ঢাকা শহরে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় চলতি বছর বিবাহবিচ্ছেদের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। অধিকাংশ বিবাহবিচ্ছেদের পেছনে পরকীয়া সম্পৃক্ততা রয়েছে। বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যার দিক থেকে শিক্ষিত নারী-পুরুষ এগিয়ে। সেখানে আবার বেশিভাগ নারী চাকরিজীবী এবং স্বাবলম্বী।ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত দুই সিটিতে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেছেন ৫ হাজার ৪৮৭ জন। এর মধ্যে ডিএনসিসিতে আবেদন ২ হাজার ৮২৫টি, ডিএসসিসিতে ২ হাজার ৬৬২টি। এই হিসেবে ডিএসসিসি ও ডিএনসিসিতে দিনে ৩৭টি তালাকের আবেদন পড়ছে। যা ঘণ্টায় এক দশমিক পাঁচেরও বেশি।ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্দিষ্ট আবেদন ফরমে বিচ্ছেদের কারণগুলোতে দেখানো হয়েছে, পারিবারিক অশান্তি, বিশ্বাসে আঘাতের কারণকে ঘিরেই বাড়ছে এ প্রবণতা। তবে মূল কারণ হিসেবে প্রযুক্তির উৎকর্ষের অপব্যবহারকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, প্রযুক্তির উৎকর্ষ মূলত দায়ী হলেও বিবাহবিচ্ছেদের আবেদনে বিষয়টি পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন বিচ্ছেদপ্রত্যাশীরা।
জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটির গুলশান ও বনানীর অভিজাত পরিবারের শিক্ষিত ও বিত্তবান নারী আর দক্ষিণের মোহাম্মদপুর ও কারওয়ানবাজারের কর্মজীবী নারীরা তুলনামূলক বেশি বিচ্ছেদে যেতে চাচ্ছেন।সিটি করপোরেশনে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদনে দেখা যায়, বিবাহবিচ্ছেদের বড় কারণ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ‘বনিবনা না হওয়া’।বিবাহবিচ্ছেদের আবেদনগুলো পর্যালোচনায় স্ত্রীর করা আবেদনে কারণগুলোর হল- স্বামীর সন্দেহবাতিক মনোভাব, পরনারীর সঙ্গে সম্পর্ক, যৌতুক, দেশের বাইরে গিয়ে আর ফিরে না আসা, মাদকাসক্তি, ফেসবুকে আসক্তি, পুরুষত্বহীনতা, ব্যক্তিত্বের সংঘাত, নৈতিকতাসহ বিভিন্ন কারণ।
অন্যদিকে স্বামীর করা আবেদনে কারণগুলো হল- স্বামীর অবাধ্য হওয়া, ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী না চলা, বদমেজাজ, সংসারের প্রতি উদাসীনতা, সন্তান না হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে স্ত্রীকে তালাক দিচ্ছেন স্বামী।রাজধানীতে স্বামী-স্ত্রীর বিবাহবিচ্ছেদের বিষয়ে রেইজ আইটি সলিউশন লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও আইসিটি বিশেষজ্ঞ কেএএম রাশেদুল মাজিদ বলেন, প্রতিটি বিষয়ে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিক রয়েছে। সেদিক থেকে তথ্যপ্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ায় মানুষের যেসব যোগাযোগ সহজ হয়েছে তেমনি অনেক সংসার ভাঙার কারণ হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তি দায়ী রয়েছে। কারণ স্বামী-স্ত্রী একে-অপরের অনুপস্থিতিতে অন্যদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। এই বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে একটি পরিবারে বিচ্ছেদ কারণ হয়ে দাঁড়ায়।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এমএ সালাম বলেন, ডিজিটাল যুগে তথ্যপ্রযুক্তি মানুষের কাছে সহজলভ্য হয়েছে। অনেকে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপরাধে যেমন জড়িয়ে পড়ছে তেমনি স্বামী-স্ত্রী অন্য নারী-পুরুষের সঙ্গে পরকীয়া জড়িয়ে সংসার ভাঙছে।