হাতে আঁকা পণ্যে রাবেয়া এখন ধন্য সফল উদ্যোক্তা
কুমারখালী প্রতিনিধি: চাকরির পাশাপাশি রাবেয়া খুব অল্প সময়ে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাকে সহায়তা করছে তার দুই বোন মৌসুমী এবং ইয়াসমিন।
রাবেয়া চাঁদনী। পেশায় আনসার ভিডিপি এর ওয়ার্ড দলনেত্রী হিসাবে কুমারখালী উপজেলায় কর্মরত আছেন। জন্মস্থান ও বেড়ে ওঠা কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে। কুমারখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি কুমারখালী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
‘Mousumis hand paints’ নামে হ্যান্ড পেইন্ট নিয়ে কাজ করা একটি প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী। এই প্রতিষ্ঠানের মূল সিগনেচার পণ্য হ্যান্ড পেইন্ট শাড়ি। এছাড়াও হ্যান্ড পেইন্টের কামিজ, পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, হিজাব, ইয়োক, গৃহসজ্জার জন্য হ্যান্ড পেইন্ট কুশন কভার, বেডশিট ও ওয়াল পেইন্টিং, সরা পেইন্টিং এবং গহনার মধ্যে সিগনেচার গহনা হ্যান্ডমেইড ক্লের তৈরি গহনা, বিভিন্ন মিডিয়ার উপর হ্যান্ড পেইন্ট এর কাজ করা গহনা ও মেটালের গহনা নিয়ে কাজ করছেন।
এই উদ্যোগের যাত্রা শুরুর গল্পটা জানালেন রাবেয়া, শুরু হয়েছিল ২৬ মার্চ, ২০১৮ সালে। উদ্যোগটি শুরু করার জন্য একটি বিশেষ দিনের অপেক্ষায় ছিলাম। এই বিশেষ দিনটি হলো “মহান স্বাধীনতা দিবস”।
রাবেয়া বলেন, হাতের কাজের কদর সবসময়ই থাকে এটা বলতেই হয়। কিন্তু আমার এই উদ্যোগ শুরু করার আগে আমি অনেকটা সময় নিয়ে বাজার বিশ্লেষণ করি। যার ফলে উদ্যোগের শুরু থেকেই খুব ভালো সাড়া পেয়েছি। কেননা ভিন্নধর্মী কাজের সংমিশ্রণ ঘটানোর চেষ্টা ছিল আমার। যার ফলে আমার প্রধান ক্রেতা মূলত নারীরা। বিশেষ করে ২৫-৪৫ বছর বয়সী নারী। যদিও আমরা চেষ্টা করছি নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই হ্যান্ড পেইন্ট এর বিভিন্ন মাধ্যমের উপর কাজের সংমিশ্রণ ঘটাতে। ভালো লাগার বিষয় এটি যে, আমাদের পুরনো ক্রেতার সংখ্যা অনেক বেশি।
আর্থিক লাভের কথাও জানালেন রাবেয়া। বর্তমানে অফ-সিজনে মাসে ১৫-২০ হাজার টাকা আর অন সিজনে ৪০-৫০ হাজার টাকার মতো বিক্রি হয়। আমাদের হাতের কাজের ধরন আমরা চাইলেও অতিরিক্ত অর্ডার নিতে পারি না। তবে বড় পরিসরে আমাদের উদ্যোগ পরিচালনার কাজ চলছে। এই কাজের চাহিদা দিন দিন ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নতুন উদ্যোক্তাদের প্রতি রাবেয়া পরামর্শ, নতুন উদ্যোক্তা যারা হ্যান্ড পেইন্ট নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী বা নতুন শুরু করেছেন তাদের জন্য বলবো হ্যান্ড পেইন্ট এর কাজের কদর বেশি থাকার মূল কারণ এই কাজ অন্য সব কাজ থেকে ভিন্ন। এখানে ক্রেতা তার পছন্দ অনুযায়ী পোশাক বা গহনা বা গৃহসজ্জার কাজ করিয়ে নেয়ার সুযোগ থাকায় ক্রেতাগণ এই পণ্য ক্রয়ে আগ্রহী। আর তাই এই কাজ শুরু করার পূর্বে অবশ্যই আপনাকে ছবি আঁকার উপর দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
ভবিষ্যতে এই উদ্যোগকে আরো কতদূর নিয়ে যেতে চান? রাবেয়া বলেন, শখের বশে নয়, দীর্ঘ পরিকল্পনার পর এই উদ্যোগটি শুরু করেছি। আমার মূল স্বপ্ন হ্যান্ড পেইন্টের কাজকে একটি শিল্পে রূপান্তরে কাজ করা। হ্যান্ড পেইন্ট এবং হ্যান্ড মেইড ভিন্নধর্মী ও রুচিশীল কাজের বিস্তার ঘটানো। যা আমাদের দেশীয় পণ্যের বাজারকেও সম্প্রসারিত করবে। কেন না আমরা এই কাজে যে জিনিসগুলো ব্যবহার করি তা মূলত দেশিও কারিগর, তাঁতী দ্বারা তৈরি। হ্যান্ড পেইন্ট এর কাজের বর্তমানে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশে ও দেশের বাইরে। বাংলাদেশের নিজস্ব একটি শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি পায় এই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করা।