কঠোর লকডাউনের কারণে কুষ্টিয়া পৌর বাজারে কাঁচা তরিতরকারি সবজির সংকট দেখা দিয়েছে। সামান্য সবজি বাজারে উঠলেও নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার অনেক আগেই সব সবজি শেষ হতে দেখা যায়। এ কারণে বাজারে এসে সবজি কিনতে না পেরে অনেক ক্রেতাকেই খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। বাজারে সবজি সংকট থাকলেও কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে মাছ-মাংস এমনকি মুদি দোকানেও ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সেখানে সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই চোখে পড়েনি। এ চিত্র গতকাল কুষ্টিয়া শহরের পৌর বাজারের। করোনা সংক্রমণ ও আক্রান্ত এবং উপসর্গ নিয়ে খুলনা বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে নাজুক অবস্থা কুষ্টিয়া জেলার। প্রতিদিনই এখানে শত শত মানুষের করোনা শনাক্ত হচ্ছেন। কুষ্টিয়া করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে প্রতিদিন কমপক্ষে ১২ থেকে ২০ জন মানুষ করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করছেন। এমন অবস্থায় কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসন এবার কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিধি-নিষেধের এই প্রজ্ঞাপনে কুষ্টিয়ার সব কাঁচাবাজার ও দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান সপ্তাহে ৩ দিন যথাক্রমে শুক্র, সোমবার ও বুধবার সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিধিনিষেধের ফলে সপ্তাহে মাত্র তিন দিন বাজার খোলা রাখার এ সিদ্ধান্তের কারণে গতকাল কুষ্টিয়ার বাজারে হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন সবজি বিক্রেতাকে বাজারে পসরা সাজাতে দেখা যায়। একই সঙ্গে বাজারের অধিকাংশ আড়তদারের ঘর ছিল সবজি শূন্য। বাজারে ক্রেতার তুলনায় সবজির পরিমাণ কম থাকায় মুহূর্তের মধ্যেই সব সবজি বিক্রি হয়ে যায়। বেলা একটা পর্যন্ত বাজার খোলা রাখার সিদ্ধান্ত থাকলেও সকাল ১০টা বাজতে না বাজতেই বাজারে সব সবজি শেষ হয়ে যায়। বাজার করতে এসে সবজি না পেয়ে অনেক ক্রেতাকেই খালি হাতে ব্যাগ নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। ক্রেতাদের অভিযোগ সবজির পরিমাণ কম থাকায় বিক্রেতারা ইচ্ছে মত বেশি দাম হাঁকাচ্ছেন। উপায় না থাকায় এক প্রকার বাধ্য হয়েই বেশি দাম দিয়ে বাজার থেকে সবজি কিনতে ক্রেতারা বাধ্য হচ্ছেন। কুষ্টিয়া পৌর বাজারে আসা রমজান আলী নামের এক ক্রেতা জানান, ঘরে কোনো সবজি নেই। যে কারণে এই ভিড়ের মধ্যেও সবজি কেনার জন্য বাজারে এসে সবজি না থাকায় খালি হাতে বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে। বাজারের আড়তদার হাসিবুর রহমান রুবেল জানান, জেলা প্রশাসন থেকে মাত্র তিন দিন বাজার খোলা রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা সবজি নিয়ে না আসার কারণে বাজারে সবজি সংকট দেখা দিয়েছে। যে কারণে এখানকার কৃষকরা কুষ্টিয়ার বাজারে সবজি না তুলে পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহের বাজারে সবজি সরবরাহ করছেন। এদিকে লকডাউনের কারণে কুষ্টিয়ার মাছ-মাংসের বাজারেও আগুন লেগে গেছে। ক্রেতাদের অভিযোগ মাছ-মাংসের বিক্রিতেরা লকডাউনের অজুহাত দেখিয়ে ক্রেতা সাধারণের কাছে ইচ্ছে মতো দাম হাঁকাচ্ছেন। সার্বিক বিষয় নিয়ে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, করোনা প্রতিরোধ বিষয়ক কমিটির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই সপ্তাহে তিন দিন বাজার খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই সভায় ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। বাজারে কাঁচা তরিতরকারির যে সংকট দেখা দিয়েছে সেটা প্রয়োজন হলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।