাপতি মো. আকরাম হোসেন বলেন, ছোটকাল থেকে শুনে আসছি চাঁপাইগাছীতে তালশাঁসের মেলা বসে। এবার চলছে জীবন্ত পুতুলনাচ, জুয়া, লটারি। যা অত্যন্ত অসামাজিক ও আইনবিরোধী। এ ব্যাপারে প্রশাসনের নীরব ভূমিকা কাম্য নয়। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সমাজটা নষ্ট হয়ে যাবে।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, মেলায় কী হচ্ছে আমার জানা নেই। তবে অবৈধ কোনো কিছুর অনুমোদন নেই। বিষয়টি জেলা প্রশাসন দেখছে। তবে অশ্লীল বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডল বলেন, আগামী ৩১ মে পর্যন্ত মেলার অনুমতি রয়েছে। তবে সেখানে অবৈধ কোনো কিছুর অনুমোদন নেই। তিনি আরও বলেন, ১৬ মে থেকে মেলার অনুমতি থাকলেও মেলা চলছে আরও আগে থেকে। কবিগুরুর জন্মোৎসব অনুষ্ঠানের জন্য অন্যদিকে তেমন নজর দেওয়া হয়নি। তবে এখন শক্তহাতে দমন করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মেলায় অশ্লীল নৃত্য, জুয়া, ভাগ্য পরিবর্তনের লটারি বা কোনো অবৈধ কার্যকালাপের অনুমতি নেই। গতকাল (সোমবার) কথা বলেছি। এগুলো বন্ধ না হলে আজ (মঙ্গলবার) অ্যাকশনে যাব। মেলা বন্ধ করে দেওয়া হবে।