কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ঝাউদিয়া ইউনিয়নের আস্তানগর গ্রামে আওয়ামী লীগ সমর্থিত দু’পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ৪ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আতঙ্কে থমথমে জনশুন্য গোটা এলাকায় বিষাদময় ঈদানন্দে যুক্ত হয়েছে শোকার্ত আহাজারি। মঙ্গলবার দুপুরের পর ময়না তদন্ত শেষে নিহতদের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। বিকেল সাড়ে ৫টায় বৈরি আবহাওয়ার মধ্যেই স্থানীয় আস্তানগর কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এঘটনায় এখনও কেউ মামলা করতে আসেনি থানায়, তদন্ত শুরু, জিজ্ঞাসাবাদে ৭জনকে আটক করেছে পুলিশ। নিশ্চিত করেছেন ইবি থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান রতন। ঘটনা তদন্তে কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার খায়রুল আলম সহ পুলিশের বিভিন্ন ক্রাইম ইউনিট ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
গতকাল সোমবার বিকেল থেকে প্রায় দুই ঘন্টাকাল ধরে পূর্ব থেকে স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিবদমান দ্বন্দের জেরে আ’লীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় ৪জন নিহত ও ১০জন আহত হয়েছে। সংঘটিত এই সংঘর্ষের উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে কয়েক রাউন্ড ফাকা গুলি বর্ষনসহ টিয়ারসেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এলাকায় শান্তি শৃংখলা রক্ষায় অিিতরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান রতন।
নিহতরা হলেন- স্থানীয় আস্তানগর গ্রামের বাসিন্দা মৃ: আজিজুল হকের ছেলে মতিয়ার রহমান (৪৫), দাউদ মন্ডলের ছেলে লাল্টু মন্ডল(৪২), মৃত: হোসেন মন্ডলের ছেলে আবুল কাশেম(৬৫) এবং ;মৃত: আবুল মালিথার ছেলে আব্দুর রহিম মালিথা (৭০)। প্রথম তিনজন বর্তমান ঝাউদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা মেহেদী হাসান সমর্থক এবং আব্দুর রহিম মালিথা প্রতিপক্ষ সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি কেরামত আলীর সমর্থক।
পুলিশ ও স্থানীয় প্রত্যদর্শী সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ০৯ নং ঝাউদিয়া ইউনিয়নের সদ্য নির্বাচিত যুবলীগ নেতা (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী) মেহিদী হাসান এবং ঝাউদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও একই ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কেরামত আলীর সমর্থকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই আধিপত্য বিস্তার ও জমাজমি, ধর্ম প্রতিষ্ঠানসহ সরকারী জলমহাল দখল পাল্টা দখলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট দ্বন্দ বিদ্যমান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় বাসিন্দা ও অবসরপ্রাপ্ত জনৈক এক স্কুল শিক্ষক বলেন, “ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক প্রভাব ও পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে প্রায়ই স্থানীয়দের মধ্যে দ্বন্দসংঘাতের ঘটনায় হামলা পাল্টা হামলা, ভাংচুর লুটপাটসহ দুই দশকে অর্ধশতাধিক হত্যকান্ডের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, তারই ধারাবাহিক ঘটনার সাথে যুক্ত হয়েছে সোমবারের ঘটনাটি। রমজান মাসের সংযম থেকেও আমাদের কোন শিক্ষা হয়নি। বছরের এইদিনটিতে আনন্দ উৎসবের স্থলে স্বজন হারানোর বিষাদময় শোকার্ত পরিবেশে গোটা এলাকা ভারী হয়ে উঠেছে। সংকটময় এই পরিস্থিতির সত্যিই কোন অবসান করতে চাইলে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সদিচ্ছা ব্যতীত কোন বিকল্প পথ নেই।”
সোমাবারের সংঘর্ষের সংবাদ পেয়ে ইবি থানা পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে জরুরী বিভাগের কর্তৃব্যরত চিকিৎসক ৪জনকে মৃত ঘোষনা করেন। এছাড়া হাসপাতালে ভার্তি হয়ে চিকিৎসাধীন ১০জনের মধ্যে দুইজনের অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক বলে জানান ২৫০শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: আশরাফুল আলম।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ইবি থানার পুলিশ পরির্দশক মোস্তাফিজুর রহমান রতন জানান, স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার ও জমিজমা সংক্রান্ত দ্বন্দের জেরে কেরামত আলী সমর্থক ও মেহেদী হাসান সমর্থক ফজলু মন্ডলদের মধ্যে পূর্ব থেকেই উত্তেজনা চলছিল। সোমবার বিকেলে দ্ইু পক্ষের সংঘর্ষের সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের কয়েক রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এখন পরিস্থিতির পুলিশের নিয়ন্ত্রনে। হত্যাকান্ডের ঘটনায় এখনও কেউ কোন অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এঘটনায় যারাই জড়িত থাক তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
তবে সংঘর্ষের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী হাসানের মুঠোফোনে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
ঝাউদিয়া ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি কেরামত আলীর মুঠোফোনে কথা বলার সময় তিনি জানান, বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বশত: তার সর্মথক ফজলু মন্ডলের নেতৃত্বে লোকজনদের লেলিয়ে দিয়ে আমার বডিগার্ড রফিকুলের পিতা রহিম মালিথাকে হত্যা করেছে। এই হত্যা কানেডর অভিযোগে ইবি থানায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।