বছরের শুরুতেই ক্যাম্পাসে ফিরবেন কুষ্টিয়া মেডিকেলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
অবশেষে নানা ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে ২০১১ সালে অনুমোদন পাওয়া তিন বছরের নির্মাণ মেয়াদকে ৯বছরে পূর্ণ এবং ২শ ৭৫ কোটি টাকার প্রাক্কলন ব্যয় সম্প্রসারিত হয়ে ৬শ ৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মান প্রকল্প সম্পন্ন হচ্ছে। এরই মধ্যে আগামী নতুন বছরের শুরুতে প্রাণের ক্যাম্পাসে ফিরবেন কুষ্টিয়া মেডিকেলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির একাডেমীক কার্যক্রম শুরুর প্রয়োজনীয় অবকাঠামো একাডেমিক ভবন, ছাত্র ও ছাত্রী হোষ্টেলের অবকাঠামো নির্মানের মূল কাজ শেষ করে ফিনিসিং চলছে। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সরবরাহের কার্যাদেশ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান তাদের মালামাল সরবরাহের প্রস্তুতিও নিয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ নির্মান প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ডা: আমিনুল ইসলাম বলেন, অতীতে যা কিছুই হোক, আমরা আর পিছন ফিরে তাকাতে চাই না। আসছে নতুন বছরের শুরুতে আমাদের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা তাদের একাডেমিক কার্যক্রম মূল ক্যাম্পাসে করতে পারবেন এটা হবে আমাদের জন্য অনেক বড় প্রারম্ভিক অর্জন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এবছর অক্টোবরের মাঝামাঝি ৬শ ৮২ কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয় ধরে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ নির্মাণ প্রকল্পের ২য় উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি)র অনুমোদন লাভ করেছে। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত নির্মানকাল মেয়াদের মধ্যে প্রকল্পটির সকল নির্মান কার্যক্রম সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে কঠোর নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
প্রকল্পটির গণপূর্ত বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়নযোগ্য কাজগুলি সম্পন্ন করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪শ ৮৮ কোটি টাকা এবং বাকী ১শ ৯৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে একাডেমিক কার্যক্রমসহ আনুষঙ্গিক চিকিৎসা খাতের যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি বাবদ। শিক্ষার্থী রিফাতুল্লাহ বলেন, আমরা আমাদের ক্যাম্পাসে ফিরে যাচ্ছি এই মহাবানী অনেক বার শুনেছি। কিন্তু মাস ঘুরে বছর পেরিয়ে আমাদের সিনিয়ররা যেভাবে ক্যাম্পাসের স্বাদ বঞ্চিত হয়ে অপূর্নতা নিয়ে চলে গেছেন, আমরাও পূর্বসূরীদের অনুসরন করে প্রায় যাবার পথে। তবুও যারা থাকবে আগামী ১, ২, ৩, বা ৪ বছর পর্যন্ত এখানে থাকবে তারা অন্তত অপূর্নতা নিয়ে ফিরবেন না; এটাই বা কম কি।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন শিক্ষার্থী সায়মা যুথী বলেন, ‘শরীরের নাম মহাশয় যাহা সহাবে তাহাই সয়’ এই অনুভুতিকে ধারণ করে শত সহ¯্র কষ্ট ও বঞ্চনার বেদনা নিয়ে প্রায় শেষ করে ফেললাম জীবনের প্রান চাঞ্চল্যের মেডিকেল শিক্ষা জীবন। শিক্ষা জীবনে প্রানের ক্যাম্পাসের কোন স্বাদ পায়নি। তবুও বলবো আমাদের অনেক সৌভাগ্য। আগামী বছরের শুরুতে আমরা আমাদের মেডিকেল ক্যাম্পাস, হল জীবন, মুক্ত বাতাসে ঘুরাঘুরি উফ ভাবতেই খুব মাজ পাচ্ছি।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা: দেলদার হোসেন বলেন, আমার মন্তব্য জানতে চাইলে বলবো- ‘বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃ ক্রোড়ে’ প্রকৃত অর্থে যার যেখানে যে অবস্থায় থাকার কথা সেখানে কোন বিচ্যুতি ঘটলে যা হয়, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের চিকিৎসা শিক্ষা কার্যক্রমের ক্ষেত্রেও তেমনটিই হয়েছে। তবে সবশেষ কথা হলো- আমরা মূল ক্যাম্পাসে শিক্ষা মনোরম পরিবেশে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে যাচ্ছি এজন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানায়। একই সাথে জেলাবাসীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।
উল্লেখ্য, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সিমাহীন অনিয়ম দুর্ণীতি, সংশ্লিষ্ট গণপূর্ত বিভাগের অব্যবস্থাপনা ও অস্বচ্ছতার সাথে যুক্ত স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবে মুখ থুবরে পড়া নির্মানাধীন কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ প্রকল্পটির ২য় ডিপিপি অনুমোদনের জন্য এবছরের শুরুতে একনেক সভায় উপস্থাপন করা হলে একনেক সভাপতি প্রধানমন্ত্রী ক্ষব্ধ হন এবং আইএমইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। সেই থেকে প্রকল্পের চলমান নির্মান কাজ সম্পূর্নরূপে বন্ধ ছিলো।