খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ‘সংকটাপন্ন’
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন। তাঁর শারীরিক নানা জটিলতার মধ্যে এই মুহূর্তে লিভারের সমস্যাই সবচেয়ে প্রকট বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি জানান, মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের পরামর্শ হচ্ছে, খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে বিদেশে কোনো ‘অ্যাডভান্স সেন্টারে’ নেওয়া প্রয়োজন। কারণ, এখানকার হাসপাতালগুলো যথেষ্ট যন্ত্রপাতিসমৃদ্ধ নয়। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা জার্মানির কোনো হাসপাতাল হতে পারে।
মির্জা ফখরুল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপি বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় দলীয় প্রধানের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে এসব তথ্য জানান।
এদিকে বিএনপির আইনজীবীদের একটি প্রতিনিধিদল খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে তাঁর সচিবালয়ের কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা মন্ত্রীকে একটি স্মারকলিপি দেন। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবিতে বুধবার সারা দেশে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেবে বিএনপি।
সন্ধ্যায় মতবিনিময় সভায় বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দায়িত্ব নিয়েই বলছি, তাঁর (খালেদা জিয়া) অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন। অতি দ্রুত তাঁকে বিদেশে পাঠানো জরুরি। চিকিৎসকেরাও বারবার বলছেন, তাঁকে বিদেশে কোনো অ্যাডভান্সড সেন্টারে চিকিৎসা প্রয়োজন।’
খালেদা জিয়া সম্পর্কে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে মন্ত্রীদের বক্তব্যে অসন্তোষ জানান বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা ও তাঁর সাজা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। তাঁকে ন্যূনতম সম্মান তো দেওয়া হচ্ছেই না, উল্টো নানা কটূক্তি করা হচ্ছে, যা তাঁর প্রাপ্য নয়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল জানান, এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার মনোবল যথেষ্ট শক্ত আছে। তাই চিকিৎসকেরা আশাবাদী, তিনি সুস্থ হয়ে আবার ফিরে আসবেন।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিকভাবে তো প্রতিদিনই কথা বলছি। সব কথাই তো সরকারে পেশ হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে সাক্ষাৎ করার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি।’
খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে না পাঠালে বিএনপির সাংসদেরা পদত্যাগ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাঁদের সংসদ থেকে পদত্যাগের বিষয়টি দলীয় সিদ্ধান্ত। তাঁরা তো বিএনপির সংসদ সদস্য। দল যদি মনে করে, তাহলে তাঁরা পদত্যাগ করবেন।
বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা যাব না, এটা পরিষ্কার; যতক্ষণ নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচনের ব্যবস্থা না হয়। কারণ, এ ধরনের নির্বাচনের কোনো যুক্তি নেই, অর্থ নেই।’
আইনমন্ত্রীকে স্মারকলিপি
‘জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা’ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মানবিক দিক বিবেচনা করে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। আইনমন্ত্রীর হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্যসচিব মো. ফজলুর রহমান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন জয়নাল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, আহমেদ আজম খান, এ এম মাহবুব উদ্দিন, রুহুল কুদ্দুস, মাসুদ আহমেদ তালুকদার প্রমুখ।
স্মারকলিপিতে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১)-এর ধারামতে সরকার যেকোনো সময় শর্তহীনভাবে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে অথবা ৪০১-এর ৬ উপধারা মোতাবেক বিশেষ আদেশের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারে।
আইনজীবীরা মানবিক দিক বিবেচনা করে হলেও খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করার জন্য আইনমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন।
এ সময় আইনমন্ত্রী বলেন, তিনি ৪০১(১) ধারায় আলোচনায় যেতে চান না। যে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে, সেটি পরীক্ষা করে দেখবেন। এখানে সিদ্ধান্ত এবং মতামতের ব্যাপারে আলোচনার প্রয়োজন আছে। সেটাও করা হবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে একটু সময় দেন, এটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করব। কেউ জানে বেঁচে না থাকুক, সেটি আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমি এটি নিয়ে একটু আলাপ-আলোচনা করি…। যতটুকু গুরুত্ব দিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, সেভাবেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নেব।’