কুষ্টিয়ার পরিবেশে সড়ক বিভাগের কুঠারাঘাত
গাছ ও পরিবেশের মধ্যে একটা নিবিড় সম্পর্ক অন্তর্নিহিত। আমরা বলি, গাছ আমাদের পরম বন্ধু; কিন্তু কতটুকু যত্নশীল বন্ধুর প্রতি? আমরা কোনো কারণ ছাড়াই অথবা সামান্য কারণ দেখিয়ে বন উজাড় করে ফেলি। একটা দেশের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষ গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।গাছপালা শুধু কার্বন ড্রাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে উপকারের পরিসমাপ্তি ঘটায়, তা না। বড় বৃক্ষ বজ্রপাত প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। বড় বড় গাছপালা আজ যেন খুঁজে পাওয়া দুস্কর। পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য আজ প্রতিদিন বজ্রপাতে লোক মারা যাচ্ছে।গাছ মানুষকে সুশীতল ছায়া দেয়। ফল দেয়, ফুল দেয়, মরণ ব্যাধি ওষুধের জোগান দেয়, পাহাড়ধস থেকে রক্ষা করে। আরও বিভিন্নভাবে উপকারে আসে। পাখিকুলের বেঁচে থাকার নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হচ্ছে গাছপালা।
সেই অতিমূল্যবান আমাদের পরমবন্ধু গাছ কেটে ভবন নির্মানের প্রস্তুতি চলছে কুষ্টিয়া সড়ক বিভাগের উদ্যোগে। সড়ক ভবনের সম্মুখে প্রায় দুই বিঘা জমির উপর বিভিন্ন প্রজাতির কয়েকশ গাছ রয়েছে। ওষধি গাছের মধ্যে নিম, হরিতকি, বহেরা, অর্জুন, ফলজ গাছের মধ্যে আম, কাঁঠাল, নারিকেল,চালতা, আমলকী, কামরাঙা, সুপারি, বনজ গাছের মধ্যে মেহগনি, হিজল, শোভাবর্ধনকারী হিসাবে কৃষ্ণচূড়া, বকুল, জারুল, জবা সহ নাম না জানা অনেক গাছ রয়েছে। কুষ্টিয়া শহরের মধ্যে একমাত্র এখানেই বিভিন্ন প্রজাতির গাছ একত্রে বেড়ে উঠেছে। এই স্থানে গাছের প্রাচুর্যতা থাকায় শহরের অন্যান্য স্থানের তুলনায় এই জায়গার তাপমাত্রা তুলনামূলক কম। মুরব্বিরা বলেন নিম গাছের থেকে প্রবাহিত বাতাস অনেক স্বাস্থ্যকর। কিন্তু এই সকল গাছগুলোকে এখন আর বাঁচিয়ে রাখা যাবে না প্রকারন্তরে গাছগুলোকে আর বাঁচতে দেয়া হবে না। কারণ এই স্থানে এসকল মূল্যবান গাছ কেটে কুষ্টিয়া সড়ক বিভাগ কর্তৃক সুরম্য ভবন নির্মাণের সকল আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। সড়ক বিভাগ ইতিমধ্যে ৪ কোটি ১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে চারতলা বিশিষ্ট ভবনের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আগামী ৭ জুলাই এই দরপত্রটি উন্মুক্ত করা হবে। প্রকৃতির এই নির্মল পরিবেশ নষ্ট করে এখানে এই ভবনটি নির্মিত হলে কুষ্টিয়া শহরবাসীর অপরিমেয় ক্ষতি হয়ে যাবে। এই স্থানে বিদ্যমান বিভিন্ন গাছসমূহের গড়পরতা বয়স প্রায় ৩০ বছরের বেশি। ফলে এই গাছগুলো কেটে ফেলা হলে এ অঞ্চলের পরিবেশ মারাত্নক ভাবে হুমকির মুখে পড়বে। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, সরিসৃপ, কাঠবিড়ালী, বেজী সহ প্রাণীদের আবাসস্থল হওয়াতে কুষ্টিয়ার পরিবেশবিদদের মতে সড়ক ভবন সম্মুখস্থ স্থানের গাছপালা কেটে ফেললে প্রাণীকূলের খাদ্যশৃংখলে বিঘ্ন ঘটাসহ জীববৈচিত্র মারাত্নক ভাবে হুমকির মুখে পড়বো দেশের জীববৈচিত্র্য, প্রতিবেশ ও পরিবেশন সংরক্ষণে সরকারি জমিতে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গাছ সংরক্ষণ করতেই ‘বৃক্ষ সংরক্ষণ আইন, ২০১২’আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে।সে বিবেচনায় কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের এর নাকের ডগায় কিভাবে এতোগুলো গাছ কাটার পাঁয়তারা চলছে সে ব্যাপারে কুষ্টিয়ার পরিবেশবাদীরা তাদের চরম উৎকণ্ঠা ও উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেছেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের স্থানীয় কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলেথে যোগাযোগ করা হলে তিনি
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীএ প্রতিবেদককে জানান যে,পরিবেশ অধিদপ্তরের স্থানীয় কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে নির্বাহী অফিসার জানান, এ ব্যপারে আমরা একটি নোটিশ পেয়েছি। তবে এই যায়গা নিয়ে একটি মামলা রয়েছে। তার সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত আমরা কিছু করতে পারবোনা।
যেকোনো উন্নয়নমূলক নির্মাণের জন্য প্রকৃতি ও পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কতটা? এখানে একটা সীমার কথা বলেছেন লেনিন এবং তাঁর আগে মার্ক্স, অ্যাঙ্গেলস। ‘প্রকৃতির দ্বন্দ্ববাদ’ শীর্ষক গ্রন্থে ফ্রেডরিক অ্যাঙ্গেলস বলছেন, ‘প্রকৃতির ওপর আমাদের বিজয় নিয়ে নিজেদের গর্বিত ভাবার দরকার নেই। কারণ, প্রতিটি বিজয়ের পর প্রকৃতি প্রকৃতি প্রতিশোধ নেয়।প্রতিশোধ নেয়। যে দেশের সংবিধানের ১৮ক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্য প্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন।’ কিন্তু সড়ক বিভাগ একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান হয়েও এই বাধ্যবাধকতা প্রতিপালন তো করছেই না, বরং করছে উল্টোটা। উন্নয়নের নামে সাবাড় করা হচ্ছে গাছ। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-এসডিজি পূরণে বনভূমির পরিমাণ দেশের মোট ভূখণ্ডের ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করতে হবে। কিন্তু উল্টোপথে হাঁটছি আমরা। এনভায়রনমেন্টাল পারফরমেন্স ইনডেক্স ২০২০ অনুযায়ী ১৮০ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৮।
এই গাছগুলি কাটার আগে ভাবতে হবে ওই গাছগুলি এত বছর ধরে যে পরিমাণ অক্সিজেন উৎপাদ করল, তার মূল্য কত। যখন একটি বয়স্ক গাছ কাটা হয়, ভাবুন গাছটি এত বছর ধরে পরিবেশে কতটা অক্সিজেনের জোগান দিয়েছে। তুলনা করুন, ওই পরিমাণ অক্সিজেন কিনতে হলে কত খরচ হত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে শহরের চৌড়হাস এ সড়ক বিভাগের নিজস্ব ফাঁকা জমিতে নতুন সড়ক ভবন নির্মানের প্রস্তাবনা রয়েছে। তথাপি ঐ স্থান বাদ দিয়ে কেন গাছ কেটে নতুন ভবন নির্মাণ করতে হবে সে বিষয়ে সড়ক বিভাগ কোন সদুত্তর দিতে পারেনি।
সচেতন নাগরিক মহল মনে করেন বিদ্যমান বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান এই গাছসমূহ না কেটে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচীর মাধ্যমে এই স্থানে আরো অধিক পরিমাণে গাছ লাগানো প্রয়োজন। তাতে এখানকার পাখিদের আবাসস্থল নিরাপদ হওয়ার পাশাপাশি উন্নত পরিবেশ বজায় থাকবে। জাতির পিতা আজীবন সবুজ সোনার বাংলা কে ভালোবেসেছেন। জাতির পিতার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য সমাজ গড়ে তুলতে গাছ লাগানো আমাদের নৈতিক ।
উপদেষ্টা মন্ডলীর সভাপতি: মো: হাসান আলী
প্রধান উপদেষ্টা: মোঃ ওবাইদুর রহমান
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: খালিদ সাইফুল
নির্বাহী সম্পাদক: রাশিদুল ইসলাম
নির্বাহী সম্পাদক: মিজানুর রহমান
বার্তা সম্পাদক: আব্দুল কাদের
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: লাল মোহাম্মদ সড়ক, হাটশ হরিপুর নদীরকুল, কুষ্টিয়া-৭০০০।
মোবাইল : ০১৮১৫-৭১৭০৩৪ । ইমেইল : khalidsyful@gmail.com ।
ই-পেপার কপি