কুষ্টিয়ায় গত জুলাই মাসে করোনা কতটা ভয়ংকর ছিল, তা একটা উদাহরণেই স্পষ্ট হয়ে যায়। জুলাই মাসে মাত্র ২২ দিনে জেলার দৌলতপুর উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামে ১২ জনের মৃত্যু হয়। এমনকি জেলার করোনা হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৩ জন রোগী মারা যেতে থাকে, যা জুন মাসে ছিল ৩ থেকে ৪ জন।
কয়েক দিন বাদে টানা দুই মাস ধরে কঠোর বিধিনিষেধ চলে। গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ায় এই পদক্ষেপ নেওয়ার পরও ঠেকানো যায়নি করোনার ভয়াবহতা।
চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জেলায় সংক্রমণ ঠেকানোর এখন অন্যতম উপায় মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং দ্রুত টিকা গ্রহণ। যদি কারও শরীরে উপসর্গ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া। অবহেলা বা চিকিৎসা নিতে দেরি করলে মৃত্যুঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
পরিসংখ্যান বলছে, জুনের শুরুর দিকে বাড়তে থাকে রোগী। মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হতে থাকে। প্রতিদিন চলে রোগী শনাক্তের রেকর্ড ভাঙা আর গড়া। জুনের মাঝামাঝি থেকে জেলায় চলাচলে বিধিনিষেধ দেওয়া হয়। শেষ সপ্তাহে আসে লকডাউন। কিন্তু তত দিনে জেলার আনাচ–কানাচে করোনার ঢেউ আছড়ে পড়ে।
জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির দেওয়া জুন মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ওই মাসে ৩০ দিনে করোনা শনাক্ত হয়েছিল ৩ হাজার ৭২ জনের। মারা গেছেন ৯৯ জন। করোনা হাসপাতালে এ সময় রোগীর চাপ সামাল দিতে ২৫ জুন থেকে ২৫০ শয্যার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেডেট ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
জুলাই মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই মাসে ৩১ দিনে জেলায় ৬ হাজার ৩৬৬ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। এর মধ্যে জুনের শনাক্তের তুলনায় দ্বিগুণ রোগী। এ মাসে করোনা পজিটিভ হয়ে মারা যান ৩৪২ রোগী, যা জুন মাসের তিন গুণের বেশি।
এ পর্যন্ত জেলায় ৮১ হাজার ৩৭১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৪ হাজার ৪১৬ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ৫৫৩ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১০ হাজার ৭৯৫ জন।
জুলাই মাসে কুষ্টিয়া করোনা হাসপাতালে রোগী ভর্তির যেমন ব্যাপক চাপ ছিল, তেমনি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে সবচেয়ে বেশি। ২০০ শয্যার বিপরীতে এই হাসপাতালে গড়ে ২৩০ থেকে ২৫০ রোগী ভর্তি ছিলেন। সর্বোচ্চ ২৮৭ জন রোগীও ভর্তি ছিলেন। জুলাই মাসে কুষ্টিয়ার করোনা হাসপাতালে করোনায় ৩১১ জন ও উপসর্গ নিয়ে ৯৪ জন মারা যান।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এ এস এম মুসা কবিরের মতে, গ্রামে গ্রামে প্রশাসনের নজরদারি ও তদারকি আরও বাড়াতে হবে। উপসর্গ নিয়ে কেউ যেন বাড়িতে বসে না থাকেন। তাঁদের প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসাব্যবস্থা নিশ্চিত করা ছাড়া মৃত্যুহার কমানো সম্ভব নয়। চিকিৎসা নিতে যত দেরি হবে, মৃত্যুর ঝুঁকি তত বাড়বে। তিনি বলেন, সংক্রমণের হার কমানোর জন্য শতভাগ মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প পথ নেই। যত দ্রুত সম্ভব, গ্রামের বয়স্ক ব্যক্তিদের টিকা নেওয়া নিশ্চিত করতে হবে। কেননা মারা যাওয়া রোগীদের বেশির ভাগই গ্রাম থেকে আসা বয়স্ক নারী–পুরুষ।