কুষ্টিয়ার শিলাইদহে জাতীয় পর্যায়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
রবিবার (২৫ বৈশাখ ১৪২৯/৮ মে ২০২২) বিকাল সাড়ে ৩টায় কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী থানাধীন শিলাইদহ ইউনিয়নের রবীন্দ্র কুঠিবাড়ির পাশেই জাতীয় পর্যায়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে রবীন্দ্রনাথের জীবনী এবং বাংলা সাহিত্যে তার যে অবদান সেই বিষয় নিয়ে প্রাণবন্ত বক্তব্য রাখেন। তিনি তার বক্তব্যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলাইদহে অবস্থানকালীন সময়ে যে সমস্ত কবিতা, সাহিত্য, গান লিপিবদ্ধ করেছিলেন সে বিষয়েও বিস্তারিত বক্তব্য রাখেন। এর আগে প্রধান অতিথি শিলাইদহের রবীন্দ্র কুঠিবাড়ির পুকুরের পাশে রাস্তার ধারে একটি বকুল গাছ রোপণ করেন। প্রধান অতিথি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি হেলিকপ্টার যোগে কুষ্টিয়ায় আগমন করলে পুলিশ সুপার কুষ্টিয়া মোঃ খাইরুল আলম স্পিকার মহোদয়কে ফুলেল শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। স্পিকার মহোদয় ৩ঃ৩০ ঘটিকায় কুষ্টিয়া সার্কিট হাউস পৌঁছালে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের একটি সুসজ্জিত পুলিশ দল বিউগল বাজিয়ে অনার গার্ড সালাম ও অভিবাদন প্রদান করেন।
জাতীয় পর্যায়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন কে এম খালিদ এমপি ও প্রতিমন্ত্রী, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
এসময় প্রধান অতিথি ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি বলেন, ‘কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহের রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি যেখানে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার জীবনের অনেকখানি সময় এই শিলাইদাহ কুঠিবাড়িতে কাটিয়েছেন, কবির স্মৃতি বিজড়িত এই শিলাইদহের কুঠিবাড়ি আজও তার স্বাক্ষ্য বহন করে, এবং রবীন্দ্রনাথের অসংখ্য রচনাবলী তিনি এখানে বসেই লিখেছেন, কাজেই এর ঐতিহ্য এবং গৌরব সত্যিই বিরল। আমরা গর্ব অনুভব করি, যে আমাদের বাংলাদেশের মধ্যেই এই শিলাইদহ কুঠিবাড়ি রয়েছে। এবং অবশ্যই এই রকম একটি স্থান যেটি রবীন্দ্রনাথের জীবনে অনেক গভীর দার্শনিক চিন্তার স্থল ছিলো। এটা নিশ্চয় আমাদের বাংলাদেশের মানুষ এবং বিশে^র অন্যান্য দেশের মানুষও যাতে এখানে এসে দেখতে পারে এবং জানতে পারে এবং সেই সাথে যারা এবিষয়গুলি নিয়ে গবেষনা করতে চান, তাদের জন্য প্রাসঙ্গিক সুযোগ সৃষ্টি করতে পারা যুগোপযোগী প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। আমি বিশ্বাস করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেখ হাসিনার সেতৃত্বে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় এবং ব্যক্তিবর্গ যারা আছেন তারা যথাযথ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে আমি মনে করি, তারা নিশ্চয় যথাযথ গুরুত্ব অনুধাবন করেই সঠিক উদ্যোগটি গ্রহন করবেন। যাতে এখানে অধীর আগ্রহ নিয়ে যারা আসবেন তারা যেনো তাদের প্রত্যাশার খুধা মেটাতে পারেন সে বিষয়গুলি নিয়ে তারা কাজ করছেন বলে আমি বিশ্বাস করি। এবং আমি আবারও কুষ্টিয়া কুমারখালীর মানুষের পক্ষ থেকে সেই অনুরোধ করছি।” এর আগে তিনি রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক বকুল তলার পুকুর পাড়ে একটি বকুল গাছের ছার রোপন করেন।
আলোচনা সভার সমাপনীতে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম।
এসময় মে উপস্থিত সাংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনায়লয়ের সচিব মো: আবুল মনসুর বলেন, দীর্ঘ দুই বছর করোনা সংকটে নিষ্প্রান কুঠিবাড়িতে আমরা মহান এই কবির জন্মদিন উদ্যাপন করতে পারিনি। তবে এবার আমরা সর্বোচ্চ আয়োজনের মধ্যে দিয়ে ১৬১তম দিবসটি উদ্যাপন করছি।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে গোটা বিশ্ব দরবারে গৌরবের আসনে উত্তীর্ণকরণের প্রধান পুরোধা অনবদ্য রচনা সমগ্র সম্পাদনে সোনার তরী, গীতাঞ্জলীসহ অসংখ্য কাব্য, গান, ছোট গল্প, নাটক, উপন্যাস, প্রবন্ধ লিখেছেন বিশ^ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার রচনাতীর্থ কুষ্টিয়ার শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে।
রবীন্দ্র গবেষক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সনৎ কুমার সাহা তার স্মারক বক্তব্যে বলেন, “রবীন্দ্রনাথ মাত্র ১৫বছর বয়সে এই কুঠিবাড়িতে এসেছিলেন ১৮৭৫ খৃষ্টব্দে। তার পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে এই শিলাইদহে পাঠানো হয়েছিল মূলত: পৈতৃক জমিদারী দেখাশুনার জন্য। তবে তখনও বর্তমানের আদলে কুঠিবাড়ি প্রতিষ্ঠা পায়নি। প্রারম্ভিক কালে সেটি ছিল পুরানো একটি নীল কুঠি যা ইতোমধ্যে পদ্মা নদীর গর্ভে বিলীন। এসময় তিনি অবস্থান করেন জমিদারি দেখাশুনার অত্রা লের কাচারীতে। কিন্তু জমিদারিত্ব এবং প্রজাসত্ত্বের মাঝে বিবদমান ব্যবধান তাকে ব্যাথিত করেছিল। সেকারণেও তিনি আরও বেশী মনোযোগী হয়ে উঠেন তার সাহিত্য প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটাতে। ১৫বছর বয়সে এই শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে বসে রচিত রবীন্দ্রনাথের প্রথম কাব্য ıবনফুল’ প্রকশিত হয়। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের এমন কোন শাখা প্রশাখা নেই যেখানে তার লেখনী বিচরণ নেই। আর এর সবই সম্পন্ন হয়েছে তার স্মৃতি বিজড়িত শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে। তার সাহিত্য কর্মের সিংহভাগ সময় প্রায় তিন যুগ ধরে অবস্থানকালীন সময়ে শেষে ১৯১১ খৃষ্টাব্দে কোলকাতার বলপুরে বিশ^বিখ্যাত শান্তি নিকেতন এবং বিশ^ ভারতী বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তৎকালীন বিশ^ রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিমন্ডলে বিপর্যন্ত মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে রচনা করেন তার অনবদ্য ıগীতাঞ্জলী’ কাব্য গ্রন্থ যা বিশ্বের কয়েকটি ভাষায় অনুদিত হয়ে গোটা বিশ্বের মানুষের মাঝে সাড়া জাগিয়েছিল। তার ফলস্বরূপ এই গীতাঞ্জলী কাব্যগ্রন্থে তিনি ১৯১৩সালে নোবেল প্রাপ্ত হন। অত:পর বাঙালীর হৃদয়ে শোকের বারি ঝড়িয়ে ১৯৪১ খৃষ্টাব্দের ৭আগষ্ট কোলকাতা জোড়াসাঁকো নিজ গৃহে শেষ প্রয়াণে সমর্পিত করেন। মৃত্যুকালে তিনি পিছন ফেলে যান তার বর্ণাঢ্য স্মৃতি বিজড়িত ৮০টি বছর। কবি তার জীবদ্দশার সিংহ ভাগ স্বর্ণালী সময়ে কেবলমাত্র একজন সাহিত্য রচয়িতাই নয়; বরং অসহায় বি ত প্রজাসাধারনের মাঝে ব না মুক্তির দূত হয়ে আবির্ভুত হয়েছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক হিসেবেও। সেকারণে বিশ^ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং শিলাইদহ কুঠিবাড়ি এক ও অভিন্ন সত্ত্বার আধার হয়ে চির ভাস্বর হয়ে আছেন।
১৯১৩সালে সাহিত্যে নোভেল বিজয়ী বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চরণধন্য শিলাইদহের কুঠিবাড়ি এবং রবীন্দ্রনাথ এক এবং অভিন্ন সত্তা।’
রবিবার দুপুরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে শুরু হওয়া তিনদিনের এই আয়োজন চলবে আগামী ১০মে,২০২২ ইং এবং বাংলা ২৭ বৈশাখ, ১৪২৯ তারিখ মঙ্গলবার পর্যন্ত। এই আয়োজনকে ঘিরে একদিকে রবীন্দ্র প্রেমীদের উচ্ছসিত পদচানায় মুখরিত কুঠিবাড়ি চত্বর অন্যদিকে সাজ সাজ উৎসবকে প্রানবন্ত মাত্রা যুক্ত করেছে গ্রামীন মেলার বিকিকিনি।