কুষ্টিয়ার ১৮ কোটি টাকার টেন্ডার জিম্মি করতে জাসদ গণবাহিনীর সন্ত্রাসী তান্ডবে সংঘটিত দেহথেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ত্রিপল হত্যার অভিযোগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) থানায় করা মামলায় ৩জনের আমৃত্যু ও ৮জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডসহ অর্থদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালহত। মঙ্গলবার দুপুর ১টায় কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ অতিরিক্ত আদালত-১এর বিচারক তাজুল ইসলাম জনাকীর্ণ আদালতে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামীদের অনুপস্থিতিতে এই রায় দেন।
আমৃত্যুদন্ড হলেন- সদর উপজেলার পুলতাডাঙ্গা গ্রামে আসকর সরদারের ছেলে ফারুক সরদার, পশ্চিম আব্দালপুর গ্রামের ইছাহক আলী মাস্টারের ছেলে কালু ওরফে আলী রেজা এবং কুষ্টিয়া শহরের আড়–য়া পাড়া ২নং মসজিদ গলি এলাকার কাল মজনুর ছেলে রোহান।
যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্তরা হলেন- ভেড়ামারা বাহাদুরপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত খোরশেদ মন্ডলের ছেলে ১. ফারুক মন্ডল, ঝিনাইদাহের ভায়না গ্রামের জাবেদ আলীর ছেলে ২. আলতাফ মেম্বর, জলিল সেখের ছেলে ৩. লিয়াকত হোসনে, এসেম সেখের ছেলে ৪. মনোয়ার হোসেন, মৃত: আনছার সেখের ছেলে ৫. আকাউদ্দিন, করিমপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত ওয়াহেদ আলী জোয়ার্দারের ছেলে ৬. জহির উদ্দিন জোয়ার্দার, খোর্দ বাখইল গ্রামের বাসিন্দা আবু বক্কর মন্ডলের ছেলে ৭. নরুল এবং মাছপাড়া গ্রামের মৃত: উম্মাদ মন্ডলের ছেলে ৮. খাকচার মন্ডল।
আদালতের মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ৯ আগষ্ট রাতে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার সোনাইডাঙ্গী গ্রামের মাঠের মধ্যে বংশীতলা গ্রামের শামসুল আলম জোহা(৪৫), ভবানীপুর গ্রামের আকবর আলীর ছেলে কাইয়ুম শাখাওয়াতী(৫৫) আয়ুব আলী নামের তিনজনকে পিচমোড়া বেধে ধারালো অস্ত্রদ্বারা জবাই করে দেহ হতে মস্তক বিচ্ছিন্ন করে ঘটনাস্থলে মস্তকবিহীন দেহ ফেলে রেখে প্রায় ১৬কি:মি: দুরুত্বে কুষ্টিয়া শহরের সড়ক ভবন ও গণপূর্ত ভবনের গেটে তিন নিহতের মাথা ঝুলিয়ে রাখে। এঘটনায় নিহত শাসসুল আলম জোহার স্ত্রী মোছা: মমতাজ খাতুন বাদি হয়ে ৯জনের নামোল্লেখসহ আরও ৪/৫জন অজ্ঞাত এবং নিহত কাইয়ুম শাখাওয়াতীর ছোট ভাই আব্দুল হাই বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে ইবি থানায় হত্যা মামলা করেন।
মামলা দুটি তদন্ত শেষে ২০১০ সালের ২৭অক্টোবর দন্ডপ্রাপ্ত আসামীগণসহ মোট ২২জনের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরে ১৮ কোটি টাকার টেন্ডার জিম্মি করণের উদ্দেশ্যে চা ল্যকর ও মর্মান্তিক এই ত্রিপল হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে এমন অভিযোগ এনে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন ইবি থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক গোকুল চন্দ্র অধিকারী।
কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি এ্যাড. অনুপ কুমার নন্দী জানান, পুলিশের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে বিজ্ঞ আদালত দীর্ঘ স্বাক্ষ্য শুনানী শেষে ১১আসামীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমানিত হওয়ায় এদের মধ্যে অপরাধের ভিন্নতা মাত্রা ভেদে ৩জনের আমৃত্যু এবং ৮জনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডসহ প্রত্যেকের পৃথক ভাবে ২৫হাজার টাকা করে অর্থ দন্ডাদেশ অনাদায়ে আরও ১বছরের সাজা দন্ডাদেশ দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত। সেই সাথে চার্জশীটভুক্ত অপর ১১জন আসামীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় তাদের বে-কসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।
এই রায় ঘোষনার সময় বিজ্ঞ আদালতের পর্যবেক্ষনেও বলা হয়েছে, আসামীরা জাসদ গণবাহিনীর নেতাকর্মী, আন্ত:জেলা অপহরণ, খুন, চাদাবাজীসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত সংঘবদ্ধ চক্র ও অভ্যাসগত অপরাধী বিবেচনায় তারা হত্যাকান্ডের পর দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে নৃশংসভাবে কঠিন পন্থা অবলম্বন করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির কারণ ঘটিয়েছিলো বলেও সরকারী এই কৌসুলি উল্লেখ করেন। সেই সাথে রায় ঘোষনাকালে দন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা সবাই পলাতক থাকা প্রসঙ্গে পিপি বলেন, দন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আসামী আইন শৃংখলা বাহিনীর সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে এবং কেউ কেউ এখনও বেঁচে থাকলেও পলাতক আছেন।