কুলসুম বেগম (৫৫) তাঁর দুই হাত তুলে ইশারা করছেন। কিছু বলার চেষ্টা করছেন। কখনো চুপ মেরে যাচ্ছেন। ফ্যালফ্যাল করে তাকাচ্ছেন। দিশেহারা স্বামী চতুর আলী (৬৫) কখনো হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন। শিয়রে বসে মুখে হাত বোলাচ্ছেন, মুখের অক্সিজেন মাস্কটি ঠিক করে দিচ্ছেন। মাঝেমধ্যেই ছটফট করে উঠছেন কুলসুম। কী করবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না অসহায় চতুর আলী। স্ত্রীর মুখের কাছে মুখ নিয়ে ইশারার কথা বোঝার চেষ্টা করছেন।কুষ্টিয়া করোনা হাসপাতালের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ৪ নম্বর কক্ষের এক শয্যায় ঠাঁই হয়েছে কুলসুম বেগমের। কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহব্যবস্থা থেকে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছিল তাঁকে। অক্সিমিটার দিয়ে পরিমাপ করে দেখা গেল, কুলসুমের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ৮৩ শতাংশে নেমে এসেছে। দ্রুত একজন নার্স ডেকে রোগীর কাছে পাঠানো হয়। তিনি দেখার পর জানালেন, রোগীকে ক্যানুলার মাধ্যমে নাক দিয়ে অক্সিজেন দিতে হবে।
কুলসুম ও চতুর আলীর বাড়ি কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া এলাকায়। পরিবারে তিন মেয়ে ও এক ছেলে। তিন মেয়ে এখন স্বামীর বাড়িতে থাকেন। একমাত্র ছেলে থাকেন ঢাকায়। গত শুক্রবার কুলসুম করোনা পজিটিভ হন। শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে এনে ভর্তি করেন চতুর আলী।বিপদের এই সন্তানেরা কেউ পাশে নেই। তাই হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে স্ত্রীর পাশে একাই থাকছেন চতুর আলী। মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে কুলসুমের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। কোনো কথা বলতে পারছেন না। চোখও মেলতে সমস্যা হচ্ছে। শুধুই ছটফট করছেন। কখনো দুই হাত তুলে কিছু বলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু ইশারার ভাষা কোনোভাবেই বুঝতে পারছেন না স্বামী চতুর আলী। শয্যার এপাশ-ওপাশ করছেন। কখনো স্ত্রীর মাথার পাশে বসে মুখ ধরে বসে থাকছেন। অক্সিজেন মাস্ক মুখের সঙ্গে শক্ত করে ধরছেন। তবে বেশিক্ষণ অক্সিজেন নিতে পারছেন না কুলসুম। মাঝেমধ্যেই খুলে ফেলছেন। খবর পেয়ে রোগীকে দেখতে আসা নার্স তখন নাক নিয়ে অক্সিজেন দিতে ক্যানুলা কেনার পরামর্শ দেন। স্বামী চতুর আলীর চোখেমুখে তখন কান্নার ছাপ। কী করবেন, কিছুই বুঝতে পারছেন না।
কুলসুম বেগমের এই কাহিনি জানার পর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাপস কুমার সরকার খোঁজখবর নেন। তিনি ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসক ও ওয়ার্ড বয়কে ওই রোগীর প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়ার নির্দেশ দেন। বলেন, স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই যেন তিনবেলা খাবার দেওয়া হয়। প্রয়োজনীয় সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবাটা যেন ওই রোগী পান।
প্রতিবেদনে :তোহিদ সরকার (প্রথম আলো)