ভয়টা ছিল সুনীল ছেত্রীকে ঘিরে। ম্যাচের ৭৯ মিনিট পর্যন্ত ছেত্রী সেভাবে সুযোগও পাননি না গোল করার। কর্নার থেকে বল পেয়ে কখনো হেড করেছেন বাইরে। কখনো বক্সে ঢুকে শট নেওয়ার আগে বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা ক্লিয়ার করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আরেকবার বাংলাদেশের হৃদয় ভাঙলেন সেই সুনীল ছেত্রী।
কাতারের দোহায় বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছে ভারতের এই অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ডের কাছেই। সুনীল ছেত্রীর জোড়া গোলে হেরে গেছে বাংলাদেশ। এই দুই গোলে জাতীয় দলের হয়ে ৭৪টি গোল হয়ে গেল ছেত্রীর। জাতীয় দলের জার্সিতে গোল করার ক্ষেত্রে লিওনেল মেসিকে আবারও ছাপিয়ে গেলেন।ভারতের যুবভারতীতে জিততে না পারার আফসোস ছিল বাংলাদেশের। সেই আফসোস মেটানোর আশায় আজ আবারও ভারতের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিলেন জামাল ভূঁইয়ারা। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ফুটবলের যে পার্থক্য সেটা আরেকবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এই ম্যাচ।ম্যাচের ৭৯ মিনিটে বিপিন সিংয়ের বদলে মাঠে নামা মোহাম্মদ আশিক কুরুনিয়ানের লম্বা এক ক্রস থেকে দারুণ হেডে ছেত্রী বল ঢোকালেন জালে। তপু বর্মণ দৌড়ে এসে ক্লিয়ার করতে পারেননি, যা সর্বনাশ হওয়ার হয়ে গেল। একেবারে ঠান্ডা মাথায় গোল দিলেন ছেত্রী।এরপর যোগ হওয়া সময়ে আরেকবার ‘ছেত্রী শেল’ বিঁধল বাংলাদেশের ফুটবলারদের বুকে।
স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে ভারতীয় পতাকা হাতে দর্শকেরা উল্লাসে মেতে রইলেন। আর হাতেগোনা কয়েকজন বাংলাদেশি দর্শকেরা কান্নায় মুখ লুকালেন।প্রথমার্ধে গোলশূন্য ভারতের কোচ ইগর স্তিমাচ দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই দুজনকে বদলি করান। মিডফিল্ডার উদান্ত সিংয়ে বদলি নামান ইয়াসির মোহাম্মদকে। আর সেই আশিকের সঙ্গে যুগলবন্দীতে প্রথম উল্লাসে মাতেন ছেত্রী।দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে সাফল্যের দিক দিয়ে ভারতের ধারে কাছে কেউ নেই। সেই ভারতের বিপক্ষেই সর্বশেষ তিন ম্যাচে হারেনি বাংলাদেশ। কিন্তু সেই ধারাটা ধরে রাখতে পারেনি।বাংলাদেশের চেয়ে র্যাঙ্কিংয়ে ৭৯ ধাপ এগিয়ে থাকা ভারত কিন্তু শুরু থেকেই চেষ্টা করেছে আক্রমণে ওঠার। কিন্তু ভারতের আক্রমণ বেশ ভালোভাবেই সামলেছেন কখনো তারিক কাজী, কখনো তপু বর্মণেরা।
বিশেষ করে উদান্ত সিং বারবার আক্রমণে উঠেছেন বাম প্রান্ত দিয়ে। সুনীল ছেত্রীও একবার চেষ্টা করেছেন বক্সে ঢোকার। কিন্তু হতাশই হয়েছেন সুনীল। ম্যাচের দুই মিনিটের মাথায় ব্রেন্ডন ফার্নান্দেজকে ফাউল করে হলুদ কার্ড খেয়েছেন ফরোয়ার্ড রাকিব হোসেন। ৪ মিনিটের মাথায় মতিন মিয়া একবার বক্সে ঢুকেছিলেন। কিন্তু বল বাড়ানোর মতো কোনো সতীর্থকেই পাননি বসুন্ধরা কিংসের এই ফরোয়ার্ড। ম্যাচের ৯ মিনিটেও একটা সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। রহমতের থ্রো-ইন থেকে বক্সের মধ্যে দাঁড়ানো রাকিব বলে পা লাগাতেই পারেনি।বাংলাদেশ কোচ জেমি ডের কৌশলই ছিল রক্ষণ সামলে আক্রমণে ওঠা। কিন্তু রক্ষণ সামলাতেই বেশির ভাগ সময় ব্যস্ত থাকতে হলো বাংলাদেশের ফুটবলারদের। ম্যাচের ৩১ মিনিট পর্যন্ত ৭৫ ভাগ বল পজিশনে ভারত। শেষ পর্যন্ত সেই পরিসংখ্যান ছিল ভারতের দিকেই বেশি। ৭৩ ভাগ বল দখল ছিল ভারতীয়দের পায়ে। আর ২৭ ভাগ বাংলাদেশের।ম্যাচের ৩৫ মিনিটে নিশ্চিত গোল পেতে পারত ভারত। কিন্তু কী দুর্দান্তভাবেই না গোললাইন সেভ করলেন রিয়াদুল হাসান! কর্নার থেকে উড়ে আসা চিঙ্গলেন সানা সিংয়ের বলটা রিয়াদুল ঊরু দিয়ে ঠেকিয়েছেন।
এর আগে ১৫ মিনিটে মানভির সিং ভয়ংকরভাবে বক্সে ঢুকেছিলেন। ওই সময় জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে আসেন গোলরক্ষক আনিসুর রহমান। মাঝমাঠে মাসুক মিয়া জনির ওপর ভরসা রাখতে পারছিলেন না জেমি ডে। সেই কারণেই কিনা ৩৪ মিনিটে মাসুক মিয়াকে তুলে নিয়ে ইব্রাহিমকে নামান কোচ।প্রথমার্ধের শেষ পাঁচ মিনিট বেশ কয়েকবার আক্রমণে ওঠেন ভারতীয় ফরোয়ার্ডরা। কিন্তু অ্যাটাকিং থার্ডে গিয়ে খুব বেশি সফল হতে পারেনি কেউ। ম্যাচে যতই সময় গড়িয়েছে যেন চাপে পড়তে দেখা গেছে ভারতীয় কোচ ইগোর স্তিমাচকে। আর শেষ দশ মিনিটে ছেত্রী-জাদুতে সব চাপ কর্পূরের মতো উবে গেল ক্রোয়াট এই কোচের।বাংলাদেশ দলকে সারাক্ষণ আক্রমণ সামলাতেই ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। এরপরও দ্বিতীয়ার্ধে রাকিবের বদলি মেহেদি হাসানকে নামান কোচ জেমি ডে। আর মতিন মিয়াকে তুলে নিয়ে সুমন রেজার মাঠে নামান। কিন্তু ফরোয়ার্ড লাইনে এই বদলেও ভাগ্য বদলায়নি বাংলাদেশের।৭ ম্যাচে ২ ড্র ও ৫ হারে ২ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার সবার নিচে বাংলাদেশ। সমান ম্যাচে ১ জয়, ৩ ড্র ও ৩ হারে ৬ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচ দলের মধ্যে তৃতীয় স্থানে উঠে এল ভারত। ৭ ম্যাচে ৬ জয় ও ১ ড্রয়ে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে কাতার।
উপদেষ্টা মন্ডলীর সভাপতি: মো: হাসান আলী
প্রধান উপদেষ্টা: মোঃ ওবাইদুর রহমান
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: খালিদ সাইফুল
নির্বাহী সম্পাদক: রাশিদুল ইসলাম
নির্বাহী সম্পাদক: মিজানুর রহমান
বার্তা সম্পাদক: আব্দুল কাদের
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: লাল মোহাম্মদ সড়ক, হাটশ হরিপুর নদীরকুল, কুষ্টিয়া-৭০০০।
মোবাইল : ০১৮১৫-৭১৭০৩৪ । ইমেইল : khalidsyful@gmail.com ।
ই-পেপার কপি