অঙ্গীকার ডেস্কঃ বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ (পর্ব-১):- জিয়াউর রহমান দেশের সকল ভাষাভাষী, ধর্মবর্ণের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ, দেশের সীমানার সঠিক চিহ্নিতকরণ, জাতি হিসেবে নিজেদের স্বতন্ত্রতা রক্ষার উদ্দেশ্যে বিশেষ করে জাতিসত্বার বুনিয়াদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ দর্শনের সূচনা করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের ভূখন্ডে আমরা বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠির পাশাপাশি অন্য ভাষাভাষী ও কৃষ্টির জনগণও বসবাস করে। যেমন গারো, খাসিয়া, চাকমাসহ আরো অনেক উপজাতি (যারা মঙ্গলিয়ান নরগোষ্ঠি বংশধর) সেই সাথে অনেক অবাঙ্গালী ও এদেশের নাগরিক। অতএব আমরা যদি আমাদের নাগরিক সত্তার পরিচয় বাঙ্গালী দর্শনের উপরে ভিত্তি করে নাগরিকত্বের পরিচয় করলে অন্যান্য ভাষা ও কৃষ্টির জনগণ নিজেদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে মনে করে, তাদের মধ্যে যে হতাশা ও আক্রোশের জন্ম হবে যা জাতীয় ঐক্য গঠনের প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। প্রমাণ স্বরুপ পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতির মধ্যে যে বিচ্ছিন্নবাদী আন্দোলন চলছে, সমাজ বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী চিন্তা চেতনা এর মুল কারণ। যে কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি, রাষ্ট্রীয় শক্তির বিকাশ নির্ভর করে, সেই সমাজের সকল ভাষাভাষী, ধর্মীয় গোষ্ঠীসহ সকল শ্রেণীর মানুষের ঐক্য ও বন্ধনের উপর। জাতিসত্তার আংশিক উপাদানের উপর ভিত্তি করে যদি কোন দেশে জাতীয়তা গড়ে উঠে তবে সেই দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ে। যেমনটি দেখা দিয়েছিল জার্মানীর হিটলারের রক্তের উপর ভিত্তি করে জাতীয় চেতনা। যার ফলে দুনিয়া কাঁপানো প্রলয়ংকারী দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল, দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণের শ্রেষ্ঠত্বের চেতনা শুধু নিজের জাতির জন্যই নয় বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছিল। অনুরূপভাবে ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ অনেক সময় উগ্রতার গোড়ামী রূপ ধারণ করে অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের স্বাধীনতার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। ভারতের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমাদের দেশেও মাঝে মাঝে এর কিছু প্রভাব আমরা দেখতে পাই। অতএব আমাদের দেশে বাংলা ভাষাভিত্তিক কিংবা জাতীয়তাবাদের আংশিক উপাদানের উপর ভিত্তি করে জাতীয়তা গড়ে তোলা হয়, তাহলে দেশের বিভিন্ন ভাষাভাষি, ধর্ম ও অন্যান্য নরগোষ্ঠি মানুষের মধ্যে মৈত্রী গড়ে তোলা সম্ভব নয়। অপরদিকে সকল ভাষাভাষী, উপজাতীয় সম্প্রদায়, সকল ধর্মীয় গোষ্ঠীর মানুষ এক বা অধিক হোক না কেন তাদের জাতীয় মানদন্ড হবে এক। তাদের জাতিসত্তা হবে বাংলাদেশী তাহলে এই ধরনের ভৌগলিক বা উদারনৈত্তিক জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করেই বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য, বন্ধন গড়ে তোলা সম্ভব। এর ফলে দেশের সকল ভাষাভাষী ও সম্প্রদায়ের লোক এক বা একাধিক হোক না কেন, নিজেদেরকে একই জাতিসত্তা অর্থাৎ বাংলাদেশী হিসেবে নিজেদেরকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হবে। এখানে একটি বিষয় বিশেষ ভাবে স্মরণীয়, ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় এই উপমহাদেশের দু’টি প্রদেশ বাংলা এবং পাঞ্জাব ভাগ করে, এই উভয় প্রদেশের একাংশ পাকিস্তান এবং অপর অংশ ভারতের সাথে সংযুক্ত করা হয়। এই বিভক্তির ফলে পাকিস্তানী বা ভারতের কোন পাঞ্জাবী যদি দেশের বাইরে যায়, তাহলে সেই পাঞ্জাবী নিজেকে পাঞ্জাবী না বলে নাগরিকতার পরিচয় তুলে ধরতে, পাকিস্তানী বা পাঞ্জাবী বলে পরিচয় দেন। আর যদি পাঞ্জাবী বলেন তবে তার জাতীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, সে কোন দেশের নাগরিক, পাকিস্তান না ভারতের। কারণ উভয় দেশে পাঞ্জাবীদের অবস্থান। বাংলা প্রদেশকে ভাগ করে এক অংশ ভারতকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অপর অংশ পাকিস্তানে সাথে যুক্ত হয়ে পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পরবর্তী সময় ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে এই অংশটি পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বাংলাদেশের কোন নাগরিক বহির্বিশ্বে যদি নিজেকে বাঙ্গালী বলে পরিচয় দেয়, তবে সে কিভাবে চিহ্নিত হবে সে বাংলাদেশের না ভারতের নাগরিক? কারণ বাংলার অপরাংশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত। অপরদিকে আমরা বাংলাদেশের নাগরিকরা যদি বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিই তবে স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত হব। আমরা যদি আমাদের জাতিসত্তা বাঙ্গালী বলে চিহ্নিত করি, এপার বাংলা ওপার বাংলার মধ্যে যে আন্তর্জাতিক সীমানা আছে আক্ষরিক এবং রাজনৈতিক অর্থে তার কোন মূল্য থাকে না। অপরদিকে আমাদের দেশের জনগণ বাংলাদেশী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তাহলে দুই বাংলার মধ্যে যে আন্তর্জাতিক সীমানা আছে, তার মাধ্যমে উভয় সীমানার মধ্যে যে জাতিগত পার্থক্য আছে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আন্তর্জাতিক, কুটনৈতিক, কিংবা বিশ্বের যে কোন সংস্থা বাঙ্গলীর পরিবর্তে বাংলাদেশী জাতিসত্তা পরিচয় ক্ষেত্রে অধিক গ্রহণযোগ্য ও নিজস্ব জাতিসত্তার চিহ্নিত করণের ক্ষেত্রে যুক্তিসংগত, বাস্ত বসস্মত। চলমান
সাবেক সংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন
স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক,
বিএনপি, সাধারণ সম্পাদক,
কুষ্টিয়া জেলা বিএনপি।