অঙ্গীকার ডেস্কঃ বিশ্ব কবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর, আধ্যাত্মিক দার্শনিক বাউল সাধক ফকির লালন শাহ, কথা সাহিত্যিক মীর মোশাররফ হোসেন, কাঙাল হরিনাথসহ অসংখ্য গুনিজনের পদচারনায় ধন্য সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত কুষ্টিয়া ভ্রমন পিপাসুদের কাছে আকর্ষনীয় মনোযোগের অন্যতম স্থানে রূপলাভ করেছে।
গুরুত্ব বিবেচনায় ২০১৮ সালের জুনে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড (বিটিবি) কর্তৃক দুইটি সরকারী আদেশের অনুকুলে ১কোটি ৮০লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় পর্যটকদের কাছে জেলার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানকে আকর্ষনীয় করে তুলতে। জেলার দৌলতপুর, কুমারখালী ও খোকসা উপজেলা পর্যায়ের জন্য ৯০লাখ টাকা এবং শিলাইদহ কুঠিবাড়ি সংলগ্ন পদ্মার পাড়সহ কুঠিবাড়ির মূল চত্বরের মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় হিসেবে ৯০লাখ টাকার বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০১৯ সালের ৩জুনে শিলাইদহ কুঠিবাড়ি কেন্দ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাগজে কলমে নামকাওয়াস্তে ৬৯ লাখ ১৬হাজার ৯শ ১২টাকা ব্যয় ধরে একটি প্যাকেজ প্রকল্পের দরপত্র সম্পন্ন করেন জেলা প্রশাসক। অভিযোগ উঠেছে এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারী ক্রয়নীতির সরাসরি লংঘন করে এখাতে বরাদ্দকৃত সিংহভাগ টাকা তছরূপ করা হয়েছে। সয়ং জেলা প্রশাসন কর্তৃক সংঘটিত অনিয়মের সুযোগ নিয়ে সংশ্লিষ্ট গণপূর্ত বিভাগ ও নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের যোগসাজসে ঘটেছে এসব দূর্নীতির ঘটনা। ঘটনা তদন্তে কমিটি করে দেয়া হয়েছে, তদন্ত রিপোর্ট পেলেই সংশ্লিষ্ট দায়িদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানালেন জেলা প্রশাসক সায়েদুল ইসলাম।
সরেজমিনে জেলার ৩টি উপজেলা পর্যায়ে ইকোপার্ক উন্নয়ন এবং শিলাইদহ কুঠিবাড়ি সংলগ্ন পদ্মা নদীর পাড়সহ মূল চত্বরে পর্যটন আকর্ষন সৃষ্টির লক্ষ্যে উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দকৃত টাকা ব্যায়ে সঠিক ভাবে উন্নয়ন বাস্তবায়ন হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের দাবিকে নাকচ করে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
কুষ্টিয়া সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম টুকু বলেন, সরকারের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রধান শর্ত হল্ োসরকারী দপ্তর গুলিতে সচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। নচেৎ এসডিজি অর্জনের পথ দীর্ঘতর হয়ে যাবে।
জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সদস্য হাজি গোলাম মহসিনের অভিযোগ, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারী ক্রয়নীতিমালা সম্পূর্নরূপে লংঘন করে মনগড়া ফাইল তৈরী করে নির্ধারিত আইটেমের কাজসমুহ এবং গুনগত মানের কাজ না করেই প্রকল্পানুকুলে বরাদ্দকৃত টাকার সিংহভাগই তছরূপ বা আত্মসাত করা হয়েছে। সয়ং জেলা প্রশাসন কর্তৃক সৃষ্ট এমন অনিয়ম ও অস্বচ্ছতা নিরসনসহ কুঠিবাড়ি চত্বরের পর্যটন সুবিধাদি বৃদ্ধির লক্ষ্যে গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে রাষ্ট্র প্রধানের সুদৃষ্টি কামনা করেন জেলাবাসী।
স্থানীয় শিলাইদহ ইউপি চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন তারেক পরিবর্তনের অঙ্গীকার কে বলেন, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড কর্তৃক বরাদ্দকৃত ৯০লাখ টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে যেগুলি করার কথা ছিলো সেসবক কাজের অর্ধেক হয়েছে। এখন শুনছি ঠিকাদার কাজ শেষ করে ফাইনাল বিল দাখিল করেছে। বিষয়টি তদন্ত হওয়া উচিত।
শিলাইদহ কুঠিবাড়ী চত্বরে প্রকল্প বাস্তবায়নে নির্মানকারী ঠিকাদার সামিউল আজম দিপু পরিবর্তনের অঙ্গীকার কে বলেন, এখানে যা কিছু হয়েছে সবই জেলা প্রশাসনের সরাসরি দেখভালে হয়েছে। কারো কিছু জানা বা বলার থাকলে তা সরাসরি জেলা প্রশাসনের সাথেই কথা বলতে হবে। ৬৯লাখ ১৬হাজার টাকা ব্যায়ে নির্মানকাজে চুক্তিবদ্ধ ঠিকাদারের অভিযোগ এই কাজ করতে এসে আমরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছি। দরপত্রে উল্লেখিত তালিকার মধ্যে ওয়াটার রিজার্ভার, ডিপ টিউবওয়েল এবং পাম্প মটর (যার চুক্তিমূল্য ছিলো ১৮লক্ষ ৪৩হাজার ৫শ ১০টাকা) ছাড়া অন্য কাজগুলি সংযোজন বা পরিবর্তন যা কিছুই হয়েছে তা জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে চলমান বিল হিসেবে ১৫ লাখ করে পৃথক দুইটি বিলে ৩০ লাখ টাকা পেয়েছেন, এখনও বিল বাকি আছে ৩৯লাখ টাকার। এছাড়া এই প্যাকেজে বরাদ্দকৃত মোট ৯০ লাখ টাকার মধ্যে বাকি ২১ লাখ টাকা কোন খাতে ব্যয় হয়েছে সেটা আমার জানা নেই।
এবিষয়ে গণপূর্ত বিভাগ কুষ্টিয়ার সংশ্লিষ্ট উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো: শফিকুর রহমান চৌধুরী দাবি করেন, শিলাইদহ কুঠিবাড়ী যে উন্নয়ণ প্রকল্প তালিকায় উল্লেখিত ওয়াস বøক, ওয়াটার রিজার্ভার, ডিপ টিউবওয়েল, পাম্প মটর, আরসিসি রোড, সাইট ডেভেলপমেন্ট এবং বে সহ ছাতা নির্মাণাধীন ছিলো তার সবগুলি আইটেম নির্ধারিত মান বজায় রেখেই নির্মান করা হয়েছে।
এই ঘটনায় কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলাম ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজ হননি। তবে তিনি পরিবর্তনের অঙ্গীকার কে জানান, তদন্তে কমিটি করে দেয়া হয়েছে, তদন্ত রিপোর্ট পেলেই সংশ্লিষ্ট দায়িদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।