হারিয়ে যাচ্ছে বন্ধুত্ব টুং, টাং শব্দে
লেখক:ওবাইদুর রহমান সুমন
——————————————-
পৃথিবীর সকল সম্পর্কের মধ্যে মধুর, আস্থা আর একই সাথে জটিল একটি সম্পর্ক হচ্ছে বন্ধুত্ব। বন্ধুত্ব আত্মার শক্তিশালী বন্ধন, যেখানে জড়িয়ে থাকে আবেগ, ভালোবাসা এবং ভরসা। বন্ধুহীন জীবন অনেকটা হাল ভাঙ্গা নৌকার মতো।
প্রায় চার হাজার বছর আগে ইতিহাসের পুরনো গ্রন্থ গিলগামেশ মহাকাব্যে গভীর বন্ধুত্বের নিদর্শন মেলে। প্রাচীন দার্শনিক অ্যারিস্টল তার ” নিকোমেকিয়ান এথিকস” এ বলেছিলেন, গভীর বন্ধুত্ব হচ্ছে সেটাই যখন কেউ তার বন্ধুর কল্যাণের প্রতি যত্মবান হয়। কোনো লাভের আশায় যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে না।
আনুগত্য প্রকাশের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা ও মানসিকতার বহিঃপ্রকাশই হল বন্ধুত্ব। বিশ্বস্তার সাথে দুঃসময়ে পাশে থাকায় বন্ধুত্ব। বন্ধুর ইচ্ছাকে সম্মান করে প্রকৃত শুভাকাঙ্ক্ষি হওয়ার মধ্য দিয়ে ভালো শ্রোতা হয়ে, সততার সাথে বন্ধুকে সময় দিয়ে বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখা।
নিজেকে মেলে ধরা যায় নিখুঁতভাবে সত্যিকারের বন্ধুর কাছে। বন্ধুর কাঁধে মাথা রেখে সকল আবেগগুলো ঢেলে দেওয়া যায়, ভ্রু কুঁচকানোর ভয় না পেয়ে। কাল কি, ফর্সা! লম্বা কি,বেটে! হিন্দু কি, মুসলমান! কিশোর কি, বৃদ্ধ! বিবাহিত, কি অবিবাহিত! তার উপর ভিত্তি করে বন্ধুত্ব হয় না। বন্ধুত্ব গড়ে উঠে সন্মান, আস্থা আর বিশ্বাসের উপর।
আবেগের মিলন স্থল হচ্ছে বন্ধু। বন্ধু কখনও শিক্ষক, কখনও সকল দুষ্টুমির একমাত্র সঙ্গী। মনের বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস, আবেগ আর ছেলেমানুষীর অপর নামই বন্ধুত্ব। যে সম্পর্ক থাকে সব বাঁধনের ঊর্ধ্বে।
আধুনিক জীবনে সব কিছু শেয়ার করা হচ্ছে একটা বিমূর্ত ব্যাপার। আধুনিক জীবন স্পন্দমান জীবনকে গ্রাস করে ফেলছে। বন্ধুত্ব, আধুনিক যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন রূপ নিয়েছে যা অবিশ্বাস আর মিথ্যার চাদরে ঢাকা। না আছে তার পূর্ণাঙ্গ পরিচয়, না বোঝা যায় তার মন-মানুষিকতা। এ যেন বন্ধুত্ব নয় অবসর সময় কাটানো আর বন্ধুত্ব নামক শব্দটিকে কলঙ্কিত করা।
ভাল লাগলে টুং,টাং শব্দ আর না লাগলেই আনফ্রেন্ড বা ব্লক। এভাবে চলতে থাকলে হয়তোবা এক যুগ পরে মানুষ ভুলে যাবে বন্ধুত্ব মানে আবেগ ঘন সম্পর্ক, বন্ধুত্ব মানে ভালো লাগা, বিশ্বাস আর ভালোবাসা। বন্ধুত্ব মানে, না বলা সকল কথা বলতে পারা। বন্ধুত্ব মানে অন্ধকার ঘুটঘুটে রাতে হাতটি ধরে অজানা পথ পাড়ি দেওয়া। বন্ধুত্ব মানে নির্দ্বিধায় মনের সব দুঃখ কষ্ট তার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া। তাই বন্ধুত্ব করতে হবে দেহ-মন, কলিজা দিয়ে। যেখানে থাকবে না কোন মিথ্যার আশ্রয় আর প্রশ্রয়। থাকবে কেয়ারিং আর অভিমানের স্বচ্ছ দেয়াল ভাঙ্গার প্রবণতা।