কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতুর রক্ষা বাঁধে ধস
কুষ্টিয়ায় শেখ রাসেল কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতু রক্ষাবাঁধের প্রায় ৪০ মিটার অংশ আজ রোববার ভোরে ধসে পড়ে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় শেখ রাসেল কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতুর রক্ষা বাঁধের কিছু অংশ আজ রোববার ধসে পড়েছে।
ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে হাটশ হরিপুর এলাকায় বাঁধের প্রায় ৪০ মিটার ব্লক গড়াই নদে বিলীন হয়।
ধসে পড়া অংশের পাশেই গ্রামের মানুষের বসতি। ব্লক ধসে পড়ায় একটি বাড়ির কিছু অংশ ভেঙে পড়েছে। এখান থেকে অন্তত ১৫০ মিটার দূরে সেতুর অবস্থান।
সরেজমিনে দেখা যায়, ব্লক ধসে পানিতে তলিয়ে গেছে। আরও কিছু অংশ ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে। একটি বাড়ির কিছু অংশ ভেঙে পড়ায় বাড়ির বাসিন্দারা বাকি অংশসহ মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। ভেঙে পড়া বাড়ির বাসিন্দা সুমন বলেন, ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে হঠাৎ বাঁধের পানিতে বুদ্বুদ উঠতে শুরু করে। এ সময় সেখানে থাকা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর কয়েক মিনিট পর বাঁধ ভেঙে পানিতে তলিয়ে যায়। আধা ঘণ্টার মধ্যে ব্লকের সব কটি সারি একযোগে ভেঙে পড়ে ঘরের দিকে এগিয়ে আসে। বাড়ির কিছু অংশ ভেঙে বিলীন হয়ে যায়। বাকি অংশ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
গড়াই নদতীরের বয়োবৃদ্ধ বাসিন্দা আবদুস সাত্তার বলেন, গত বছরও একই জায়গায় ধস ছিল। প্রশাসন থেকে ভাঙন রোধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ভাঙন অংশে প্রতিরোধ গড়ে তুললে আজ এই পরিস্থিতি না–ও হতে পারত।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, তিন সপ্তাহ ধরে গড়াই নদে বন্যার পানি প্রতিদিন বাড়ছে। নদে তীব্র স্রোতও আছে। এতেই ধাক্কা সামলাতে পারছে না। যেখানে ভেঙেছে, সেখানে পানি কমলে বাঁধে আবারও ধস নামতে পারে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে এই বাঁধ। তারাই এটার দেখাশোনা করে।
এলজিইডির সদর উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া শহরের পাশেই হরিপুর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নকে শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করতে গড়াই নদের ওপর ২০১৭ সালে শেখ রাসেল কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতুটি ওই বছরের ২৪ মার্চ উদ্বোধন করা হয়। সেতুটি রক্ষার জন্য উভয় পাশে ব্লকবাঁধও তৈরি করা হয়। সেতুটি নির্মাণে প্রায় ৭৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়। আর সেতুর উভয় পাশের ৪১০ মিটার ব্লক বাঁধ নির্মাণে ব্যয় হয় প্রায় ১০ কোটি টাকা।
এর মধ্যে হরিপুর অংশে সেতুর পশ্চিম ও পূর্ব পাশে অন্তত ৩০০ মিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এলজিইডির তত্ত্বাবধানে ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আকতার লিমিটেড ওই সেতু ও ব্লকবাঁধ নির্মাণের কার্যাদেশ পায়। নির্মাণের প্রায় সাড়ে চার বছর পর আজ ভোরে সেতুর পূর্ব পাশের ৪০ মিটারজুড়ে ভেঙে বিলীন হয়ে গেছে।
এর আগে গত বছরের ১০ অক্টোবর পাশেই ৩০ মিটার ব্লকবাঁধ ভেঙে যায়। এর ১০ দিন পর বর্তমান যেখানে ভেঙেছে, সেখানে নিচের দিকে ১০ মিটারজুড়ে ব্লকবাঁধ ভেঙে যায়। সেতু থেকে অন্তত ১৫০ মিটার দূরে এ ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছিল। সে সময় ভাঙার পর দুটি অংশ মেরামতের জন্য এলজিইডি থেকে মন্ত্রণালয়ে ৩২ লাখ টাকা চেয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু আজও সেটার কোনো অনুমোদন আসেনি।
জানতে চাইলে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুর রহমান মন্ডল বলেন, প্রস্তাব অনুমোদন না হওয়ায় ভাঙন অংশে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যায়নি। আজকের ভাঙন অংশ পরিদর্শন করা হয়েছে। প্রায় ৪০ মিটারজুড়ে ব্লকবাঁধ ভেঙে বিলীন হয়ে গেছে। বেশ কিছু বাড়িঘর হুমকির মধ্যে আছে। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে কোনো জরুরি তহবিলও নেই। বিষয়টি আবারও মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে।
আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাধন কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপনার কাছ থেকেই বাঁধ ভাঙার খবর প্রথম জানলাম। বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হচ্ছে ।
Post Views: 36