কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এলাকার ভাড়াটিয়া বাসিন্দা পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলায় সে দিন প্রাণে বাঁচলেও পা হারিয়েছিলেন আয়শা সিদ্দিকা ঝড়া(৩০) নামের ওই নারী। গত ১১জুন গভীর রাতে ঝড়ার উপর উপর্যুপরি ধারালো অস্ত্রের আঘাতসহ হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৫জনের নামোল্লেখসহ কুষ্টিয়া মডেল থানায় এজাহার দিয়েছিলেন আক্রান্ত ওই নারীর মা লিপি খাতুন। তবে “মামলাটি রেকর্ড হলেও জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশের ভুমিকা সন্তোষজনক নয়” বলে অভিযোগ ছিলো প্রাণে বেঁচে যাওয়া পা হারানো আয়শা সিদ্দিকা ঝড়ার।
তার অভিযোগ ছিলো “পাওনা টাকা না দেয়ার জন্য পূর্বপরিকল্পিত এই হামলা করেছে আমার উপর”। হামলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর রক্তাক্ত জখম ও আহত ওই নারী ঢাকাস্থ পঙ্গু হাসপাতালে ডা: নাজিম উদ্দিনের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুষ্টিয়া মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক তাপস কুমার পাল সাংবাদিকদের তৎকালীন সময় জানিয়েছিলেন, “তদন্ত শুরু করেছি, কিছু প্রাসঙ্গিক আলামতসহ ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা ক্লজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। সেগুলি বিশ্লেষন ও পর্যালোচনা চলছে। আশা করি খুব শীঘ্রই জড়িদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে পারবো”
আজ ৫ই জুলাই তিনি জীবন যুদ্ধে লড়ে মৃত্যুবরণ করেন।হাউজিং ডি ব্লক ৪৫৬নং ভবনের ভাড়াটিয়া বাসিন্দা ও মামলার এজাহারকারী সদর উপজেলার বিষ্ণুদিয়া গ্রামের শহিদুল ইসলামের স্ত্রী লিপি খাতুন তার বিধবা কণ্যা মৃত: রফিকুল ইসলামের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা ঝড়াকে নিয়ে বসবাস করতেন ওই বাসাতে। ঘটনার দিন ১১জুন রাতে পাওনা টাকা ফেরত দেয়া হবে বলে সন্দিগ্ধ জড়িতরা বাসা থেকে ডেকে শহরের পুনাক ফুড পার্কে যেতে বলে। সেখানে গিয়ে উপজেলার শান্তিডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সোবহানের ছেলে দেনাদার রাশেদ আহমেদসহ আরও ৪জনকে উপস্থিত দেখেন। তারা নানা ছলচাতুরী করে সময় ক্ষেপন করিয়ে টাকা না দিয়ে গভীর রাতে নিজ বাসার সামনে পৌছে দেয় ঝড়া কে । এসময় পূর্ব থেকে ওত পেতে থাকা দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন ওই নারী। ঘটনার পর পুলিশের হাতে পায়ে ধরে সাহায্য চাইলেও পুলিশ কোন সাহায্য করেনি বলে অভিযোগ লিপি খাতুনের।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা: তাপস কুমার সরকার জানিয়েছিলেন, গত ১১জুন রাত ১১টায় আয়শা সিদ্দিকা ঝড়া (৩০) নামে এক নারী রক্তাক্ত জখমে গুরুতর আহতাবস্থায় জরুরী বিভাগে আসেন। তার পিছন দিক থেকে ধারালো অস্ত্রের আঘাত করার ফলে দুই পায়ের লিগামেন্টসহ রক্ত নালী বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রক্তনালী জোড়া লাগানের কোন সুবিধা হাসপাতালে না থাকায় তার উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। ওইদিন রাতেই তারা রোগীকে এ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে চলে যায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওই নারীর মা এবং মামলার এজাহারকারী সদর উপজেলার বিষ্ণুদিয়া গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বুলুর স্ত্রী লিপি খাতুনের দেয়া এজাহারের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ১১জুন, সন্ধায় তার মেয়ের কাছ থেকে ধার নেয়া (১লক্ষ ৫০হাজার) পাওনা টাকা ফেরত দেবেন বলে দেনাদার রাশেদ আহমেদ আমাদেরকে পুলিশ লাইন সংলগ্ন পুনাক ফুড পার্কে ডেকে নিয়ে যায় । সেখানে গিয়ে দেখতে পান ২/৩জন উপস্থিত রয়েছেন। কিন্তু পূর্ব কথামতো রাশেদ পাওনা টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করে এবং আয়শা সিদ্দিকা ঝড়ার সাথে ঝগড়া, তর্কাতর্কি ও কথা কাটাকাটিতে লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে সেখান থেকে রাত সোয়া ১০টার দিকে বিপুল আহমেদেরকে একটি সাদা রংয়ের কারে উঠে বাসার উদ্দেশে নিয়ে আসে । বাসার সামনে পৌছা মাত্রই ৪জন লোক আমাদের উপর হামলা করে। পরিকল্পিত ভাবে এই হামলা করেছেন।
আহত ওই নারীর চাচা আব্দুর রশিদ জানান, ঘটনার পরে চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন জড়ো হওয়ায় হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এসময় স্থানীয়দের সাহায্যে গুরুতর জখম আয়সা সিদ্দিকা ঝরাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসকরা ভর্র্তি করলেও তার রক্তনালী জোড়া দেয়ার মতো চিকিৎসা না থাকায় ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দেন। জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পূর্নবাসন প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক ডা: নাজিম উদ্দিনের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন ছিলেন আয়শা সিদ্দিকা ঝড়া ।
ঝড়া তৎকালীন সময় জানিয়েছিলেন, ‘ওরা তো আমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যেই এই হামলা করে, যখন দেখলো আমার মৃত্যু হয়নি, তখন এই বাধা রাশেদ আমাকে সাহায্যের বাহানা করে নানা ভাবে আমার সঠিক চিকিৎসায় সৃষ্টি করে।
ঢাকাতে এসেও রাশেদ ছলচাতুরি করে সময় ক্ষেপন করানোর ফলে দেরী হয়ে যাওয়ায় পায়ে পচন ধরে। শেষ পর্যন্ত গত ২২জুন আমার বাম পায়ের হাটুর উপর থেকে কেটে ফেলানোর সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসক। আমি আমার উপর হামলাকারী রাশেদসহ সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমুলক বিচার চাই। তৎকালীন সময় কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি সাব্বিরুল আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, গত ১১জুন রাতে হাউজিং এলাকায় এক মহিলার উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় গুরুতর আহত আয়শা সিদ্দিকার মা লিপি খাতুন বাদি হয়ে প্রেরিত এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন আছে।
ঝড়াদের প্রাণ কি এভাবেই ঝড়ে যাবে? উত্তর দিবে কে?