নতুন কর্মপরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামবে বিএনপি।
অঙ্গীকার ডেস্ক:
বিএনপির বর্তমানে মূল ভাবনা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন। পাশাপাশি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনও দাবি করছে দলটি। এ দাবি সামনে রেখে কর্মপরিকল্পনা সাজাচ্ছে দলটি। এ নিয়ে স্থায়ী কমিটির বাইরেও দায়িত্বশীল নেতারা একাধিক বৈঠক করেছেন। গতকালও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক হয়েছে। কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করে দ্রুত রাজপথে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলের একাধিক নেতা বলেন, আগামী দ্বাদশ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হলে দেশের গণতন্ত্র বড় সংকটে পড়বে। গণতান্ত্রিক রাজনীতির অনুপস্থিতি উগ্রপন্থিদের উত্থান ঘটাতে পারে। সেই চিন্তা থেকে আটঘাট বেঁধে দেশের গণতান্ত্রিক সব রাজনৈতিক দলকে পাশে চায়। ২০-দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্ট ছাড়াও সবাইকে সঙ্গে পেতে দলটির মহাসচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতারা কাজ করছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ এসেছে, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে চতুর্থ কৌশলগত সংলাপে উভয় দেশই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের গুরুত্ব, জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থার উন্নয়নে সুশীল সমাজের উপস্থিতি, মতপ্রকাশ ও ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়ে একমত হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, বিষয়টি তাদের পক্ষে গেছে। কারণ, বিএনপির বক্তব্যের সঙ্গে বিদেশিরাও একমত পোষণ করছে। ফলে তাদের আন্দোলন এবার কোনো অবস্থায় বিফলে যাবে না।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজপথে নামার আগে ডিসেম্বরের মধ্যে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মেয়াদোত্তীর্ণ প্রতিটি কমিটি ঢেলে সাজাতে এরই মধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই আঙ্গিকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির প্রতিটি ওয়ার্ড থানা কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরই মধ্যে সাংগঠনিক উত্তরের ৫৬ ওয়ার্ড ও দক্ষিণের ৭৫ ওয়ার্ড কমিটি ভেঙে দিয়ে কমিটি করতে উভয় পাশে আটটি করে টিম গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রতিটি ওয়ার্ড থানা কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দলের মধ্যে কোনো বিশৃঙ্খলা দেখতে চাই না। যারাই বিশৃঙ্খলা করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলে বিশৃঙ্খলা অথবা গ্রুপিং নিয়ে ব্যস্তদের আপাতত কমিটিতে রাখা হচ্ছে না। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানেরও কঠোর নির্দেশ গ্রুপিং করা নেতারা যে পর্যায়েরই হোক কমিটিতে স্থান হবে না। দলের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, ঢাকা মহানগর কমিটিতে যারা গ্রুপিং করেন, ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে চলেন- এ অভিযোগে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতাকে ঢাকা মহানগর কমিটিতে রাখা হয়নি। বিএনপির বিভিন্ন জেলা ও মহানগর, অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠনে একই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, আমাদের সামনে যে লড়াই সে লড়াইয়ে যদি জয়লাভ করতে হয় পূর্বশর্ত সব স্তরে ঐক্য। এখন চেয়ার দখল নয়, পদ দখল নয়, এখন তিনতলায় নয়- কাজ একটিই তা হলো রাজপথ দখল করা।
দলের একাধিক নেতা বলেন, নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন ইস্যুতে করণীয় নিয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। এর বাইরেও দায়িত্বশীল নেতারা বসেছিলেন। সবাই একমত- আন্দোলন ছাড়া কোনো দাবি আদায় করা সম্ভব নয়। এ লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, ২০-দলীয় জোট অথবা সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়েই আন্দোলেনে নামার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অপর এক নেতা জানান, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন আদায়ে যুগপৎ আন্দোলন করব। তবে, করণীয় ঠিক করতে কিছুটা ভিন্নতা আনা হবে। সে ক্ষেত্রে আগে যেমন বিএনপি ২০-দলীয় জোট, যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে বৈঠক করে আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত করা হতো এবার জোটের বাইরেও বিভিন্ন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাইলে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিকে রাজপথে নামতে হবে।
এদিকে, চলমান পরিস্থিতিতে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে থাকা, না-থাকা নিয়েও আলোচনা হয়। আলোচনার পর নীতিগত সিদ্ধান্ত হয় আপাতত জামায়াতকে ২০-দলীয় জোটে রাখা হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, রোদ-বৃষ্টিতে আমরা কি ছাতা রেখে গামছা মাথায় দিয়ে হাঁটব। তাতে কি আমাদের সব রক্ষা হবে। হলে না হয় জামায়াত ছাড়া যেত। আমরা ছাতাও চাই, গামছাও চাই। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট ডান-বামসহ সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে এ আন্দোলনে চাই।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, সংবিধানে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদ গঠনের কথা বলা আছে। প্রত্যক্ষ নির্বাচন কেমন, তা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দেখা গেছে। একটা ভোট পড়ার আগেই সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় আসনের চেয়ে বেশি আসন আওয়ামী লীগ পেয়ে গিয়েছিল। ভবিষ্যতে মানুষ কবে প্রত্যক্ষ ভোট দিতে পারবে এটাই বড় প্রশ্ন। এ প্রশ্নের জবাব দিতে হলে দেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আন্দোলনের বিকল্প নেই।