কেউ কথা রাখেনি
তিন দশকেও বাস্তবায়ন হয়নি কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ সরকারীকরণ প্রতিশ্রুতি
৩০ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমা খুলনা বিভাগের সর্ববৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ সরকারীকরণের প্রতিশ্রুতি। তিন দশক ধরে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন সব রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের প্রতিশ্রুত এই দাবিটি অবহেলিত আজও। অথচ এই দাবি বাস্তবায়নের কথা বলে ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দ অবকাঠামো উন্নয়নের নামে কার্যত: কলেজ ভবনগুলিতে মার্কেট নির্মাণ করে নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থ সিদ্ধির ষোল কলা পূর্ণ করলেও কলেজ সরকারিকরণে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বর্তমান সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের সব উপজেলাসহ গুরুত্বপূর্ণ কলেজ গুলো সরকারীকরণ শুরু হওয়ায় আবারও নতুন করে বুক ভরা আশা নিয়ে দাবির বাস্তবায়ন চান কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থী কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্টরা।
১৯৬৮ সালে তৎকালীন কুষ্টিয়ার এস ডি ও মি: ইয়াহিয়া ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের প্রচেষ্টায় প্রায় ৪একর জমির উপর ৯৫ কক্ষ বিশিষ্ট বিশাল অবকাঠামো নিয়ে দাড়িয়ে আছে কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ। সরকারী করনের যথেষ্ট সহায়ক পরিবেশ থাকলেও এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি সরকারী নীতি নির্ধারকগণের সু-দৃষ্টির অভাবে সুযোগ বি ত হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। কুষ্টিয়া শহরের প্রধান সড়ক নবাব সিরাজদৌলা সড়কস্থ মজমপুর মৌজার থানাপাড়ায় প্রতিষ্ঠিত এ কলেজটিতে বর্তমান ১২৪ জন শিক্ষক এবং প্রায় সাড়ে ৫হাজার শিক্ষার্থী।
বাংলা, রাষ্ট্র বিজ্ঞান, দর্শন, সমাজ বিজ্ঞান, অর্থনীতি, ইসলামের ইতিহাস, ইতিহাস, হিসাব বিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, মার্কেটিং এবং ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিংসহ ১২টি বিষয়ে অনার্স কোর্স এবং বাংলা, রাষ্ট্র বিজ্ঞান, দর্শন, সমাজ বিজ্ঞান ও অর্থনীতিসহ ৫টি বিষয়ে মাষ্টার্সসহ স্নাতক (পাস কোর্স) পর্যায়ে বিজ্ঞান, বানিজ্য ও কলা বিভাগ চালু আছে। এছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদেরও এখানে ভর্তি নেয়া হয়।
ঐতিহাসিক পেক্ষাপট : ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ এই কলেজ চত্বরেই তৎকালীন সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ স্বাধীণ বাংলার মানচিত্র সম্বলিত জাতীয় পতাকা সর্ব প্রথম উত্তোলিত হয়। কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর হতে বেশ কয়েকবার সরকারীকরনের প্রারম্ভিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু সেই প্রক্রিয়াটি কার্যকর ভাবে এগোইনি বেশী দুর। দেশের সমস্ত বৃহত্তর জেলা সদরে (সাবেক ১৯ জেলা) উচ্চ মাধ্যমিক ও অনার্স শ্রেনীর জন্য ৪ কিংবা ততোধিক সরকারী কলেজ থাকলেও এক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত চরম বৈষম্য ও অবহেলিত কুষ্টিয়াবাসী।
কুষ্টিয়া সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, সরকারী গার্লস কলেজ এবং সেন্ট্রাল কলেজ(সাবেক গভ: কামার্শিয়াল কলেজ)ই জেলাবাসীর ভরসা। এ কারনে কুষ্টিয়া সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে স্নাতক ডিগ্রী, অনার্স ও মাষ্টার্স কোর্সের শিক্ষার্থীদের পাঠদানে নানামুখী সংকুলান থাকা সত্তে¡ও সেখানে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হয় অনেকটাই বাধ্য হয়ে। এতে আবাসন সংকটের পাশাপাশি শিক্ষার পরিবেশ বিঘিœত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। জেলার উচ্চ মাধ্যমিক থেকে ¯œাতকোত্তর পর্যায় পর্যন্ত মান সম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব ও সংকট নিরসনে দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষার্থী অভিভাবকদের দাবি উপেক্ষিত হয়ে আসছে বলে মনে করেন জেলাবাসী।
কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও কুষ্টিয়া জেলা উন্নয়ন সমšয় কমিটির সদস্য হাজি গোলাম মহসিনের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠাকালের ব্যাপ্তি, ভূ-সম্পত্তি, অবকাঠামোসহ একটি পূর্নাঙ্গ কলেজ প্রতিষ্ঠার সকল প্রাসঙ্গিকতা থাকা সত্তে¦ও কলেজটি সরকারীকরণ বাস্তবায়নে কোন অগ্রগতি হয়নি। বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্র ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলির(বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি)র শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জনপ্রতিনিধিরা কলেজটিকে সরকারীকরণের রঙিন ফানুসের প্রতিশ্রæতি দিয়ে নানা ঠকবাজির আশ্রয় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে রূপ দিয়ে নিজেরা স্বার্থসিদ্ধি করলেও তাদের প্রতিশ্রæত সরকারীকরণের উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুষ্টিয়া ইসলামিয় কলেজের অবসর প্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক পর্যায়ের শিক্ষক আক্ষেপ করে বলছিলেন, “স্বাধীনতাত্তোরকালে উন্নয়ন বি ত কুষ্টিয়ায় দীর্ঘ ৩৬ বছর পর মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সমর্থিত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন কুষ্টিয়ার ৪টি আসনেই। এতে দীর্ঘদিনের ব নামুক্তির প্রত্যাশার মাত্রা শতগুন বেড়ে যায় জেলাবাসীর। ১৯৯৩ সালে কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ মাঠে এক জনসভায় আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলাবাসী এই দাবির সাথে একাত্মতা ঘোষনা করেন এবং ক্ষমতায় গেলে কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ সরকারী করনের ওয়াদা করেন। এছাড়াও তিনি বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবে তৎকালীন সময় মহান জাতীয় সংসদে এই কলেজটি সরকারীকরণের জোড়ালো দাবী তোলেন। অথচ মহাজোটের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের রাষ্ট্র ক্ষমতার ১৭বছর অতিক্রান্ত হলেও দাবি বাস্তবায়নে দেয়া প্রতিশ্রæতি আলোর মুখ দেখেনি আজও।
একইভাবে ১৯৯২ সালে কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ মাঠে বিএনপির এক জনসভায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের নিকট কলেজটি সরকারী করনের দাবী তুললে তিনি পর্যায়ক্রমে অনুমোদনের আশ্বাস দেন। বিগত জোট সরকারের আমলে সদর আসনের সাংসদ আলহাজ্ব অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দীন জাতীয় সংসদেও কলেজটি সরকারী করনের দাবী উত্থাপন করেন। সে সময় নানা গুঞ্জন শোনা গেলেও এক সময় হাওয়ায় মিলিয়ে যায় আশার বানী। ওই সময়টাতেই মূলত: কলেজের ভু-সম্পত্তির অপব্যবহার সূচনার মধ্যে দিয়ে কলেজ মাঠের চারিধারে বিশালাকৃতির বানিজ্যিক ভবন তৈরি করে লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিনত করেছেন ওই স্বার্থন্বেষী মহল। সেই থেকে শুরু করে অদ্যবদি কলেজের জায়গা জমি অবকাঠামো লুটপাটের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত আছেন রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহল। সবই শুধু চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার নেই বলে আক্ষেপ ওই সাবেক শিক্ষকের।
এবিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দীন বলেন, “বর্তমান কুষ্টিয়ার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার অনুকুল পরিবেশ ধ্বংস করে সেখানে বানিজ্যিক ভবন করে তা ভাগাভাগির মহোৎসবে লিপ্ত হয়েছে ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতা বহির্ভুত রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহল। এই আগ্রাসন থেকে প্রতিষ্ঠানগুলি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। শিক্ষা ধ্বংসের এই হীণ চক্রান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাই”।
কুষ্টিয়া সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কে এইচ রশিদুজ্জামান দুদু মহান জাতীয় সংসদে কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজকে সরকারীকরণে দাবী তুললে বিষয়টি সংসদীয় কার্যপ্রণালিতে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে মর্মে একটি চিঠি কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজে প্রেরণ করলে এখানকার স্বপ্নবাজ শিক্ষক শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টরা আবারও স্বপ্নবিভোর হয়ে উঠেন। কিন্তু আকস্মিকভাবে এই সংসদ সদস্য অসুস্থ্য হয়ে পড়ায় বিষয়টি আর বেশী দূর এগোয়নি।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সাবেক ছাত্র নেতা ও কলেজের গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কুষ্টিয়া জেলার সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী বলেন, “আমি ব্যথিত, আমি লজ্জিত, আমি দু:খিত যে বর্তমানে রাষ্ট্রের যোগ্যতম শিক্ষিত জাতি গড়ার কারখানা খ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি এখন আর সত্যিকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভাবমুর্তি হারিয়ে সেখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের রূপলাভ করেছে। সেখানে স্বার্থন্বেষী মহলের লুটপাটের প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে। দৃশ্যত: এখন যে চিত্র বিদ্যমান তাতে মনে হয় যে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না রেখে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দেয়া হোক। বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার বিবেচনায় ব্যাপক কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়ন করছেন। কুষ্টিয়া জেলাবাসীর পক্ষ থেকে কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজটি সরকারীকরণে দাবিটিকে বিশেষ গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিবেন বলে বিশ্বাস করি”।
প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মো: নওয়াব আলী বলেন, “এক সময় প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নানাবিধ সমৃদ্ধির লক্ষ্যে দাবি তুলতো শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীরা নানা কর্মসূচী পালন করতো। পর্যায়ক্রমে সেই দাবিও বাস্তবায়নে সংশিষ্ট উর্দ্ধতন মহল সাড়া দিতেন। এখন সেই গঠনমূলক ছাত্র সংগঠন নেই বলেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির শিক্ষা মনোরম পরিবেশ ও অবকাঠামো উন্নয়নের দ্বার অনেকটাই রুদ্ধ। পরিশেষ কথা হলো আমরা আর প্রতিশ্রুতির ঘোরে থাকতে চাইনা; বরং ইতোপূর্বে দেয়া কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ সরকারীকরনের প্রতিশ্রæতির বাস্তবায়ন দেখতে চাই”।
উপদেষ্টা মন্ডলীর সভাপতি: মো: হাসান আলী
প্রধান উপদেষ্টা: মোঃ ওবাইদুর রহমান
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: খালিদ সাইফুল
নির্বাহী সম্পাদক: রাশিদুল ইসলাম
নির্বাহী সম্পাদক: মিজানুর রহমান
বার্তা সম্পাদক: আব্দুল কাদের
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: লাল মোহাম্মদ সড়ক, হাটশ হরিপুর নদীরকুল, কুষ্টিয়া-৭০০০।
মোবাইল : ০১৮১৫-৭১৭০৩৪ । ইমেইল : khalidsyful@gmail.com ।
ই-পেপার কপি