কুষ্টিয়ার আবাসিক এলাকায় স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে জর্দা কারখান
ফ্যাক্টরি আছে কিন্তু নেই কোন সাইন বোর্ড বা ফলক । নিজের বসত বাড়ীতেই রমেশ ঠাকুর গড়ে তুলেছে জর্দা কারখানা । এই ভাবেই জর্দা তৈরির কার্যক্রম চলছে গত ১৪-১৫ বছর । কর্তৃপক্ষের নিরব ভূমিকা নিয়ে নানান গুঞ্জন চলছে একালায় ।
কুষ্টিয়া শহরের ভোলানাথ পাল লেনের ঘনবসতি পূর্ণ আবাসিক এলাকায় স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে অবাধে চলছে রমেশ ঠাকুরের জর্দা কারখানা। এই কারখানার কারণে অ্যাজমা, এলার্জি, কিডনি রোগ সহ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ ছড়িয়ে পড়েছে এলাকাজুড়ে।
এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ এই কারখানার কারণে এলাকার জনগনের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে ও বেশ কিছু ঝুঁকি নিয়ে চলছে এই জর্দ্দা কারখানা।
এই বিষয়ের প্রেক্ষিতে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে, কারখানা কর্তৃপক্ষ সংবাদ সংগ্রহকালে কারখানায় প্রবেশ করতে না দিয়ে রাস্তায় ঘণ্টাব্যাপী সাংবাদিক টিমকে দাড় করিয়ে রাখেন এবং মডেল থানা পুলিশকে ফোন করে ডেকে নিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিষয়টি অবগত হয়ে সাংবাদিক টিমকে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে বলেন। এরপর অনেক অনুরোধের পরও কারখানা কর্তৃপক্ষ মূল কারখানায় প্রবেশ করতে দেয়নি। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মনে সন্দেহের অন্ত নেই। কি ছিলো সেই কারখানায়?? এখন সবার প্রশ্ন একটাই।
প্রতিবেশী বিমল দত্ত বলেন, আমার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাচ্ছে। এক গন্ধের খানায় আমি থাকি। ডাক্তার বলছে আপনি দূরে চলে যান। কোথায় যাব আমি এখন?? এখানে বিভিন্ন ধরনের জর্দা তৈরি হচ্ছে। আমরা দেখতে পাই না। বহুবার কমপ্লেন দিয়েও কাজ হচ্ছে না। অসুখের ঠেলায় আমি পঙ্গু হয়ে গেলাম।
প্রতিবেশী স্বপন দত্ত বলেন, এখানে ভুষি রং করে সেন্ট দিয়ে মিষ্টি তৈরি হচ্ছে। ধনে ভাজে রং দিয়ে সেন্ট দিয়ে জর্দা তৈরি হচ্ছে। তামাক দিয়ে শব্দ তৈরি হচ্ছে। এখানে সে ২০/৩০ রকমের জর্দা তৈরী করছে। ঘরের মধ্যে সে সমস্ত মাল বোঝাই গেলেই দেখতে পাবেন। এখানে অল্প বয়সী শিশুরা ও মহিলারা মিলে ১৫/২০ জন কাজ করে থাকে। এই কারখানায় কেউ বেশি দিন কাজ করতে পারে না। ১/২ বছর পর পরই সব দৌড় মারে। তারপর দেখা যায় কারোর পেটে ব্যথা, আবার অনেকের হাঁপানি হয়ে গেছে। এমন অসুস্থ লোক বহুৎ আছে। পৌরসভা ও পৌরসভার মেম্বারকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। আমাদের বাড়ির পাশে যখন বাড়ি কিনে আরেকটি ফ্যাক্টরি করে তখন আমরা তাকে ফ্যাক্টরি করতে নিষেধ করেছিলাম। তাকে বলেছিলাম তুমি বসবাস করো। এইখানে ফ্যাক্টরি করলে আমরা বসবাস করতে পারবোনা।
রমেশ ঠাকুর রাগান্বিত হয়ে প্রতিবেদকের উপর ধেয়ে এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বলেন, আপনার যা ভালো লাগে আপনি করেন আর আমার যা ভালো লাগে আমি করবোনে। আপনার কি করতে পারি আর আপনি আমার কি করতে পারেন দেখবোনে।
পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপ পরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান বলেন, ঠাকুর জর্দা ফ্যাক্টরির নামে এরকম কোন জর্দা ফ্যাক্টরির ছাড়পত্র আছে কিনা সেই মুহূর্তে তিনি বলতে পারছিলেন না। তবে তার মনে হয় ছাড়পত্র নাই, এই ফ্যাক্টরি সম্পর্কে তিনি অবগতও নন। তিনি প্রতিবেদককে উক্ত ফ্যাক্টরির এর ঠিকানা এসএমএস করতে বলেন। অফিস খুললে অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন মর্মে জানান।
কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডাঃ এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এই বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্টস আমাকে দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ তাপস কুমার সরকার জানান, আবাসিক এরিয়াতে জর্দা কারখানা থাকলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা, কিডনি রোগ সহ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ হয় এবং হতে পারে।
এদিকে বিএমএ কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডাঃ আমিনুল হক রতন জানান, আবাসিক এলাকায় ফ্যাক্টরি গড়ে ওঠার কারনে অ্যাজমা, এলার্জি, কিডনি রোগ সহ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ হতে পারে। তাছাড়া পূর্ব থেকে যাদের এ ধরণের সমস্যা আছে তাদের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের জন্যও এটি বেশ ক্ষতিকর। এ ধরনের কারখানাগুলো বিভিন্ন রোগের উৎস হিসেবে বিবেচিত। তাই আবাসিক এরিয়াতে এধরনের কারখানাগুলো না হওয়ায় ভালো।