বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা থেকে গতকাল বিকাল তিনটা। দীর্ঘ এ ২৩ ঘণ্টা কোনো চিকিৎসাই জোটেনি হোমেছা বেগমের। ক’টি হাসপাতাল ঘুরে শুক্রবার বিকাল তিনটায় মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। তখন তার অক্সিজেন লেভেল পঁচাত্তর থেকে আটাত্তরে ওঠানামা করছিল। সিলিন্ডার দিয়ে অক্সিজেন দেয়ার পরও শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। হোমেছার দুই ছেলে, এক মেয়ে তাকে ঘিরে কান্নাকাটি করছিলেন। মায়ের এমন অবস্থা দেখে তারা দিশাহারা হয়ে পড়েন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা বলছিলেন হোমেছার জরুরি ভিত্তিতে হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা লাগবে। পরে তড়িঘড়ি করে ভর্তির প্রক্রিয়া শেষ করে তাকে পাঠানো হয় ওয়ার্ডে। শুরু হয় হোমেছার করোনা চিকিৎসা। হোমেছা বেগমের বাড়ি কুমিল্লার হোমনার মনিপুরে। এক সপ্তাহ ধরে গলাব্যথা, কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু তার শারীরিক সমস্যার উন্নতি হয়নি। উল্টো সময় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার অবস্থার অবনতি হয়। তাই পারিবারিক উদ্যোগেই তাকে বৃস্পতিবার দুপুরে নেয়া হয় কুমিল্লা সদর হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে তাকে ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দেন। কুমিল্লা থেকে রওয়ানা দিয়ে বিকাল চারটার দিকে হোমেছা বেগমকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ভর্তির যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করে বিকাল ৫টার দিকে তাকে ঢামেকের নতুন ভবনের করোনা ইউনিটের সাত তলার একটি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। হোমেছার বড় ছেলে বিল্লাল এই প্রতিবেদককে বলেন, কুমিল্লা হাসপাতাল থেকে ঢামেক করোনা ইউনিটে ভর্তি করার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। তাই মা’কে ওই হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু বিকাল ৫টা থেকে পরেরদিন দুপুর পর্যন্ত মা’কে কোনো চিকিৎসা দেয়া হয়নি। মায়ের অক্সিজেন লেভেল দ্রুত কমছিল। তবুও সেখানকার নার্সরা কোনো পদক্ষেপ নেননি। বুকের একটা সিটিস্ক্যান করানোর পরামর্শ দিলেও ঢামেকে সেটি করাতে পারিনি। শুক্রবার হওয়াতে নাকি জনবল নাই। চোখের সামনে মায়ের শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। তার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে সেখান থেকে ভর্তি বাতিল করে নিয়ে যাই আল কারিম নামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানকার একজন চিকিৎসক মা’কে পরীক্ষা করে মুগদা হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। পরে মাকে নিয়ে আসি এই হাসপাতালে। বিল্লাল বলেন, প্রায় ২৩ ঘণ্টা পর এখন এই হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হয়েছে। এখানকার চিকিৎসকরা বলেছেন, তার অক্সিজেন লেভেল দ্রুত কমছে। জরুরি ভিত্তিতে আইসিইউ প্রয়োজন। তবে এখানে কোনো আইসিইউ খালি নাই। হোমেছার আরেক ছেলে বাবু বলেন, আমরা দিনমজুর। সাত দিন ধরে মা অসুস্থ। এখন পর্যন্ত চিকিৎসকের ফি, ওষুধ ও পরীক্ষা নিরীক্ষা বাবদ অনেক টাকা খরচ হয়েছে। দুইদিনে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া প্রায় ১৫ হাজার টাকা লেগেছে। ঢাকা মেডিকেল এত বড় হাসপাতাল অথচ সেখানে কোনো চিকিৎসাই দেয়া হলো না। তারা শুধু বুকের সিটিস্ক্যান করার কথা বলেন। দীর্ঘ সময় ওই হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়েই সেখান থেকে চলে আসি। ভাবছিলাম ধারদেনা করে টাকা যোগাড় করেও বেসরকারি হাসপাতালে মায়ের চিকিৎসা করাবো। কিন্তু আল কারিম হাসপাতাল থেকে মুগদা হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছে। করোনা ডেডিকেটেড সরকারি মুগদা হাসপাতালে গতকাল ২৩শে জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। সর্বমোট ৩৮৪টি করোনা শয্যার হাসপাতালটিতে এখন পর্যন্ত ১৭১ জন রোগী ভর্তি আছেন। এই হাসপাতালের ২৪টি আইসিইউ’র সবক’টিতে রোগী ভর্তি। ১০ এইচডিইউ শয্যার সবক’টিতে রোগী এবং হাসপাতালের নন কোভিড ডায়ালাইসিস ইউনিটেও ১৩ জন রোগী ভর্তি। বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে মুগদা হাসপাতালে আসেন শিল্পী বেগম (৫২) নামের আরেক রোগী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। পাশাপাশি কিছুদিন ধরে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হচ্ছে। শিল্পীর ছেলে শিপন মানবজমিনকে বলেন, কিডনির সমস্যার কারণে মা’কে কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম। কয়েকদিন ধরে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। মায়ের অক্সিজেন লেভেল ৬৩। আইসিইউ ছাড়া তাকে বাঁচানো কষ্ট হবে। করোনা ডেডিকেটেড কয়েকটা হাসপাতাল ঘুরে কোথাও আইসিইউ সিট খালি পাইনি। শুনেছি মুগদা হাসপাতালে একটা শয্যা খালি আছে। সেই ভরসায় এখানে এসেছি। জানি না আদৌ ওই খালি শয্যা পাবো কিনা। না পেলে আবার অন্য হাসপাতালে যেতে হবে। এদিকে করোনা পজিটিভ ও শারীরিক কিছু জটিলতা নিয়ে মুগদা হাসপাতালে ভর্তি হতে আসেন সোহেল রহমান নামের এক শিক্ষার্থী। ধানমন্ডির বাসিন্দা সোহেল তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। সঙ্গে কাশি ও শরীর ব্যথা ছিল। করোনা পরীক্ষা করানোর পর পজিটিভ রেজাল্ট আসে।